বৃষ্টি হলেই পাহাড়ে মৃত্যুভয়

5

নিজস্ব প্রতিবেদক

বৃষ্টি হলেই দৃষ্টি পড়ে পাহাড়ে। দীর্ঘদিন ধরে প্রশাসনের এমন সক্রিয়তা লক্ষ্য করা গেলেও কার্যত বড় ধরনের পদক্ষেপ ছিল না। উচ্ছেদের মতো কিছু পদক্ষেপ নেয়া হলেও তা বৃষ্টি কমলেই থমকে যায়। পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির প্রতি সভায় যেসব সুপারিশ করা হয় সেগুলো থাকে উপেক্ষিত। সভাগুলোতে পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস সংযোগ নিয়েই বেশি মাতামাতি হয়। স্থায়ীভাবে এসব সংযোগ বিচ্ছিন্নের সিদ্ধান্ত হলেও তা বাস্তবায়ন হয় না। পাহাড় মালিকপক্ষ দপ্তরগুলোর উদাসীনতার কারণে প্রশাসনের উদ্যোগ ভেস্তে যায়। যে কারণে মৃত্যুভয় থাকার পরেও সরকারি হিসেবে নগরীর ২৬ পাহাড়ে ছয় হাজার ৫৫৮ পরিবার বসবাস করছে।
গত শনিবার আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে পাঁচ বিভাগে সপ্তাহজুড়ে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এরমধ্যে চট্টগ্রাম বিভাগের পাহাড়ি এলাকায় কোথাও কোথাও ভ‚মিধসের আশঙ্কা আছে। এ আশঙ্কার পরেই প্রশাসনের তৎপরতা আরোও বেড়েছে। তবে নিয়মিত রিপোর্ট জমা না দেয়ায় পাহাড় রক্ষা কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন সংশ্লিস্টরা।
চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ও পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য সচিব এ.কে.এম গোলাম মোর্শেদ খান পূর্বদেশকে বলেন, ‘পাহাড়ের পরিস্থিতি সার্বক্ষনিক পর্যবেক্ষণে এসিল্যান্ডদের বলা হয়েছে। আবহাওয়া বিবেচনায় নিয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে। ইতোমধ্যে পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক সব দপ্তরকে চিঠি দেয়া হয়েছে। ১৫ দিনের মধ্যে তাদেরকে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। আমরা কয়েকদিনের মধ্যে একটি ফলোআপ মিটিং করবো। আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বলে দিয়েছি ইতোপূর্বে পাহাড় কর্তনের দায়ে মামলায় অভিযুক্ত সকল আসামিকে দ্রæত যাতে গ্রেপ্তার করা হয়।’
গত ২০জুন পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির ২৮তম সভা ও গত ১০ সেপ্টেম্বর ২৯তম সভায় পাহাড় কর্তন ও পাহাড়ে অবৈধভাবে বসবাস নিয়ে বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানি সংযোগ নিয়ে নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়। পাহাড়ে বিদ্যুৎ বিভাগ, ওয়াসা ও কর্ণফুলী গ্যাস অবৈধভাবে সংযোগ দেয় বলে অভিযোগ উঠে। সভায় পাহাড় মালিকপক্ষ হিসেবে পরিচিত দপ্তরগুলোকেও পাহাড় থেকে অবৈধ বসতি উচ্ছেদের নির্দেশনা দেয়া হয়। অবৈধ সংযোগ প্রদানকারী দপ্তর ও পাহাড় মালিকপক্ষ দপ্তরগুলোকে পাহাড় রক্ষায় কি অগ্রগতি নেয়া হয়েছে তা ১৫দিন অন্তর পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য সচিবকে জানাতে বলা হয়। কিন্তু সর্বশেষ গত ১০ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির ২৯তম সভার নেয়া এই সিদ্ধান্ত কেউ বাস্তবায়ন করেনি। ১৫ দিনের অগ্রগতি রিপোর্ট ২৫ দিনেও পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য সচিবের কাছে জমা পড়েনি। মালিকপক্ষ দপ্তরগুলো পাহাড় রক্ষায় অনেকটা উদাসীন বলেই প্রতিটি সভায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটি।
পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য সচিব এ.কে.এম গোলাম মোর্শেদ খান পূর্বদেশকে বলেন, ‘কোন দপ্তর যদি নিজেদের পাহাড় রক্ষায় উদাসীন হয় তাহলে যারা দায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিব। আমাদের সোজা কথা, হয় পাহাড় রক্ষায় এ্যাকটিভ হতে হবে নয়তো স্যালেন্ডার করতে হবে।’
তথ্য মতে, চট্টগ্রাম মহানগরীতে সরকারি বিভিন্ন সংস্থা ও বিভাগের মালিকানাধীন ১৬টি পাহাড়ে ছয় হাজার ১৭৫টি ও ব্যক্তি মালিকানাধীন ১০টি পাহাড়ে ৩৮৩টি পরিবার বসবাস করে। সরকারি দপ্তরগুলোর মধ্যে রেলওয়ের মালিকানাধীন পাহাড় আছে সাতটি, গনপূর্ত বিভাগ-৩ এর একটি, আমিন জুট মিলসের একটি, জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের দুটি, ১নং খাস খতিয়ানভুক্ত তিনটি, এপি ও ভিপি মালিকানাধীন দুটি পাহাড় আছে। সবগুলো পাহাড়েই ঝুঁকিতে বসবাস করছে নিম্নবিত্ত মানুষ। খেটেখাওয়া এসব মানুষকে ঘরভাড়া দিয়ে সরকারি পাহাড় থেকেই কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে পাহাড় দখলকারীরা।
চট্টগ্রামে পাহাড় ধসের সবচেয়ে বড় ঘটনাটি ঘটে ২০০৭ সালে। সেসময় এ ঘটনায় ১২৭ জনের প্রাণহানি ঘটে। এরপর থেকে প্রায় প্রতিবছরই নগরী ও জেলার বিভিন্ন এলাকায় পাহাড় ধসে প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। ২০০৭ সালের দুর্ঘটনার পর শক্তিশালী পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটি যে ২৯টি সভা করেছে সবগুলো সভাতেই ঘুরেফিরে উচ্ছেদ ও সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার বিষয়ে জোরালো আলোচনা হয়েছে। প্রতিটি সভায় নেয়া সুপারিশগুলো যথাযথ বাস্তবায়ন না হওয়ায় পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাগুলো ‘রুটিন ওয়ার্কে’ পরিণত হয়েছে।
পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির সর্বশেষ সভায় রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান ভ‚-সম্পত্তি কর্মকর্তা সুজন চৌধুরী বলেন, ‘মতিঝর্ণা বাটালিহিল পাহাড়ে ও ফয়েজলেক এলাকার ১,২,৩নং জিল সংলগ্ন পাহাড়ে অবৈধভাবে বসবাসকারী রয়েছে। বেশ কয়েকবার উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনার উদ্যোগ নেয়া হলেও হাইকোর্ট বিভাগে রিট পিটিশন মামলা থাকায় উচ্ছেদ চালানো হয়নি।’