বুদ্ধদেব গুহ

6

লেখক। তিনি মূলত বন, অরণ্য এবং প্রকৃতি বিষয়ক লেখার জন্য পরিচিত। তার স্ত্রী প্রখ্যাত রবীন্দ্রসঙ্গীত গায়িকা ঋতু গুহ। বহু বিচিত্রতায় ভরপুর এবং অভিজ্ঞতাময় তার জীবন। ইংল্যান্ড, ইউরোপের প্রায় সমস্ত দেশ, কানাডা, আমেরিকা, হাওয়াই, জাপান, থাইল্যান্ড ও পূর্বআফ্রিকা তার দেখা। পূর্বভারতের বন-জঙ্গল, পশুপাখি ও বনের মানুষের সঙ্গেও তার সুদীর্ঘকালের নিবিড় ও অন্তরংগ পরিচয়। বুদ্ধদেব গুহর ১৯৩৬ সালে কলকাতায় জন্ম হলেও তার ছোটবেলা কেটেছিল বরিশাল ও রংপুরে। তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সুপরিচিত সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে পড়াশোনা করেন। বুদ্ধদেব গুহর পেশাগত জীবন শুরু হয়েছিল চাটার্ড অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে। তিনি ছিলেন একজন নামী চাটার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট। দিল্লির কেন্দ্রীয় রাজস্ব বোর্ড থেকে পশ্চিমবঙ্গের আয়কর বিভাগের উপদেষ্টা বোর্ডের সদস্য নিযুক্ত করেছিল।
বুদ্ধদেব গুহের প্রধান পরিচয় তিনি শিকার কাহিনি বা অরণ্যপ্রেমিক লেখক। কিন্তু অরণ্যানীর জীবন বা শিকার ছাপিয়ে তার রচনা ধারণ করেছে এক প্রেমিক সত্তাকে। এই প্রেমিক সত্তা একইসঙ্গে প্রকৃতি ও নারীকে অবিচ্ছিন্নভাবে ধারণ করেছে তার গল্প ও উপন্যাসে। তার সৃষ্টি বাবলি, মাধুকরী, কোজাগর, হলুদ বসন্ত, একটু উষ্ণতার জন্য, কুমুুদিনী, খেলা যখ এবং ঋজুদা বাংলা কথাসাহিত্যের জগতকে সমৃদ্ধ করেছে তুলনারহিত আঙ্গিকে। তার রচিত ‘বাবা হওয়া’ এবং ‘স্বামী হওয়া’- এ দুইয়ের ওপর ভিত্তি করে নির্মিত হয়েছে পুরস্কারজয়ী বাংলা চলচ্চিত্র ‘ডিকশনারি’। শিশু সাহিত্যিক হিসেবেও তিনি ছিলেন জনপ্রিয়। বাংলা জনপ্রিয় সাহিত্যে বুদ্ধদেব গুহের এক নিঃসঙ্গ নাম কারণ যে ধারার সাহিত্য তিনি রচনা করেছেন তা বাংলা মূলধারার পরিপ্রেক্ষিতে অভিনব। অনির্বাণ মুখোপাধ্যায় লিখেছেন, ‘বাঙালি মধ্যবিত্ত জীবন থেকে তার সাহিত্যের ভুবন খানিকটা দূরে। টাঁড়ে, বনে, অরণ্যে, বাঘের গায়ের ডোরায় সে সব কাহিনি ছায়াময়। তার নায়কদের নাম ঋজুদা, রুরু, পৃথু। নায়িকাদের নাম টিটি, টুঁই, কুর্চি। তারা ছাপোষা বাঙালি জীবনের চৌহদ্দিতে নেই। কিন্তু পাড়ার লাইব্রেরি থেকে সেই বই বুকে নিয়েই বাঙালি গৃহবধূ তার নিঃসঙ্গ দুপুর কাটাতেন। লুকিয়ে ‘একটু উষ্ণতার জন্য’ পড়তে পড়তে বাঙালি কিশোর বুকের ভিতরে যৌবনের প্রথম আলোড়ন টের পেত। কিশোরী নিজের অজান্তেই কখন যেন যুবতী হয়ে উঠত।’
বুদ্ধদেব গুহ ‘হলুদ বসন্ত’ উপন্যাসের জন্য আনন্দ পুরস্কার পেয়েছেন ১৯৭৬ সালে। তিনি শিরোমন পুরস্কার এবং শরৎ পুরস্কারেও সম্মানিত হয়েছেন
২৯ আগস্ট ২০২১ রাত ১১টা ২৫মিনিটে মৃত্যু হয় সাহিত্যিক বুদ্ধদেব গুহর। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হলেও কিছু দিন আগে কোভিড ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন, একটানা ত্রিশ দিন হাসপাতালে থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেও গিয়েছিলেন। কিন্তু দীর্ঘকাল যাবৎ মূত্রথলিতে এবং বয়সজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন। শ্বাসকষ্ট ও মুত্রনালীর সংক্রমণ বৃদ্ধি পেলে ৩১ জুলাই দক্ষিণ কলকাতার বেলভিউ নার্সিংহোমে ভর্তি হয়েছিলেন। চারজন চিকিৎসকের একটি বোর্ডের তত্ত¡াবধানে চিকিৎসা হচ্ছিল। তবে চিকিৎসায় তেমন ফল না হওয়ায় তাকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। সেখানেই ২৯ আগস্ট রবিবার মধ্যরাতের কিছু আগে ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাকে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তিনি দুই কন্যা রেখে গেছেন। তার স্ত্রী রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী ঋতু গুহ ২০১১ সালে প্রয়াত হয়েছেন। সূত্র: বাংলাপিডিয়া