বিশ্ব সম্প্রদায়কে এখনই এ যুদ্ধ থামাতে হবে

2

যুদ্ধ আর রক্তপাত মানব ধ্বংস ছাড়া আর কিছুই নয়। এরপরও একটি নতুন সভ্যতার উদয়ের জন্য সুদুর অতীতে যুদ্ধ অপরিহার্য হয়ে পড়েছিল। যার কার্যকারিতা এখন নেই বললেই চলে। এখন যুদ্ধ সভ্যতা নির্মাণ করে যুদ্ধ হচ্ছে, যার সাথে বিশ্বও প্রভাবশালী সম্রাজ্যবাদি দেশগুলো কোন না কোনভাবে সম্পৃক্ত হয়ে পড়ে। এক্ষেত্রে আঞ্চলিক স্বার্থ ও অস্ত্র বাণিজ্যই তাদের প্রধান লক্ষ্য। সম্প্রতি রাশিয়া-ইউক্রেন ও ইসরায়েল-ফিলিস্তিনের যুদ্ধ এবং ধ্বংসাবশেষ বিশ্ব সভ্যতাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করেছে। এতে মানবতার পরাজয় ছাড়া আর কিছুই হয়নি, বরং সাম্রাজ্যবাদীরা অস্ত্র বাণিজ্যে লাভবান হয়েছে। সম্প্রতি ভারত পাকিস্তানের যুদ্ধাংদেহী মনোভাব এবং মঙ্গলবার রাতে ভারত কর্তৃক পাকিস্তান আক্রান্তের খবর এ অঞ্চর নয়, বরং বিশ্ব সম্প্রদায়কে হতবিহব্বল করে তুলেছে। গত দুই সপ্তাহ আগে কাশ্মীরের পেহেলগাম এলাকায় ভারতীয় পর্যটকদের উপর সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন পর্যটন নিহত হয়েছিলেন। এজন্য ভারত পাকিস্তানকে দায়ি কওে এর প্রতিশোধের কথা ঘোষণা করেন। এরপর থেকে দুই দেশের যে যুদ্ধ প্রস্তুতি তাতে বিশ্ব সম্প্রদায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। ইতোমধ্যে ভারত পাকিস্তানের মোজাফ্ফর নগরসহ কয়েকটি এলাকায় বিমান হামলা চালানোর পর উভয় দেশে সর্বাত্মক যুদ্ধের হুইসেল বেজে উঠে। ইতোমধ্যে দুই দেশের পঞ্চাশের অধিক সৈন্য ও সাধারণ মানুস নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। যা মানবতার জন্য কোন কল্যাণ বয়ে আনবেনা, বরং রক্ত আর চোখের পানিতেই সভ্যতার ধ্বংস দেখতে হতে পারে। মনে রাখা চাই, প্রতিটি যুদ্ধ কেবল বিজয় বা পরাজয়ের কাহিনী নয়, বরং লাখো প্রাণের আর্তনাদ, চোখের জল, ধ্বংস্তূপ আর নিঃশেষিত ভবিষ্যতের গল্প। সূত্র জানায়, ভারতের আক্রমণের পর পাকিস্তানও পাল্টা আক্রমণ শুরু করেছে। এ সম্পাদকীয় স্তবক যখন লেখা হচ্ছে, তখন বিবিসি খবরে পাকিস্তানের যুদ্ধ বিমান জম্মু-কাশ্মীরে বিমান আক্রমণের দৃশ্য লাইভ দেখাচ্ছে। ভারত যদিও বেশ কয়েকটি আক্রমণ প্রতিহত করেছে, কিন্তু এরমধ্যে ভারতে তাদের ১৭ টি রাজ্য শহর ও বিমান বন্ধরে রেড এলার্ট ও যুদ্ধ সাইরেন বাজাচ্ছে। পরিস্থিতি আসলে কোন দিকে যাচ্ছে তা হয়ত আরো কয়েকদিন লাগবে। তবে এরমধ্যে মানুষের হতাহতের খবর আমাদের উদ্ধেগ্ন করে তুলেছে। বিশেষ করে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে হাজারো বাংলাদেশি তরুণ লেখাপড়া করেন। পাঞ্জাবের রাজধানী চন্ডীগড় ইউনিভার্সিটিতে প্রায় চার শতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে যারা প্রযুক্তি বিজ্ঞানসহ নানা বিষয়ে গ্র্যাজুয়েশন করছেন। এ ছাড়া দিল্লি, হরিয়ানায়ও রয়েছে, যে এলাকাগুলো এখন রেড এলার্ট এর আওতায়। সরকারের উচেৎ ভারতে অবস্থানরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের খোজঁখবর নেয়া। যুদ্ধ পরিস্থিতিতে তাদের ফিরিয়ে আনার জরুরি উদ্যোগ নেয়। দেশের ইন্টেরিম সরকার প্রধান একজন আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব। শান্তির জন্য নোবেল পাওয়া প্রফেসর ড. ইউনূস উপমহাদেশের দুই শক্তিধর রাষ্ট্র ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধ বন্ধের উদ্যোগ নিতে পারেন। ইতোমধ্যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দুই দেশকে থামানের আহবান জানান। জাতিসংঘ চরম ধৈর্য ধারণ করে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের আহবান জানান। ইরানের একমন্ত্রী ভারত সফর করে যুদ্ধ পরিস্থিতি বন্ধের প্রয়াস চালিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ যুদ্ধ বন্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন আদায়ে প্রয়াস চালাতে পারে।
আমাদের ভুলে গেলে চলবে না, আধুনিক সভ্যতা আজ অনেক দূর এগিয়েছে, কিন্তু যুদ্ধের আগুন এখনো পৃথিবীর নানা প্রান্তে জ্বলছে। তাই আজ সমগ্র মানবজাতির একটাই দাবি- যুদ্ধ নয়, শান্তি চাই। আমরা বিশ্বাস করি, যুদ্ধ কখনোই স্থায়ী সমাধান নয়। এটি ধ্বংস আনে, ব্যথা দেয়, প্রজন্মের পর প্রজন্মকে করে তোলে ক্ষত-বিক্ষত। যেখানে যুদ্ধ থামে, সেখান থেকেই শুরু হয় দীর্ঘ পুনর্গঠনের যন্ত্রণা। অথচ একটি শান্তিপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে অনেক জটিল সমস্যার সমাধান সম্ভব। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, শান্তির পথে হাঁটলে টিকে থাকে সভ্যতা, আর যুদ্ধের পথে ধ্বংস অনিবার্য। বিশ্বে যত উন্নয়ন, বিজ্ঞান, সংস্কৃতি ও মানবিক অগ্রগতি – সবকিছুর মূলেই রয়েছে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ। যুদ্ধ এ অগ্রগতিকে থামিয়ে দেয়, মানুষকে পশ্চাৎপদ করে। আজকের শিশুদের জন্য একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে হলে আমাদের এখনই যুদ্ধ ও সহিংসতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। রাষ্ট্রনায়ক থেকে সাধারণ মানুষ, শিক্ষার্থী থেকে শিল্পী – সবার একসঙ্গে উচ্চারণ করা উচিত এই বাক্যটি: যুদ্ধ নয়, শান্তি চাই। আমরা একে অপরকে সহ্য করব, শ্রদ্ধা করব, একসঙ্গে টিকে থাকার পথ খুঁজব। শান্তিই আমাদের শক্তি, শান্তিই আমাদের আশ্রয়।