বৈধপথে অর্থ পাঠালে দেশের লাভ, নিজেরও সম্মান

1

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা প্রবাসী বাংলাদেশিরা আজ দেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান চালিকা শক্তি। তাদের পাঠানো রেমিট্যান্সে সচল থাকে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, গতি পায় অর্থনৈতিক কর্মকান্ড। সেই সব রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের মধ্যে একজন হলেন পোল্যান্ড প্রবাসী মো. ইমরান হোসেন। রেমিট্যান্স পাঠিয়ে তিনি সরকারি স্বীকৃতি-কমার্শিয়াল ইমপরটেন্ট পারসন (সিআইপি) মনোনীত হয়েছেন।
ইমরান হোসেন জানালেন, বর্তমানে ইউরোপের দেশ পোল্যান্ডে বাংলাদেশিদের কাজের সুযোগ দিন দিন বাড়ছে। সরকারি চ্যানেল থেকে যথাযথভাবে উদ্যোগ এবং জনশক্তি পাঠানোর চেষ্টা চালালে পোল্যান্ড হয়ে উঠতে পারে বাংলাদেশি রেমিট্যান্স আহরণের অন্যতম ক্ষেত্র।
চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির এই কৃতী সন্তান, পোল্যান্ডের ব্যবসায়ী মো. ইমরান হোসে দেশে বেড়াতে এসেছেন। তিনি দেশ ও মানুষ এবং প্রবাসের নানা বিষয় নিয়ে তার স্বপ্নের কথা বলেছেন পূর্বদেশকে। একই সাথে তিনি বলেছেন, সরকারের কাছ থেকে প্রবাসীরা প্রাপ্য মর্যাদা ও সম্মান আশা করে।
রেমিট্যান্স পাঠিয়ে সিআইপি মনোনীত হওয়া প্রসঙ্গে ইমরান হোসেন বলেন, আল্লাহর অশেষ রহমত ও আপনজনদের দোয়ায় আমি আজ এই সম্মানে ভূষিত হয়েছি। এটি কেবল আমার ব্যক্তিগত সাফল্য নয় বরং দেশের জন্য আমার দায়বদ্ধতার স্বীকৃতি। বৈধপথে দেশে রেমিট্যান্স পাঠিয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পেরেছি-এটাই সবচেয়ে বড় পাওয়া। সরকার আমার এ অবদানের মূল্যায়ন করে সিআইপি হিসেবে গেজেট প্রকাশ করেছে, এটা নিঃসন্দেহে গর্বের।
ইমরান হোসেন তার পরিচিতি ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন, আমি চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার সোবহান মোল্লা বাড়ির সন্তান। বাবা মরহুম হাছি মিয়া ছিলেন একজন সৎ, পরিশ্রমী মানুষ, আর মা সালমা বেগম সব সময় আমাদের সঠিক পথে চলতে উৎসাহ দিতেন। ছোটবেলা থেকেই পরিবারে নীতিনিষ্ঠা, পরিশ্রম আর মানুষের উপকারে আসার শিক্ষাই পেয়েছি। এই শিক্ষাগুলোই প্রবাসজীবনে আমাকে টিকিয়ে রেখেছে।
পোল্যান্ডে যাওয়ার সিদ্ধান্ত কীভাবে নিয়েছিলেন জানতে চাইলে ইমরান হোসেন বলেন, তখন বাংলাদেশে চাকরির সুযোগ সীমিত ছিল। নিজের ভবিষ্যৎ ও পরিবারের উন্নতির জন্য বিদেশ যাওয়ার স্বপ্ন ছিল ছোটবেলা থেকেই। অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে আমি ২০১০ সালের দিকে পোল্যান্ডে যাই। শুরুটা ছিল কঠিন। ভাষার সমস্যা, সংস্কৃতির পার্থক্য, অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ-সব মিলিয়ে পরিস্থিতি ছিল কঠিন কিন্তু আমি হাল ছাড়িনি। সময়ের সাথে নিজেকে তৈরি করেছি।
প্রবাসে ব্যবসার শুরুটা কিভাবে হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রথমে একটি চাকরি করতাম। সেখান থেকেই ব্যবসা সম্পর্কে ধারণা পাই। কিছুদিন পর সঞ্চিত অর্থ দিয়ে নিজের একটি ছোট রেস্টুরেন্ট চালু করি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ব্যবসা বড় হয়। বর্তমানে পোল্যান্ডে আমার কয়েকটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে-রেস্টুরেন্ট, আমদানি-রপ্তানি এবং পরিষেবা খাত ভিত্তিক। একই ধরনের ব্যবসা এখন অনেক বাঙালি করছেন, সেজনই বলছি পোল্যান্ডে বাংলাদেশিদের জন্য দিনদিন সুযোগ বাড়ছে।
আপনি বৈধপথে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স পাঠিয়ে সিআইপি নির্বাচিত হয়েছেন এই অনুপ্রেরণাটি কিভাবে এসেছিল জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রথম থেকেই আমার নীতিগত অবস্থান ছিল স্বচ্ছতা ও আইনি পথ অবলম্বন করা। আমি মনে করি, প্রবাসীরা বৈধপথে অর্থ পাঠালে দেশের জন্য যেমন সুফল বয়ে আনে, তেমনি নিজেরাও সম্মান পান। অবৈধ পথে টাকা পাঠালে তা যেমন দেশের অর্থনীতির ক্ষতি করে, তেমনি প্রবাসীদের ভাবমূর্তিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আমি চাই প্রবাসীদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন হোক।
আশার কথা হল, বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠানোর ক্যাটাগরিতে অনেকেই চট্টগ্রামের। চট্টগ্রামবাসীরা বরাবরই পরিশ্রমী, উদ্যোগী ও দেশের প্রতি দায়বদ্ধ। আমাদের অঞ্চল থেকে প্রবাসে অনেকেই সফল হয়েছেন, যা আমাদের অনুপ্রেরণা দেয়।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি জানতে চাইলে ইমরান হোসেন বলেন, আমি চাই, একটি রেমিট্যান্সভিত্তিক সামাজিক উদ্যোগ গড়তে, যেটি প্রবাসীদের আইনি, বিনিয়োগ এবং পরামর্শমূলক সহায়তা দেবে। সেই সাথে আমি বাংলাদেশে প্রযুক্তি ও আবাসন খাতে বিনিয়োগে আগ্রহী। আমার লক্ষ্য হচ্ছে প্রবাসে অর্জিত অভিজ্ঞতা ও সম্পদ দেশের উন্নয়নে কাজে লাগানো।
প্রবাসীদের জন্য ইমরান হোসেনের বার্তা হলো-পরিশ্রম করুন, ধৈর্য ধরুন, সততা ধরে রাখুন এবং সর্বোপরি বৈধপথে অর্থ পাঠান। প্রবাসজীবন কঠিন কিন্তু সৎভাবে চললে সাফল্য আসবেই। দেশের প্রতি দায়িত্ববোধ থাকলে যে কেউ দেশের সম্পদে পরিণত হতে পারে।
সরকারের প্রতি কোনো আহবান জানবেন- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমি সরকারের প্রতি আহবান জানাবো-প্রবাসীদের জন্য ওয়ানস্টপ সার্ভিস চালু করা হোক, যেখানে বিনিয়োগ, ব্যাংকিং, নথিপত্র ও আইনি সহায়তা সহজে পাওয়া যাবে। পাশাপাশি দুর্নীতি ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূর করতে হবে। তাহলেই প্রবাসীরা আরও উৎসাহিত হবেন।
কেমন বাংলাদেশ দেখতে চান?-প্রশ্নে তিনি বলেন, আমি চাই একটি স্বচ্ছ, উদার, আধুনিক ও অর্থনৈতিকভাবে স্বনির্ভর বাংলাদেশ-যেখানে প্রবাসীরা গর্বের সাথে আসতে পারবেন, বিনিয়োগ করতে পারবেন, সম্মান পাবেন। এমন একটি বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখি প্রতিদিন।