আবরার ফাহাদকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্মমভাবে হত্যা করা হয় বুয়েটে। সমগ্র দেশে আলোড়িত এ হত্যাকান্ড মেধাবী শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা প্রবল উৎকণ্ঠায় পড়েছিল। নিম্ন আদালতের রায় বহাল থাকায় সর্বমহলে স্বস্তির নিশ্বাস পড়েছে। দ্রুত এরায় বাস্তবায়ন করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের জীবন নিরাপদ করা জরুরি।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)-এর ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় বিচারিক আদালতের দেয়া ২০ জনকে মৃত্যুদন্ড এবং পাঁচজনের যাবজ্জীবন কারাদন্ড বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট। মৃত্যুদন্ড প্রাপ্তদের ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের আপিল শুনানি শেষে বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত একটি হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ গতকাল রোববার এ রায় দেন। হাইকোর্ট যাদের মৃত্যুদন্ড বহাল রেখেছেন তারা হলেন: মেহেদী হাসান রাসেল, মো. অনিক সরকার, মেহেদী হাসান রবিন, ইফতি মোশাররফ সকাল, মো. মনিরুজ্জামান মনির, মো. মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন, মো. মাজেদুর রহমান মাজেদ, মো. মুজাহিদুর রহমান, খন্দকার তাবাককারুল ইসলাম তানভীর, হোসাইন মোহাম্মদ তোহা, মো. শামীম বিল্লাহ, এ এস এম নাজমুস সাদাত, মোর্শেদ অমর্ত্য ইসলাম, মুনতাসির আল জেমি, মো. শামসুল আরেফিন রাফাত, মো. মিজানুর রহমান, এস এম মাহমুদ সেতু, মোর্শেদ-উজ-জামান মন্ডল জিসান, এহতেশামুল রাব্বি তানিম ও মুজতবা রাফিদ।
যে পাঁচজনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড বহাল রেখেছেন তারা হলেন : মুহতাসিম ফুয়াদ হোসেন, মো. আকাশ হোসেন, মুয়াজ আবু হুরায়রা, অমিত সাহা ও ইশতিয়াক আহমেদ মুন্না।
হাইকোর্টে এই মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. জসিম সরকার, খন্দকার বাহার রুমি, নূর মুহাম্মদ আজমী, রাসেল আহম্মেদ এবং সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আব্দুল জব্বার জুয়েল, লাবনী আক্তার, তানভীর প্রধান ও সুমাইয়া বিনতে আজিজ। আসামিপক্ষে শুনানিতে ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী এস এম শাহজাহান, আজিজুর রহমান দুলু, মাসুদ হাসান চৌধুরী, মোহাম্মদ শিশির মনির।
২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর দিবাগত রাতে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শেরেবাংলা হলে ছাত্রলীগের একদল নেতা-কর্মীর বর্বরোচিত ও নির্মম নির্যাতনে নিহত হন আবরার ফাহাদ। বুয়েটের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিকস প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন আবরার।
২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বর আবরার হত্যা মামলায় ২০ জনকে মৃত্যুদন্ড ও পাঁচজনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেন ঢাকার একটি আদালত। এরপর ২০২২ সালের ৬ জানুয়ারি আবরার হত্যা মামলায় মৃত্যুদন্ড প্রাপ্তদের ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে আসে।
অন্যদিকে, আসামিরা রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন। একপর্যায়ে গত বছর ৭ অক্টোবর অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান সাংবাদিকদের জানান, এই মামলায় দ্রুত পেপারবুক তৈরি করে হাইকোর্টে আপিল শুনানির উদ্যোগ নেওয়া হবে। সেই ধারাবাহিকতায় হাইকোর্টে ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানি শুরু হয়। শুনানি শেষে গত ২৪ ফেব্রæয়ারি রায়ের জন্য বিষয়টি অপেক্ষমাণ রাখেন হাইকোর্ট।
বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় হাই কোর্টের রায় দ্রæত বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছেন তার মা রোকেয়া খাতুন। গতকাল রবিবার দুপুরে হাই কোর্টের রায়ের পর কুষ্টিয়া শহরের বাসভবনে এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, ‘এখন একটাই চাওয়া, রায় যেন দ্রুত সময়ের মধ্যে কার্যকর হয়’।
আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার মামলায় নিম্ন আদালতে দেওয়া ২০ আসামির মৃত্যুদন্ড এবং পাঁচজনের যাবজ্জীবনের রায় বহাল রেখেছে হাই কোর্ট। মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামিদের আপিল ও ডেথ রেফারেন্সের শুনানি নিয়ে এ রায় দেয় বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের আপিল বেঞ্চ। খবর বিডিনিউজের
আসামিদের মধ্যে ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত চারজন পলাতক রয়েছেন। রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে আবরারের মা রোকেয়া খাতুন বলেন, ‘ঘটনার পর থেকে দীর্ঘ ছয় বছর ধরে দেশের মানুষ আমাদের সঙ্গে আছেন। কেউ আমাদের কাছ থেকে দূরে সরে যাননি। এজন্য আমি সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। এখন একটাই চাওয়া, রায় যেন দ্রুত সময়ের মধ্যে কার্যকর হয়। এ রায় কার্যকর হলে ভবিষ্যতে এমন কাজ করতে আর কেউ সাহস পাবে না। সেই সঙ্গে দেশের সব উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্যাম্পাসে যেন এমন প্রাণঘাতী রাজনীতি না থাকে সেই অনুরোধ করছি’। আবরারের মায়ের দাবি ও আকাঙ্খা দ্রুত বাস্তবায়ন করে একলঙ্কিত অধ্যায়ের অবসান করতে হবে এমন দাবি সকল অভিভাবকের।