বুলবুল আহমেদ, অভিনেতা। পুরো নাম তবাররুক আহমেদ বুলবুল, বুলবুল আহমেদ নামেই জনপ্রিয়। ১৯৪১ সালের ৪ সেপ্টেম্বর পুরান ঢাকার আগা মসি লেনে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর মায়ের নাম মোসাম্মত মোসলেমা বেগম, বাবা খলিল আহমেদ, পূর্ব পাকিস্তান সরকারের অর্থ বিভাগের ডেপুটি সেক্রেটারি ছিলেন। তাছাড়া তিনি ছিলেন একজন শৌখিন অভিনেতা। নাটকে তাঁর উৎসাহ বুলবুল আহমেদ উত্তরাধিকারসূত্রে লাভ করেছিলেন।
বুলবুল আহমেদ ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল থেকে ১৯৫৭ সালে ম্যাট্রিকুলেশন এবং ঢাকা কলেজ থেকে ১৯৫৯ সালে আই এ পাশ করেন। তিনি নটরডেম কলেজ থেকে ১৯৬১ সালে বিএ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইতিহাস বিভাগ থেকে ১৯৬৩ সালে এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন।
বুলবুল আহমেদ কলেজ জীবন থেকেই বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। সিলেট এমসি কলেজের ছাত্রাবস্থায় তিনি চিরকুমার সভা নাটকে অভিনয় করে দর্শকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। মঞ্চ নাটকে অভিনয়ের মাধ্যমেই তাঁর অভিনয় জীবন শুরু। ১৯৬০ সালে তিনি ‘ড্রামা সার্কেল’ নামে নাট্য দলে যোগদান করেন এবং ইডিপাস ও আর্মস এ্যান্ড দি ম্যান নাটক দুটিতে অভিনয় করেন। ১৯৬৮ সালে টেলিভিশনে তাঁর অভিনয় জীবন শুরু হয়। সে সময়েই অভিনেতা হিসেবে তিনি বুলবুল আহমেদ নাম গ্রহণ করেন। আবদুল্লাহ ইউসুফ ইমাম পরিচালিত ইয়ে করে বিয়ে (১৯৭২) ছবি’তে অভিনয়ের মাধ্যমে তাঁর চলচ্চিত্র জীবনের সূচনা হয়। উক্ত ছবিটিতে তিনি একটি পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয় করে দর্শকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। এর পরের বছরই তিনি জীবন নিয়ে জুয়া ছবিতে একটি প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন। এই অভিনয়ের মাধ্যমেই তিনি ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় নিজের শক্ত অবস্থান প্রতিষ্ঠা করেন।
অভিনয়ে দক্ষতা এবং দৃষ্টিনন্দন অভিব্যক্তি নিয়ে তিনি শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের দেবদাস উপন্যাসের চলচ্চিত্র ভাষ্যে দেবদাসের চরিত্রে অভিনয় করেন। ছবিটি পরিচালনা করেন চাষী নজরুল ইসলাম। মঞ্চ এবং চলচ্চিত্রে অভিনয়ের পাশাপাশি তিনি রাজলক্ষী শ্রীকান্ত এবং আকর্ষণ ছবিতে অভিনয় করেন। ছবি দুটি পরিচালনাও করেন তিনি। ছবি দুটি ব্যাপক ব্যবসায়িক সফলতা অর্জন করে। তাছাড়া তিনি ওয়াদা, ভালো মানুষ, মহানায়ক গরম হাওয়া, কত যে আপন ছবিতে অভিনয় করেন এবং পরিচালনা করেন। তাঁর অভিনীত ছবিগুলোর মধ্যে সীমানা পেরিয়ে, মহানায়ক, দীপু নম্বর টু, মোহনা, ভালো মানুষ, শেষ উত্তর, হারানো মানিক, সোনার হরিণ, সূর্য্য কন্যা, রূপালী সৈকতে, বধূ বিদায় উল্লেখযোগ্য। শেষ বিকালের মেয়ে, বরফ গলা নদী, আরেক ফাল্গুন, ইডিয়ট, মালঞ্চ, বড়দিদি, শুভা ও এইসব দিনরাত্রি তাঁর জনপ্রিয় নাটক। তাঁর অভিনয় দক্ষতা তাঁকে দেশ ও বিদেশে পরিচিত করে তোলে।
বুলবুল আহমেদ তাঁর অভিনয়ের স্বীকৃতিস্বরূপ চারবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। তাঁর পুরস্কারপ্রাপ্ত ছবি চারটি: আলমগীর কবীর পরিচালিত সীমানা পেরিয়ে (১৯৭৭), কাজী জহির পরিচালিত বধূ বিদায় (১৯৭৮), আজিজুর রহমান বুলি পরিচালিত শেষ উত্তর (১৯৮০) এবং মোরশেদুল ইসলাম পরিচালিত দীপু নম্বর টু (১৯৯৬)। ১৯৮৭ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত রাজলক্ষী শ্রীকান্ত ছবিটির শ্রেষ্ঠ পরিচালক হিসেবে বুলবুল আহমেদ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। তাছাড়া তিনি জহির রায়হান চলচ্চিত্র পুরস্কার (১৯৭৬), বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি পুরস্কার (১৯৮০), বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব লস এনজেলেস পুরস্কার (১৯৯১), টেনশিনাস পদক (১৯৯২), বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্প সমিতির পুরস্কার (১৯৯৬), ফুলকলি পুরস্কার (২০০০), সাংস্কৃতিক রিপোর্টার পুরস্কার (২০০১), ঈষান সাংস্কৃতিক একাডেমি পুরস্কার (২০০২), টেলিভিশন দর্শক পুরস্কার (২০০৪), চিত্রালী পদক লাভ করেন। ১৯৮২ সালে তাঁকে জাতীয় বাচসাস (বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি) চলচ্চিত্র এবং ২০০৪ সালে অগ্রগামী সামাজিক সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীকর্তৃক সংবর্ধনা দেওয়া হয়। বুলবুল আহমেদ প্রথম জীবনে একজন ব্যাংকার ছিলেন এবং ইউনাইটেড ব্যাংকে (বর্তমানে জনতা ব্যাংক) তিনি ১৯৬৫ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন। তিনি ২০১০ সালের ১৪ জুলাই ঢাকায় মারা যান। সূত্র : বাংলাপিডিয়া