বৃষ্টি হলেই কাদাপানিতে ডুবে চাতরী চৌমুহনী বাজার

1

খালেদ মনছুর, আনোয়ারা

আনোয়ারার চাতরী চৌমুহনী বাজার বৃষ্টি হলেই কাদাপানিতে একাকার হয়ে যায়। সরকার প্রতি বছর এই বাজার থেকে ৮০ লাখ টাকা ইজারা নেয়, অথচ বাজারটির প্রতি সরকার বা ইজারাদার কারো যেন কোনো দায়বদ্ধতা নেই। গত ১০ বছরে এই জলাবদ্ধতা নিরসনে উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদ থেকে কোটি টাকার উপরে খরচ করা হয়েছে এই বাজারে। তারপরও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। সঠিক পরিকল্পনার অভাবে কোটি টাকা জলে গেছে বলে অভিযোগ বাজারের ব্যবসায়ী ও ক্রেতাসাধারণের।
জানা যায়, ২০১৫ সালে তৎকালীন ইউএনও সাইফুল ইসলামের সময় চাতরী চৌমুহনী বাজারের জলাবদ্ধতা নিরসনে ৪০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ড্রেন নির্মাণ করা হয়। কিন্তু সেই ড্রেনে উপরে কোনো ঢাকনা না দেয়ায় বাজারের সমস্ত ময়লা ড্রেনে গিয়ে পড়ে। ড্রেনটি বর্তমানে অকেজো হয়ে পড়েছে। পরবর্তীতে ২০১৯ সালে তৎকালীন ইউএনও গৌতম বাড়ৈর সময় এ বাজারের উন্নয়নে প্রায় ৭৫ লক্ষ টাকা ব্যয় করা হয়। এরপর চাতরী ইউনিয়ন পরিষদ থেকেও কয়েক দফা ড্রেনের কাজ করা হয়। কিন্তু শেষমেষ জলাবদ্ধতা নিরসন হয়নি।
গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে হাঁটু পরিমাণ পানিতে ডুবে গেছে চাতরী চৌমুহনী বাজারের সিইউএফএল সড়ক। দীর্ঘক্ষণ সড়কে পানি জমে থাকায় সৃষ্টি হচ্ছে গর্তের। বাজারের পর্যাপ্ত পরিমাণ পরিচ্ছন্নকর্মী না থাকায় প্রতিদিনের বাজারের ময়লা-আবর্জনাগুলো পড়ছে ড্রেনে গিয়ে। সরু ড্রেনগুলোতে পানিও ঠিকমত চলাচল করতে পারে না। ফলে সামান্য বৃষ্টিতেই হাঁটু পরিমাণ পানি জমে যায়। জলাবদ্ধ সড়কে চলতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন অটোরিকশা, মোটর সাইকেল, সিএনজিসহ নানা যানবাহন। ফলে বৃষ্টির মধ্যে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে ক্রেতা আর যাত্রীদের। দীর্ঘ সময় জলাবদ্ধ থাকার ফলে বাজারে আসা ক্রেতাদের চলাচল করতে হয় অনেক কষ্টে।
মো. আনিস নামের এক ক্রেতা বলেন, ‘দক্ষিণ চট্টগ্রামের অনতম বড় বাজার এটি। এখানে পেকুয়া, সাতকানিয়া, বাঁশখালী থেকেও লোকজন কেনাকাটা করতে আসেন। এই বাজারের যদি এ অবস্থা হয় তা মানা যায় না।’
হাবিব নামের এক অটোচালক বলেন, ‘বাজারে জমে থাকা পানির কারণে গাড়ি চালাতে ইচ্ছে করে না। ব্যাটারিতে পানি ঢুকে গাড়ি নষ্ট হয়ে যায়। পড়ে যাওয়ার ভয়ে যাত্রীরাও উঠতে চান না। এটির একটি স্থায়ী সমাধান প্রয়োজন।’
যুবদল নেতা এড. নুরুল কবির বলেন, ‘আনোয়ারা উপজেলা এখন টানেল যুগে প্রবেশ করেছে। আর চাতরী চৌমুহনী বাজার আনোয়ারার প্রবেশমুখ। এটি দক্ষিণ চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী একটি বাজার। এই বাজারের করুণ চিত্র আমাদের মর্মাহত করে। অতীতে যারা দায়িত্বে ছিলেন তারা সবাই নিজেদের আখের গোছাতে ব্যস্ত ছিলেন। আমাদের নেতা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব লায়ন হেলাল ভাইয়ের সাথে কথা বলে চাতরী চৌমুহনী বাজারের জলাবদ্ধতা নিরসনসহ উন্নয়নে কাজ করা হবে।’
আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) তাহমিনা আকতার বলেন, ‘জলাবদ্ধতার বিষয়টি আমি নিজে উপস্থিত হয়ে দেখেছি। পানি নিষ্কাশণের জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছি। সিইউএফএল সড়কটি চার লেনে উন্নীতকরণের একটি প্রকল্প সড়ক ও জনপথ বিভাগ হাতে নিয়েছে। এটি বাস্তবায়ন হলে দুই পাশে ড্রেনেজ ব্যবস্থা থাকবে। তখন আর জলাবদ্ধতা থাকবে না।’