নিজস্ব প্রতিবেদক
রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় অভিযুক্ত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে কারাগারে পাঠানোকে কেন্দ্র করে আদালতপাড়ায় সংঘর্ষের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার আসামি ৬৩জন আইনজীবীর জামিন মঞ্জুর করা হয়েছে। গতকাল সোমবার সকালে অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম সরকার হাসান শাহরিয়ারের আদালতে অভিযুক্ত আইনজীবীরা আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন। দুপুরে শুনানি শেষে আদালত তাদের জামিন মঞ্জুর করেন।
এদিকে মামলায় অভিযুক্ত আইনজীবীদেও জামিন আদেশের পর সংঘর্ষের দিন নৃশংসভাবে খুনের শিকার হওয়া আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যার বিচার চেয়ে বিপুল সংখ্যক আইনজীবী আদালত প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ মিছিল করেন। তবে জামিন শুনানিকে কেন্দ্র করে সকাল থেকেই পুরো আদালতপাড়ায় ছিল কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। বিপুল সংখ্যক পুলিশ ও র্যাব সদস্য আদালত প্রাঙ্গণে মোতায়েন ছিল।
মামলার আসামি হওয়া আইনজীবীদের পক্ষে আদালতে জামিন শুনানিতে অংশ নেওয়া সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী এজলাস থেকে বেরিয়ে উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, আমরা আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যার তীব্র নিন্দা জানাই এবং জড়িতদের কঠোর শাস্তি দাবি করছি। ওইদিনের ঘটনায় কয়েকটি মামলা দায়ের হয়েছে। এর মধ্যে পুলিশ ভাঙচুরসহ বিভিন্ন অভিযোগে তিনটি মামলা করেছে। শহীদ আলিফের বাবা হত্যা মামলা করেছেন। আর আলিফের ভাই বাদি হয়ে আরেকটি মামলা করেছেন। ওই মামলায় আসামি হিসেবে থাকা ৬৩জন আইনজীবীর পক্ষে আমরা জামিন আবেদন করেছিলাম। আদালত শুনানি শেষে মামলার চার্জশিট বা পুলিশ প্রতিবেদন দাখিল না হওয়া পর্যন্ত জামিন মঞ্জুর করেছেন। এ মামলায় যে আইনজীবীদের আসামি করা হয়েছে, তারা ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত নন। যিনি মামলা করেছেন, তিনি নিজেও ঘটনাস্থলে ছিলেন না। আলামতও দিতে পারেননি। আমরা বিষয়গুলো আদালতের কাছে তুলে ধরেছি।
আদালত সূত্র জানিয়েছে, শুনানির সময় আদালত আসামিদের কাছে জানতে চেয়েছেন, আপনারা আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যার বিচার চান কী না। তখন অভিযুক্ত আইনজীবীররা দু’হাত তুলে বলেছেন, অবশ্যই আমরা আলিফ হত্যাকাÐের বিচার চাই। ন্যায়বিচারের স্বার্থে সব আইনজীবী ঐক্যবদ্ধ থাকবেন বলেও অঙ্গীকার করেন। শুনানি শেষে আদালত সবাইকে এক হাজার টাকার বন্ডে জামিন দিয়েছেন।
জামিন আদেশের পর ক্ষোভ প্রকাশ করে বাদির আইনজীবী মুহাম্মদ শামসুল আলম সাংবাদিকদের বলেন, যাদের জামিন দেয়া হয়েছে, তারাই ছিলেন ঘটনার উস্কানিদাতা। বিস্ফোরক আইনের মামলায় ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট থেকে আসামিদের জামিনের নজির নেই। কিন্তু আদালত এ মামলায় ৬৩জন আসামির জামিন মঞ্জুর করেছেন। আমাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। এ ধরনের আদেশে আমরা ক্ষুব্ধ।
উল্লেখ্য, রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে নগরীর কোতোয়ালী থানায় দায়ের হওয়া মামলায় গত বছরের ২৫ নভেম্বর রাতে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে গ্রেপ্তার করে ডিএমপির গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। পরদিন ২৬ নভেম্বর সকাল ১১টার দিকে তাকে চট্টগ্রাম আদালতে হাজির করা হয়। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে জামিন নামঞ্জুর করে তাকে আদালতে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত। এরপর তাকে কারাগারে পাঠানোর জন্য প্রিজন ভ্যানে তোলা হলে বিক্ষোভ শুরু করেন তার অনুসারীরা। প্রায় তিনঘণ্টা আটকে থাকার পর একপর্যায়ে পুলিশ, বিজিবি লাঠিপেটা ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। তখনই সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। পরবর্তীতে নগরীর লালদিঘীর পাড় থেকে কোতোয়ালী এলাকায় সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষের সময় আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে খুন করা হয়। আইনজীবী সমিতি এ হামলার জন্য ইসকন সদস্য ও সমর্থকদের দায়ী করে আসছে। আইনজীবী খুন ও আদালতপাড়ায় সংঘাতের ঘটনায় কোতোয়ালী থানায় মোট পাঁচটি মামলা দায়ের হয়েছে।