বৈষম্যহীন দেশ চাইলে একে অপরের হাত ধরে এগিয়ে যেতে হবে

5

নিজস্ব প্রতিবেদক

অন্তর্বর্তী সরকারের ধর্ম উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেছেন, আমাদের প্রিয় মাতৃভ‚মি বাংলাদেশ সাজানো বাগানের মতো। বাগানের ভেতরে যেমন বর্ণিল পুষ্পরাজি থাকে তেমনি আমাদের বাংলাদেশে হিন্দু, বৌদ্ধ, মুসলমান, খ্রিস্টান, নৃতাত্তি¡ক জাতিগোষ্ঠী আছে। এটাকে আমাদের পরিচর্যা করতে হবে। লালন করতে হবে। আর নাহলে বাগানে ফুল ফুটবে না। বাগানের গাছ মারা যাবে। এই ঐতিহ্যপূর্ণ পারস্পরিক সৌহার্দ্য আমাদের লালন করতে হবে।
সা¤প্রদায়িক হামলাকারীদের কোনও ধর্ম নেই উল্লেখ করে আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেন, কিছু দুর্বৃত্ত সব ধর্মের লোকদের মধ্যে আছে। এগুলোর প্রকৃত কোনও ধর্ম নেই। এরা ক্রিমিনাল। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার জন্য উপাসনালয়ে হামলা চালায়। এদের বিরুদ্ধে আমাদের প্রত্যেককে সোচ্চার হতে হবে। তারা আমাদের সম্প্রীতির লালিত ঐতিহ্যকে যাতে ধ্বংস করতে না পারে। তিনি বলেন, আমরা যদি আগামী দিনের সুন্দর বাংলাদেশ চাই, বৈষম্যহীন বাংলাদেশ চাই তাহলে আমাদের একে অপরের হাত ধরে এগিয়ে যেতে হবে। বিভেদ আমাদের ধ্বংস করে দেবে, সংঘাত আমাদেরকে পেছনে ঠেলে দেবে।নগরীর কাজীর দেউড়িতে ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে গতকাল সোমবার চট্টগ্রাম বৌদ্ধ সমিতি আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। বৌদ্ধদের সর্বোচ্চ ধর্মীয়গুরু ত্রয়োদশ সংঘরাজ ড. জ্ঞানশ্রী মহাস্থবিরের শততম জন্মদিন উপলক্ষে বাংলাদেশ বৌদ্ধ সমিতি অষ্টপরিষ্কার সংঘদান ও আলোচনা সভার আয়োজন করে। উপসংঘরাজ শাসনপ্রিয় মহাস্থবিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন একুশে পদকপ্রাপ্ত শিক্ষাবিদ ও বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা প্রফেসর ড. সুকোমল বড়ুয়া। উদ্বোধন করেন প্রজ্ঞাসারথী প্রজ্ঞানন্দ মহাস্থবির। প্রধান জ্ঞাতি ছিলেন উপসংঘরাজ সদ্ধর্মবারিধি প্রিয়দর্শী মহাস্থবির। প্রধান সদ্ধর্মদেশক ছিলেন বিশ্বনাগরিক ড. ধর্মকীর্তি মহাস্থবির। প্রফেসর তুষার কান্তি বড়ুয়া ও অধ্যাপিকা ববি বড়ুয়ার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন ইউএসটিসির সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ডা. প্রভাত চন্দ্র বড়ুয়া, বাংলাদেশ বৌদ্ধ সমিতির চেয়ারম্যান অজিত রঞ্জন বড়ুয়া, সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান লায়ন আদর্শ কুমার বড়ুয়া, উদযাপন পরিষদের আহব্বায়ক সত্যপ্রিয় বড়ুয়া প্রমুখ। বিশেষ জ্ঞাতি ছিলেন সদ্ধর্মজ্যোতিকাধ্বজ বসুমিত্র মহাস্থবির, প্রজ্ঞাজ্যোতি মহাস্থবির, প্রফেসর ড. জ্ঞানরত্ন মহাস্থবির ও ভিক্ষু সুনন্দপ্রিয়। সদ্ধর্মদেশক ছিলেন বিনয়পাল মহাস্থবির, শীলরক্ষিত মহাস্থবির, শাসনপ্রিয় মহাস্থবির, শাসনানন্দ মহাস্থবির, শাসনরক্ষিত মহাস্থবির, শাসনশ্রী মহাস্থবির, এম বোধিমিত্র মহাস্থবির, রতনপ্রিয় মহাস্থবির, বোধিরত্ন মহাস্থবির, তিলোকাবংশ মহাস্থবির, প্রিয়ানন্দ মহাস্থবির, পরমানন্দ মহাস্থবির, এইচ শীলজ্যোতি মহাস্থবির ও রতনানন্দ স্থবির।
ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেছেন, প্রয়োজনীয় সংস্কারের মাধ্যমে ভোটার তালিকা হালনাগাদ ও নির্বাচন কমিশনকে পুনর্গঠন করে নির্বাচন আয়োজন করা হবে। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে জনগণ যাতে তার পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারে সেই ব্যবস্থা অন্তর্বর্তী সরকার নিশ্চিত করবে।
তিনি বলেন, জনগণ যাতে তার পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারে, তার ব্যবস্থা আমরা করবো। এতদিন ভোটের কালচারটা আমাদের সমাজ থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। আমরা ভোটার তালিকা হালনাগাদ ও নির্বাচন কমিশনকে সাজিয়ে একটা সুষ্ঠু সুন্দর অবাধ নির্বাচন উপহার দেবো। নির্বাচনে আপনারা আপনাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেবেন। যারা জনগণের ম্যান্ডেট পাবে আমরা তাদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে বিদায় নেবো। আমরা দেশ শাসন করতে আসি নাই, আগামী দিনে যারা রাষ্ট্র পরিচালনা করবে তাদের জন্য পথ খুলে দিতে এসেছি। আপনাদের সহযোগিতা দিতে চাই, আপনারা আমাদের হাতকে শক্তিশালী করুন।
ভিসা না পাওয়ার কারণে ভারতের গয়ায় তীর্থযাত্রায় যেতে না পারা প্রসঙ্গে ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, গত রবিবার বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে ভারত, নেপালের হাইকমিশনার দেখা করেছেন। তাদের আমি মন্ত্রণালয়ে আমন্ত্রণ জানিয়েছি। ভিসা দেওয়া না দেওয়া ভারতের পলিসিগত ব্যাপার। তবে ভারতের হাইকমিশনারকে অনুরোধ করবো অন্তত পক্ষে যে সমস্ত বুদ্ধিস্ট তীর্থযাত্রায় যেতে চায় তাদের জন্য যেন স্পেশাল ভিসা ব্যবস্থা করেন।
অনুষ্ঠানে বৌদ্ধ সমিতির নেতারা শুভ প্রবারণা পূর্ণিমা উপলক্ষে রাষ্ট্রীয় ছুটির দাবি করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান উপদেষ্টার কাছে সুপারিশের আশ্বাস দিয়ে ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, আপনারা শুভ প্রবারণা পূর্ণিমায় ছুটির জন্য বলেছেন। এটা আমি উপদেষ্টা হিসেবে পারি না। এটা রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ব্যক্তি প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সিদ্ধান্ত লাগবে। আপনাদের প্রতিনিধি দল প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাত করলে তখন আপনাদের হয়ে আমি সুপারিশ করবো।