ছবি ও প্রতিবেদন :
এম. হায়দার আলী
পাহাড়তলী ঝাউতলা বিহারী পল্লীতে একসময় কারচুপি ও জারদৌসি কারিগরদের বেশ হাঁকডাক ছিল। কোনো যন্ত্র ছাড়াই সুঁই-সুতায় নিপুণ হাতের কারুকাজে রঙ-বেরঙের পোশাকে বাহারি নকশা তোলায় তাদের দক্ষতার সুনাম ছিল জগতজুড়ে। তবে হাতে তৈরি এ শিল্পটি এখন ভেঙে পড়েছে প্রায়। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার, বিদেশি পোশাকের আমদানি ও সরকারি বিনিয়োগের অভাবে অনেক কারিগর ও মালিক এই পেশা ছেড়েছেন।আবার অনেকেই শত বছরের পুরোনো এই শিল্পকে নানাভাবে টিকিয়ে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করছেন।
কারিগররা জানিয়েছেন, জরি, সুতা, পুঁতি, চুমকি, পাথর দিয়ে মূলত বিভিন্ন পোশাকে নকশায় কারচুপি ও জারদৌসি কাজ হয়ে থাকে। এখানকার বাহারি নকশার পোশাক চলে যেতো চট্টগ্রামের বিভিন্ন শপিংমলে। বিহারি পল্লীর কয়েকটি কারখানায় এখনও হাতেগোনা কারচুপি-জারদৌসি কারিগরের দেখা পাওয়া যায়। তবে নেই আধুনিকতার ছোঁয়া। ঝাউতলার এই বিহারী পল্লী একটি গলির ভেতর ঢুকে সামান্য হাঁটলে দোতলাবিশিষ্ট একটি কারখানার সন্ধান পাওয়া যায়। এখানে পাঞ্জাবি, কামিজ, থ্রি-পিস, শাড়ি, আবায়া ও বোরকাসহ বিভিন্ন পোশাকে ডিজাইন তৈরি করে দেওয়া হয়। কারচুপি ও জারদৌসি এ দুটো সম্পূর্ণই হাতের কাজ, যা মেশিন দিয়ে কখনোই সম্ভব নয়।
তিনি বলেন, এ কাজগুলো কাঠের ফ্রেমে নকশা আঁকা কাপড় রেখে পাথর ও বিভিন্ন সুতা দিয়ে করা হয়। সাধারণত, মোগল স্থাপত্যরীতির একটা ছাপ স্পষ্টভাবেই ফুটে ওঠে এতে। মোগল আমলের মিনার-কলকি জারদৌসি কাজের মূল বৈশিষ্ট্য। সিল্ক, মসলিন, জর্জেট ও ভেলভেটের কাপড়ে জারদৌসি পূর্ণরূপে ফুটে ওঠে। জরি, সুতা, পুঁতি, চুমকি, পাথর ইত্যাদি কারচুপি ও জারদৌসির মূল কাঁচামাল। এগুলো মূলত ভারত ও পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে আসে। কিন্তু এসবের দাম এখন অনেক বেড়ে গেছে। নিজের সৃজনশীলতার সঙ্গে হাতের কৌশলের সমন্বয় করে একজন কারিগর সম্পন্ন করেন একেকটি জারদৌসির কাজ। তবে কারচুপির কাজটা একটু ভিন্ন। এখানে জারদৌসির চেয়ে পরিশ্রম কিছুটা কম। তবে এই দুটি নকশা যেন সহোদর। একটি ছাড়া আরেকটি নকশা সম্পূর্ণ হয়ে ওঠে না!