বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ রোল মডেল : প্রধানমন্ত্রী

4

পূর্বদেশ ডেস্ক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। তিনি সংলাপের মাধ্যমে সকল দ্বন্দ্ব-সংঘাত নিরসন, চলমান যুদ্ধ বন্ধ এবং অস্ত্র প্রতিযোগিতার অর্থ মানবজাতির কল্যাণে ব্যয় করার আহবান পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ আভ্যন্তরীণ শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষার পাশাপাশি বৈশ্বিক শান্তি প্রতিষ্টার প্রচেষ্টায় একটি দায়িত্বশীল ও নির্ভরযোগ্য নাম। আমরা সর্বজন স্বীকৃত এবং বিশ্বের বুকে একটি রোল মডেল। খবর বাসসের।
প্রধানমন্ত্রী গতকাল বুধবার সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস-২০২৪’ উদযাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন।
তিনি বলেন, জাতির পিতার পররাষ্ট নীতি ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়’, বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় জাতির পিতার অঙ্গীকার ও আমাদের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা অনুসরণ করে বাংলাদেশ জাতিসংঘের ‘ব্লু হেলমেট’ পরিবারের সদস্য হয়।
সরকারপ্রধান বলেন, বর্তমানে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের ১৩টি স্থানে ৪৯৩ জন নারীসহ ৬০৯২ জন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী সুনামের সঙ্গে কাজ করছেন। বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা যেখানে কাজ করছে সেসব রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানরা তাদের ভ‚য়সী প্রশংসা করেছেন। প্রশংসা শুনে গর্বে আমার বুকটা ভরে যায়।
শেখ হাসিনা বলেন, শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখার বৈশ্বিক প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ আজ একটি দায়িত্বশীল ও নির্ভরযোগ্য নাম। আমরা সর্বজন স্বীকৃত এবং বিশে^র বুকে রোল মডেল। এই অর্জনের পেছনে রয়েছে আমাদের সশস্ত্র বাহিনী ও পুলিশ বাহিনীর টেকসই. পরিশ্রমী নিবেদিত প্রাণ সদস্যদের মহান আত্মত্যাগ ও অমূল্য অবদান।
তিনি ১৬৮ বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের অবদানের কথা স্মরণ করেন যারা বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় আত্মত্যাগ করেছেন এবং ২৬৬ জন গুরুতর আহত হয়েছেন।
শান্তিরক্ষায় অবদান রাখতে গিয়ে আত্মোৎসর্গকারীদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে তাদের পরিবারের সদস্যদেরও সমবেদনা জানান তিনি। স্বজন হারাবার বেদনা যে কি, তিনি তা জানেন বলেও এ সময় উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা জাতিসংঘ শাস্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের অংশগ্রহণের ৩৬ বছর উদযাপন করছি। বাংলাদেশ আজ বিশ্বের বৃহৎ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারি দেশ এবং সকলে অত্যন্ত সুনাম ও গৌরবের সঙ্গে কাজ করে চলেছেন। তিনি এ সময় বিশ্বের নানা প্রান্তে কর্মরত সকল বাংলাদেশী শান্তিরক্ষীদের শুভেচ্ছা জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতার আদর্শ অনুসরণ করে আমরা বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করে যাচ্ছি। শান্তিরক্ষা মিশন ছাড়াও অন্যান্য আন্তর্জাতিক ফোরাম গুলোতেও আমরা সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ ও অবদান রাখছি।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ, সিনিয়র পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন এবং জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গুয়েন লুইস।
প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে আহত তিন জনের হাতে সম্মাননা তুলে দেন। তিনি ইউএন পিস কিপার্স জার্নাল এর (১০ম ভলিউম) মোড়কও উন্মোচন করেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় আত্মত্যাগকারী বীরদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
অনুষ্ঠানে জাতিসংঘ মিশনে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীদের কৃতিত্বের ওপর একটি ভিডিও প্রামাণ্যচিত্র ও প্রদর্শন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী পরে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বিভিন্ন স্থানে কর্মরত বাংলাদেশী শান্তিরক্ষীদেও সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে দ্বন্দ্ব সংঘাত, যুদ্ধ আজ বিশ্ব শান্তি বিঘিœত করছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, গাজার ইসরায়েলি হামলায় হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু। সেখানে গণহত্যা চলছে, মিয়ানমারে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করা ইত্যাদি মানবজাতির জন্য এক ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমি ঠিক জানি না এই সংঘাত বা যুদ্ধ মানবজাতির জন্য কী কল্যাণ বয়ে আনছে। অস্ত্র প্রতিযোগিতা প্রতিনিয়ত যত বৃদ্ধি পাচ্ছে, ততই মানুষের জীবন আরো বেশি দুর্বিসহ হয়ে উঠছে। বিশেষ করে নারী-শিশুরা সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাচ্ছে। যুবকরা অকাতরে জীবন দিচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা যুদ্ধ চাইনা, শান্তি চাই। আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সব কিছু সমাধান করতে চাই।
তিনি বলেন, বিশ্বে এখনও বিপুল সংখ্যক মানুষ দরিদ্রসীমার নিচে রয়েছে। কোটি কোটি মানুষ দু’বেলা খাবার পায় না। রোগের চিকিৎসা পায় না। শিশুরা শিক্ষা পায় না। তারা শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত। যারা অস্ত্র তৈরি এবং অস্ত্র পতিযোগিতায় এত অর্থ ব্যয় করছে তাদের কাছে আমার আহবান-আমরা শান্তির কথা বলি কিন্তু সংঘাতে লিপ্ত হই কেন?
সরকারপ্রধান বলেন ‘এই যে অর্থ ব্যয় হচ্ছে এই অর্থ যদি ক্ষুধার্ত মানুষের আহারের ব্যবস্থা, শিক্ষা ও চিকিৎসার ব্যবস্থায় ব্যয় হতো তাহলে এই পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হতো। মানুষের জীবনমান উন্নত হতো। মানুষ সুন্দরভাবে বাঁচতে পারতো। কিন্তু এই সংঘাত প্রতিনিয়ত মানুষকে আরো কষ্টের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। কাজেই আমি সবসময় যেখানেই যাই এই একটি আহবানই জানাই সংঘাত নয়, যদি কোন সমস্যা থাকে তা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করার। সেটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় কাজ।
শেখ হাসিনা বলেন, প্রযুক্তির সাম্প্রতিক প্রসার এবং অগ্রযাত্রার সাথে সাথে বাড়ছে নতুন নতুন হুমকি। ফলে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনগুলোর শান্তিরক্ষীদের বহুমাত্রিক জটিল পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হচ্ছে। তাই শান্তিরক্ষা মিশনগুলো উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে সমৃদ্ধ করার প্রয়োজনীয়তা এখন বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীগণ বিশ্বের সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং এবং বিপদজনক অঞ্চলে সৃষ্ট পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে পারে, সেজন্য তাদের সমোপযোগী প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।