বেদনা বিধুর দিনগুলিতে নজরুল

15

গাজী মোহাম্মদ নুরউদ্দিন

বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রতিভা জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। সাহিত্যের এই দিকপাল, সৃজন সংসারে সক্রিয় ছিলেন মাত্র ২২ বছর। বেঁচে ছিলেন ৭৭ বছর। কিন্তু, এর মধ্যে ৩৫ বছর ছিল বেদনা-বিধুর। আর কবিরাই পারে শত বেদনায় সবসময় নিজের কথা সাবলিলভাবে তুলে ধরতে। যেমন : ‘তোমাদের পানে চাহিয়া বন্ধু আর আমি জাগিবো না, সারাদিনমান কোলাহল করি কারো ধ্যান ভাঙিবো না। নিশ্চল-নিশ্চুপ আপনার মনে পুড়িবো একাকী গন্ধবিধুর ধূপ’। এমনি অব্যক্ত বেদনার গল্পের রাজা নজরুল।
নজরুল অল্প সময়েই কালজয়ী কবিতা, অসামান্য গান, সমাজ ও রাজনীতি সচেতন গল্প, স্বাধিকারবোধের নাটক, জীবন খেয়ালি উপন্যাস, সাহিত্যকৃতি জাগরণের প্রবন্ধ সর্বত্র বিচরণ করেছেন। ধূমকেতুর মতো আবির্ভাব, কিন্তু, সাধারণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করা নজরুলের জীবন ছিল একেবারে ছন্নছাড়া। ফলে টিকে থাকার জন্য এক জীবনে করতে হয়েছে অবর্ণনীয় সংগ্রাম। কবির জীবনের মাঝামাঝি থেকে শেষ দিককার সময়কাল ছিল নিদারুণ কষ্টের। ১৯৩০ সালের ৭ মে নজরুলের ত্রুটিহীন যত্ন, সেবা ও চিকিৎসাকে ব্যর্থ করে বসন্ত রোগে অসহনীয় কষ্ট পেয়ে কবির দ্বিতীয় পুত্র বুলবুলের (অরিন্দম খালেদ) মৃত্যু হয়। পুত্রশোক এত প্রবল হয়েছিলো যে নজরুল পরে গভীরভাবে আধ্যাত্মিক সাধনার দিকে ঝোঁকেন এবং দীক্ষা নেন।
উল্লেখ্য, এই শিশুর রোগশয্যার পাশে বসেই কবি মূল ফারসি থেকে রুবাইয়াৎ-ই-হাফিজ বাংলায় অনুবাদ করেন এবং এই কাব্য বুলবুলের নামে উৎসর্গ করেন। একবার ঢাকায় এসে কবি সংগীতের সুকণ্ঠী ছাত্রী রাণু সোম (পরে প্রতিভা বসু) ও ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ সুরেন্দ্রনাথ মৈত্রের কন্যা উমা মৈত্র (নোটন) এর সাথে ঘনিষ্ঠ হন এবং তাদের গানের তালিম দিতে শুরু করেন। রাণুর প্রতিভায় মুগ্ধ কবি নিজে ছাত্রীর বনগ্রামের বাসায় যেতেন তাকে গান শেখানোর জন্য। কিন্তু স্থানীয় রক্ষণশীল যুবকদের মধ্যে তা বিরূপ মনোভাব তৈরি করে। এভাবেই একদিন ঘটে যায় অপ্রিয় এক ঘটনা। বনগ্রাম থেকে ফেরার সময় একদিন রাতে তারা নজরুলের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে, যদিও একদা সৈনিক কবির সাথে তারা ঠিক পেরে ওঠে না। পরে রাণুই কলকাতায় যেয়ে কবির কাছে গান শেখে।
কবির যখন ভয়ানক অর্থসংকট, তাঁর দুইপুত্র সানি ও নিনি তখন বালক এবং প্রমীলা নজরুল প্যারালাইসিস নিয়ে শয্যাশায়ী। এই অবস্থায় কবিকে ঠকানোর লোকের কিন্তু অভাব হয়নি! চরম অর্থকষ্টের সুযোগে কবির বইয়ের কপিরাইট কিনে নিয়ে তাঁকে যেমন অবিশ্বাস্যভাবে বঞ্চিত করেছে প্রকাশকরা (কলকাতার বিখ্যাত পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা ডি. এম লাইব্রেরীর নাম এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য), তেমনি খবরের কাগজ ও মাসিক পত্রিকার মালিকগণ দিন শেষে মাত্র ৫/৬ টাকা দিয়ে কবিকে বিদায় করতেও কার্পণ্য করেননি। অনেক সময় কবিকে কেবল চা-পান খাইয়ে লিখিয়ে নেওয়া হতো।একটা দীর্ঘ সময় জুড়ে সীমাহীন কষ্ট, লাঞ্ছনা আর অবহেলা সহ্য করেছেন কবি ও তাঁর পরিবার। বিশেষ করে নজরুল যখন অসুস্থ, প্রমীলা যখন শয্যাশায়ী, তখন কবির বড় ছেলে কবির পরিচিত প্রায় সকল বন্ধু-বান্ধব ও প্রকাশক, শুভানুধ্যায়ীদের কাছে সাহায্যের জন্য যান। খুবই কাছের হাতেগোনা কিছু মানুষ ছাড়া আর কারোর কাছেই কোনো সাহায্য তিনি পাননি, বরং কবিতা আর বইয়ের পান্ডুলিপি নিয়ে পরে আর টাকা না পাওয়া বা নামমাত্র মূল্য পাওয়ার ঘটনা ঘটেছে অনেক। কবির ওই বিপদের দিনেও কবিকে ঠকাতে পিছপা হননি সমাজের অনেক নামজাদা মানুষও। এইসব কথা উঠে এসেছে কবির কিছু ঘনিষ্ঠ শুভাকাঙ্ক্ষীর রচিত আত্মজীবনী থেকে।
কবির জীবনে বড় ধরনের আঘাত আসে ১৯৬৩ সালে ৩০ জুনে। দীর্ঘ ২২ বছর পক্ষাঘাতে শয্যাশায়ী থাকার পর কবির প্রিয়তমা স্ত্রী প্রমীলা নজরুল মারা যান। প্রমীলার নির্দেশ মতো তাঁকে কবির জন্মস্থান চুরুলিয়াতে ইসলামিক রীতি অনুসারে সমাহিত করা হয়। এই মৃত্যু যে শুধু কবিই সহজভাবে নিতে পারেননি তা না, এর সাথে তার দুই পুত্র সানি-নিনিও মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েন। বলা বাহুল্য, কাজী নজরুল ইসলামের ঘনিষ্ঠ বন্ধু সাহিত্যিক সাংবাদিক ও রাজনীতিবিদ আবুল মনসুর আহমদ। এক সঙ্গে সাংবাদিকতা, সাহিত্য ও রাজনীতি করেছেন। আবুল মনসুর রচনা করেন জীবন-ক্ষুধা, নজরুল রচনা করেন মৃত্যুক্ষুধা। আবুল মনসুরের বিখ্যাত আয়না গল্পগ্রন্থের ভূমিকা লিখেছেন বন্ধু নজরুল। ১৯৪১ সালে শের-এ-বাংলা দৈনিক নবযুগ পত্রিকা বের করেন। আবুল মনসুর আহমদকে সম্পাদকের দায়িত্ব নেওয়ায় কথা বললেও রাজি হননি। তখন কাজী নজরুল ইসলামকে দায়িত্ব দেওয়া হয়, কাজ করতেন আবুল মনসুর। বহুলপঠিত ‘আত্মকথা’ বইতে আবুল মনসুর এর নাম দেন ‘বেনামী সম্পাদক’। নবযুগের স্মৃতি থেকে জানা যায়—কাযী সাহেবের স্ত্রী বহুদিন ধরিয়া দুরারোগ্য পক্ষাঘাত রোগে ভুগিতেছেন। তাঁর রোগী হওয়া মানে কাযী সাহেবেরও পক্ষাঘাতগ্রস্ত হওয়া। কথাটা মনে হইতেই গা কাঁটা দিয়া উঠিল। এই অশুভ চিন্তার জন্য মনে-মনে তওবা করিলাম। কাযী সাহেব আমার বিচলিত ভাব দেখিয়া সান্তনা দিলেন: ‘চিন্তার কোনোও কারণ নাই। ব্যাপারটাকে যত সাংঘাতিক মনে করিতেছেন, তত সাংঘাতিক এটা নয়। আমি আমার স্ত্রীর মতো অসুস্থ হইয়া আবার ভালো হইব এবং তখন স্ত্রীও আমার সাথে-সাথে আরোগ্য লাভ করিবে। আধ্যাত্মিক সাধনার বলে এমন ইচ্ছাধীন রোগাক্রান্তি এবং রোগমুক্তি সম্ভব এটা বৈজ্ঞানিক কথা। এটাকে বলে সাইকো-থিরাপি।’ আমার মনে মানিল না, কারণ আমি ও-সম্বন্ধে কোনোও বই-পুস্তক পড়ি নাই। কেমন যেন অশুভ-অশুভ মনে হইতে লাগিল। যিনি শুনিলেন তিনিই এটাকে মস্তিষ্ক বিকারের লক্ষণ বলিলেন। এরপর কাযী সাহেব অফিসে আসা একদম বন্ধ করিয়া দিলেন। শুধু বেতন নিবার নির্ধারিত তারিখে রশিদ সই করিয়া টাকা নিতে আসিতেন। তাও খবর দিয়া আনিতে হইত। কয়েক মাস পরে তাও বন্ধ করিলেন। লোক পাঠাইয়া বেতনের টাকা নিতে লাগিলেন। নজরুল ইসলাম সাহেবই ছিলেন ‘নবযুগ’ অফিসে ছাত্র-তরুণদের বড়ো আকর্ষণ। তিনি আর অফিসে আসেন না কথাটা জানাজানি হইয়া যাওয়ায় আস্তে-আস্তে তাদেরও যাতায়াত কমিয়া গেল। (আত্মকথা : প্রথমা প্রকাশন)
অন্যদিকে প্রাবন্ধিক ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায় বলেন : নজরুলের অসুস্থ হয়ে পড়ার দিন নিয়েও সঠিক তথ্য জানা যায় না। কেউ বলেন রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুদিবসে (৭ আগস্ট ১৯৪১) কলকাতা রেডিওতে ‘রবিহারা’ কবিতাটি ওই দিনই লিখে আবৃত্তি করার সময় কবির কণ্ঠস্বর জড়িয়ে আসে, কবি অসুস্থ হয়ে পড়েন। হতে পারে একটা প্রাথমিক লক্ষণ। এক বছর পর ১০ই জুলাই নজরুল তার সুহৃদ জুলফিকার হায়দারকে একটি চিঠি লিখেছিলেন ‘তুমি এখনি চলে এসো… আমি কাল থেকে অসুস্থ’। আমরা ধরে নিতে পারি ১৯৪২ এর ৯ অগস্ট থেকেই কবি অসুস্থ হয়ে পড়েন। কবি তখন আক্ষরিকভাবেই কপর্দকহীন। সংসারে দুই শিশু পুত্র, পক্ষাঘাতগ্রস্ত স্ত্রী প্রমীলা, সর্বক্ষণের অভিভাবক শাশুড়ি গিরিবালা। ১৭০০ গানের রেকর্ডে লক্ষ লক্ষ টাকা মুনাফার সন্ধান দেওয়া গ্রামফোন কোম্পানি কোন রয়ালটি, প্রাপ্য পারিশ্রমিক দিচ্ছেনা, তার লেখার প্রকাশকরা ফিরেও তাকাচ্ছে না। ১৭ জুলাই ১৯৪২, শারীরিক যন্ত্রণা উপেক্ষা করে এক বন্ধুকে পত্র লেখেন কবি। লিখেছিলেন : ‘আমি নষড়ড়ফ ঢ়ৎবংংঁৎব এ শয্যাগত, অতিকষ্টে চিঠি লিখছি। আমার বাড়িতে অসুখ, ঋণ,পাওনাদারদের তাগাদা, প্রভৃতি ড়িৎৎরবং, সকাল থেকে রাত্রি পর্যন্ত খাটুনি। তারপর নবযুগের ড়িৎৎরবং ৩/৪ মাস পর্যন্ত। এইসব কারণে আমার হবৎাবং ংযধঃঃবৎবফ হয়ে গেছে। … কথা বন্ধ হয়ে গিয়ে অতি কষ্টে দু’একটা কথা বলতে পারি, বললে যন্ত্রণা হয় সর্ব শরীরে’।
কবির আরেক শুভাকাক্সক্ষী শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের আর্থিক সহায়তায় কবির চিকিৎসার জন্য মধুপুরে পাঠানো হলো ১৯৪২ সালের ১৯ জুলাই। কিন্তু অর্থ শেষ হয়ে যাবার পর কলকাতায় ফিরিয়ে আনা হয় ২১ সেপ্টেম্বর। ১৯৪৪ সালে ২৪ মে আনন্দবাজার পত্রিকার ‘কবি নজরুল পীড়িত’ শিরোনামে একটি আবেদন প্রচারিত হয়। আবেদনে বলা হয়েছিল ‘বাংলার বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম বহুদিন যাবত পক্ষাঘাতে শয্যাগত। অসক্ত হইয়া পড়ায় তিনি এখন নিঃস্ব ও কপর্দকহীন। তাঁহার স্ত্রীও পক্ষাঘাতে শয্যাশায়িনী। চিকিৎসা দূরের কথা, এমন সঙ্গতি নাই যে শিশু পুত্রদ্বয়, রুগণা পত্নী ও নিজের আহার্যটুকু জোটে। বাংলার জাতীয় কবির প্রাণরক্ষায় সহৃদয় সর্বসাধারণের অকুণ্ঠ সাহায্য একান্ত আবশ্যক’।
এরপর কয়েকটি সাহায্য সমিতি গঠিত হয়। কলকাতার সুখ্যাত চিকিৎসকেরা কবিকে দেখেন একাধিকবার। কিন্তু নিরাময়ের কোনো লক্ষণ দেখা যায় না। কবি কাজী আবদুল ওদুদের উদ্যোগে গঠিত ‘নজরুল নিরাময় সমিতি’র উদ্যোগে কবিকে রাঁচির মানসিক চিকিৎসালয়ে পাঠানো হয় ১৯৫২ এর ২৫ জুলাই। কিন্তু চার মাস চিকিৎসাধীন থেকেও কোনো উন্নতি না হওয়ায় ফিরিয়ে আনা হয় কলকাতায়। পরের বছর ১০ মে ১৯৫৩ কবিকে নিয়ে যাওয়া হয় লন্ডনে। সেখানকার চিকিৎসকেরা মতপ্রকাশ করেন যে কবির ব্রেন কুঁকড়ে গেছে অর্থাৎ মতিষ্কের সংকোচন হয়েছে। লন্ডন থেকে ১০ই ডিসেম্বর নজরুলকে নিয়ে যাওয়া হয় ভিয়েনায়। সেখানেও চিকিৎসকের অভিমত ছিল কবিকে আর সুস্থ করে তোলা যাবে না। এরপরেও পূর্ব জার্মানির বন বিশ্বিবিদ্যালয়ের ছাত্ররা এক রুশ ডাক্তারকে দিয়ে পরীক্ষা করিয়েছিলেন। তাঁর অভিমত ছিল যে অনেক দেরি করে রোগীকে আনা হয়েছে। সাতমাস বিদেশে বৃথা চেষ্টার পর কবিকে ফিরিয়ে আনা হয় কলকাতায় ১৯৫৩’র ১৪ই ডিসেম্বর। এর পরেও ২৩ বছর জীবিত ছিলেন নজরুল। অভাবের তাড়না, মানসিক কষ্ট, নিঃসঙ্গতা, পরিচিত বন্ধুদের দূরে চলে যাওয়া, অবহেলা এসবই ছিল কবির শেষ জীবনেরসঙ্গী। পশ্চিমবঙ্গ সরকার কর্তৃক বিনা ভাড়ায় থাকার জন্য ফ্ল্যাটের বন্দোবস্ত ও দুইবাংলা থেকেই লিটারারি পেনশনের ব্যবস্থা হওয়ার পর কিছুটা স্বস্তি এসেছিল । ১৯৬২র ২৩শে জুন দীর্ঘ ২৩ বছর ধরে পক্ষাঘাতে শয্যাগত স্ত্রী প্রমীলার দেহাবসান হল, কবি আরো নিঃসঙ্গ হয়ে গেলেন। (নজরুল জীবনের শেষ পর্যায় / বাঁধন সেনগুপ্ত, পশ্চিমবঙ্গ পত্রিকা)
‘১৯৭২ সাল।সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী কলকাতার ময়দানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্য গণসংবর্ধনার আয়োজন করেন। স্বাধীন বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর প্রথম বিদেশে সফর। আমি ও বন্ধু নারায়ণঞ্জের খান সাহেব ওসমান আলীর ছেলে সফিউদ্দিন সারওয়ারের সঙ্গে সংবর্ধনায় দর্শক হিসেবে উপস্থিত ছিলাম। মঞ্চে উপবিষ্ট ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধার্থ শঙ্কর রায়। ইন্দিরা গান্ধী বঙ্গবন্ধুসহ মঞ্চে আরোহণ করেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ভেঙেছে দুয়ার এসেছে জ্যোতির্ময় তোমারি হউক জয়’ সমবেত কণ্ঠে এই গান দিয়ে উপস্থিত লাখো দর্শক শ্রোতার গগনবিদারী কণ্ঠে অনুষ্ঠান শুরু হয়।অনুষ্ঠান শেষে আমাদের পূর্বপরিচিত আনন্দবাজার পত্রিকার আলোকচিত্রশিল্পীকে কবি নজরুল ইসলামের বাসায় নিয়ে যাওয়ার অনুরোধ করলাম। গিয়ে দেখি একটি জরাজীর্ণ কক্ষে চৌকিতে নির্বাক বসে আছেন বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম!’ (তবিবুল ইসলাম বাবু, প্রথম আলো অনলাইন, ২২ জুলাই ২০২০)
জীবনের শেষ চারটি বছর জাতীয় কবি বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় অতিথির মর্যাদায়, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অমায়িক আন্তরিকতায় তার প্রাপ্য সমাদর পেয়েছিলেন। তবে, সামগ্রিক তথ্যমতে নজরুলের জীবনের শেষ চৌত্রিশটা বছর ছিল বড় মর্মান্তিক। এর অন্যতম স্বাক্ষী কমরেড মোজাফফর আহমদ, বন্ধু আবুল মনসুর আহমদ, কবি কাজী আবদুল ওদুদ,কবি ও নজরুল গবেষক আবদুল কাদির অন্যতম। তারা বলেন, কোনো সৃষ্টিশীল মানুষ জাতীয় কবির মতো নিদারুণ অবহেলা আর বঞ্চনার যন্ত্রণা ভোগ করেছিলেন কি না, জানা নেই। মধুসূদন দত্ত জীবনের শেষ দিনগুলো আত্মীয়-পরিজনহীন, চরম দারিদ্র ও অবহেলার মুখোমুখি হয়েছিলেন সত্য, কিন্তু, নজরুলের শেষ জীবন আরও চরম বেদনাদায়ক।
লেখক : ডেপুটি রেজিস্ট্রার, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগার