আসাদুজ্জামান রিপন
বৃষ্টি নামলেই আতঙ্ক বাড়ে চট্টগ্রাম নগরীতে। একদিকে পাহাড়ধস, অন্যদিকে জলাবদ্ধতার দুশ্চিন্তা ভর করে নগরবাসীর মনে। চট্টগ্রামে নির্বিচারে পাহাড় কাটা, অপরিকল্পিত বনায়ন এবং অনিয়ন্ত্রিত ও অবৈধ বসতির কারণে পাহাড়ধসের শঙ্কা বাড়ছে। এছাড়া অপরিকল্পিত নগরায়ন, নালা-খাল দখল, পুকুর-জলাশয় ভরাট জলাবদ্ধতার কারণ বলে উল্লেখ করেন পরিবেশকর্মীরা। তবে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের পক্ষে পাহাড়ধস মোকাবেলায় প্রস্তুতির কথা জানানো হয়েছে।
চট্টগ্রাম আবহাওয়া অধিদপ্তরের উপপরিচালক (চলতি দায়িত্ব) মোহাম্মাদ আবদুর রহমান খান জানান, আগামী রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত চট্টগ্রামের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি অব্যাহত থাকবে। ৭২ ঘণ্টা আবহাওয়া অপরিবর্তিত থাকবে। চট্টগ্রামে গত ২৪ ঘণ্টায় ২২৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রের্কড করা হয়েছে। দীর্ঘ সময় ধরে বৃষ্টি ঝরার কারণে চট্টগ্রাম শহর ও আশপাশে পাহাড়ধসের আশঙ্কা রয়েছে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বন ও পরিবেশ বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ও বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ড. মো. আল আমিন বলেন, চট্টগ্রামের পাহাড়গুলো মাটি ও বালুর মিশ্রণে তৈরি। মাটি বেশ ঝুরঝুরে থাকে। অবৈধ বসতির কারণে পাহাড়ের সবুজ উজাড় হচ্ছে। উপরিভাগ উন্মুক্ত হয়ে যায়। ফলে বৃষ্টি হলে পাহাড়ের উপরিভাগ ধুয়ে চলে যায়। বালিময় গঠনের কারণে পানি ধরে রাখতে পারে না। আবার, পাহাড় কাটার কারণে তার একটি অংশ নাই হয়ে যায়। প্রাকৃতিক গঠন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে, প্রাকৃতিক নিয়মে ক্ষতিগ্রস্ত অংশটি পূূরণ করতে গিয়ে পাহাড়ধস হয়।
তিনি আরও বলেন, পাহাড় থেকে অবৈধ বসতি উচ্ছেদ আর পাহাড় কাটা বন্ধ ছাড়া পাহাড়ধস রোধের বিকল্প নেই। তাছাড়া, অবৈধ বসতি সরিয়ে গভীর মূলের বনজ গাছ যেমন গর্জন, শাল, চন্দন, সেগুনগাছ সৃজন করতে হবে।
পাহাড় রক্ষায় প্রশাসনের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ : চট্টগ্রামের পাহাড় রক্ষায় স্থানীয় প্রশাসনের ভ‚মিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন পরিবেশকর্মীরা। তারা বলছেন, পাহাড় রক্ষায় প্রশাসন নির্বিকার ভ‚মিকা পালন করে। সভা-সেমিনার করে দায় সারছেন। এক সরকারি সংস্থা অন্য সরকারি সংস্থাকে দায়ী করছেন। গত ২৬ মে পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির ৩১তম সভার এমন ক্ষোভ প্রকাশ করেন পরিবেশকর্মীরা।
বাংলাদেশ পরিবেশ ফোরামের সাধারণ সম্পাদক অলিউর রহমান বলেন, পাহাড়ধস প্রাকৃতিক দুর্যোগ নয়, এটি মানুষের সৃষ্টি। এক শ্রেণির মানুষ আছে, যারা পাহাড় কেটে ঘর বানিয়ে নিম্ন আয়ের মানুষকে ভাড়া দেন। এসব অবৈধ বসতি উচ্ছেদে কোন কার্যকর উদ্যোগ নেই। এ কারণে সামান্য বৃষ্টি হলে এসব মানুষ পাহাড় ধসের কবলে পড়ে।
তিনি বলেন, যতদিন পাহাড়ে মানুষ থাকবেন, ততদিন ধস ঠেকানো যাবে না। প্রশাসনের উদাসীনতার কারণে চট্টগ্রাম শহর থেকে পাহাড় উধাও। তাদের মধ্যে কোন সমন্বয় নেই। যা আছে তা রক্ষায় দৃশ্যমান কোন পদক্ষেপ নেই।
পাহাড়ধস রোধে প্রস্তুতি : জানা গেছে, চট্টগ্রাম পাহাড়ধস মোকাবেলায় প্রস্তুতি নিয়েছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। ইতিমধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাকে ৫টি জোনে ভাগ করে ৫টি টিম করা হয়েছে। পাহাড়ে অবৈধ বসতি থেকে বাসিন্দাদের সরিয়ে নিতে কাজ শুরু করা হয়েছে।
চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সাদি উর রহিম জাদিদ জানান, নগরীর পাহাড়ি এলাকাকে ৫টি জোনে ভাগ করা হয়েছে। প্রতি জোনে ১ জন করে ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে পৃথক টিম করে দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে কাজ শুরু হয়েছে। আকবরশাহে একটি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। ইতিমধ্যে মানুষ আসছে। তাছাড়া সিটি করপোরেশনের বিদ্যলয়গুলো আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। পর্যাপ্ত ত্রাণ সামগ্রী মজুদ রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে অবৈধ বসতি উচ্ছেদ সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। উচ্ছেদের আগে তাদের পুনর্বাসন করতে হবে। এ ব্যাপারে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে আলোচনা চলছে।