জসিম উদ্দিন মনছুরি
গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে দেশের সকল নাগরিক সমান অধিকার ভোগ করবে। কোন ভেদাভেদ থাকবে না। সমনীতির ভিত্তিতে সমান অধিকার নিশ্চিতকরণ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। কল্যাণ রাষ্ট্রের মূল চালিকা শক্তি হচ্ছে ন্যায্যতা, সুষম বন্টন, বাক স্বাধীনতা। স্বাধীন সার্বভৌম দেশ মানে মুক্ত পাখির মত নিজের মতকে প্রতিষ্ঠা করার সুযোগ থাকা। বাক স্বাধীনতায় কেউ হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। কেউ কারো উপর অন্যায় ভাবে অন্য মতকে চাপিয়ে দিতে পারবে না। নিজের মত অবাধ প্রতিষ্ঠা করার সুযোগ সুবিধা ভোগ করা। এমন কোন আইন হবে না যে আইনে কেউ সুবিধা ভোগ করবে কেউ অসুবিধায় পড়বে। অর্থাৎ আইন হবে সবার জন্য সমান। অপরাধ যেই করুক না কেনো তার যথাযথ শাস্তি নিশ্চিতকরণ। অপরাধ দমনের জন্য স্বাধীন কমিশন থাকবে। যে কমিশনের কাজ হবে অপরাধী যেই হোক না কেন তাকে আইনের আওতায় এনে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা। আইনের প্রয়োগ হবে যথাযথ। অর্থাৎ সবাই সমান সুযোগ সুবিধা ভোগ করবে। স্বাধীনতা সার্বভৌম মানে বাক স্বাধীনতা, সুষম বন্টন, ন্যায়নীতির ভিত্তি একই ধরনের হওয়া। দেশের জনগণ দীর্ঘদিন ধরে খাঁচায় বন্দি পাখির মত আবদ্ধ ছিলো। অন্যায় ও বৈষম্য ছিলো নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। নিজের মতের বিরুদ্ধে গেলে তাকে কঠোর হস্তে দমন ছিলো চিরাচরিত নিয়ম-নীতির আওতাভুক্ত। নিজের মতকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য জনগণের কন্ঠকে রুদ্ধ করা হয়েছে। স্বাধীনভাবে কেউ মতামত প্রকাশ করতে পারেনি। মতামত প্রকাশ করতে গেলেই তাকে বন্দী করে রাখা হয়েছে জেলের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে। বৈষম্য ছিলো সর্বত্র বিরাজমান। নিজ দলের বাইরে কাউকে চাকরি কিংবা অংশ গ্রহণ মূলক কোনো কাজে জড়াবার সুযোগ দেয়া হতো না। যত বড় অপরাধ করুক না কেন নিজ দলের হলে সাত খুন যেন মাপ। ন্যায়নীতি না থাকায় অহরহ দুর্নীতি হয়েছে। যার ফলশ্রুতিতে অনেকেই কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছে। কালো টাকার সাদা করার সুযোগ থাকায় দুর্নীতি করে আয় করা টাকা হালাল হয়ে গেছে দেদারসে। একটি সুশৃংখল রাষ্ট্রের মূল ভিত্তি হচ্ছে বৈষম্যহীন শাসন ব্যবস্থা। সরকারে যেই থাকুক না কেন তিনি জনগণের রাষ্ট্রের শাসক। একথা তাকে রাষ্ট্র পরিচালনায় সব সময় স্মরণ রাখতে হবে। তার মতের বিরুদ্ধের লোক কিবা নিজের পক্ষের মধ্যে যেন বৈষম্য না হয় ,যদি বৈষম্য হয় তাহলে কখনো কল্যাণ রাষ্ট্র হতে পারে না। রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব সফলভাবে রূপায়িত হয় না। বৈষম্য নিরসন করতে হলে সর্বপ্রথম প্রয়োজন ন্যায়-নীতি প্রতিষ্ঠা করা। সম অধিকার নিশ্চিতকরণ। সুষম বন্টন ব্যবস্থা। আইনের যথাযথ প্রয়োগ। অন্যায় ভাবে কারো উপর হস্তক্ষেপ না করা। বাকস্বাধীনতা প্রকাশে অবাধ সুযোগ করে দেয়া। নিজের মতকে অন্যের উপর চাপিয়ে না দেয়া। সংবিধান সমুন্নত রাখে জনগণের কল্যাণে রাষ্ট্র পরিচালনা করা। সব ক্ষেত্রে যদি বৈষম্য নিরসন করা যায় তাহলেই কেবল কল্যাণ রাষ্ট্র গড়ে তোলা সম্ভব। কল্যান রাষ্ট্র গঠনের জন্য সরকারের যেমন দায়বদ্ধতা রয়েছে তদ্রæপ জনগণেরও দায়বদ্ধতা কম নয়। সরকার যদি নিজের মতকে জনগণের উপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে তাহলে সরকারের কঠুর সমালোচনা করা। বুদ্ধিজীবীদের বদ্ধ খাঁচায় বন্দী না রেখে তাদের বুদ্ধি ও প্রতিভার বিকাশ ঘটাতে সুযোগ করে দেওয়া। সব ক্ষেত্রে বৈষম্য নিরসন করতে পারলে তাহলেই কেবল সুখী সমৃদ্ধশালী একটি দেশ গঠন করা সম্ভব হবে বলে জনগণের প্রত্যাশা।
লেখক : প্রাবন্ধিক