আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আর মাত্র তিনদিন পরই যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন। আমেরিকানরা তাদের প্রেসিডেন্ট হিসেবে কাকে বেছে নেয় তা দেখার অপেক্ষায় বিশ্ববাসী। ডেমোক্র্যাটিক প্রেসিডেন্ট প্রার্থী কমলা হ্যারিস কি বাইডেনের দেখানো পথ অনুসরণ করে তার দৃঢ় বিশ্বাস নিয়ে এগিয়ে যাবেন? নাকি ‘বিশ্ববাদ নয়, আমেরিকাবাদ’ বিশ্বাস নিয়ে আবারও “মেইক আমেরিকা গ্রেট এগেইন” বলবেন ডনাল্ড ট্রাম্প? আমরা এমন এক বিশ্বে বাস করছি, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবের মূল্য কতটুকু তা নিয়ে প্রশ্ন আছে।
আঞ্চলিক শক্তিগুলো নিজস্ব পথে চলছে, স্বৈরতান্ত্রিক শাসকরা তাদের নিজ নিজ মিত্র তৈরি করে নিচ্ছে। গাজা, ইউক্রেইনসহ বিশ্বজুড়ে অন্যান্য স্থানে ধ্বংসাত্মক যুদ্ধ ওয়াশিংটনের ভূমিকার গুরুত্ব প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ও সামরিক শক্তি এবং অনেক জোটে দেশটির প্রধান ভূমিকার কারণে তারা এখনও বিশ্বমঞ্চে গুরুত্বপূর্ণ। নেটোর সাবেক ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল রোজ গোটেমোয়েলার বলেন, “ডনাল্ড ট্রাম্প ইউরোপের দুঃস্বপ্ন। নেটো জোট থেকে তার দেশের বেরিয়ে যাওয়ার হুমকির প্রতিধ্বনি এখনও সবার কানে বাজে।” ওয়াশিংটনের প্রতিরক্ষা ব্যয় নেটোর অন্য ৩১ সদস্যের সামরিক বাজেটের দুই-তৃতীয়াংশ। নেটোর বাইরে যুক্তরাষ্ট্র তার সামরিক খাতে চীন ও রাশিয়াসহ পরবর্তী ১০টি দেশের সম্মিলিত ব্যয়ের চেয়েও বেশি ব্যয় করে।
ট্রাম্প গর্ব করে বলেছেন, অন্যান্য নেটো রাষ্ট্রকেও তাদের ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে বাধ্য করবেন তিনি। সেই ব্যয় তাদের জিডিপি’র ২ শতাংশ। তবে ২০২৪ সালে এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে মাত্র ২৩ সদস্য রাষ্ট্র।
তবে হ্যারিস জিতলে নেটো নিঃসন্দেহে ওয়াশিংটনের হাতে থাকবে বলে মনে করেন গোটেমোয়েলার। কিন্তু সেখানেও রয়েছে বিপত্তি। গোটেমোয়েলার সতর্ক করে দিয়ে বলনে, ইউক্রেইনে বিজয় অর্জনের জন্য হ্যারিস ন্যাটো ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে কাজ চালিয়ে যেতে প্রস্তুত থাকবেন। তবে হ্যারিস ইউরোপের প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়ানোর জন্য চাপ দেওয়া থেকে পিছ পা হবেন না।
অবশ্য যাই ঘটুক না কেন, গোটেমোয়েলার মনে করেন “নেটো ভেঙে পড়বে না। তবে ইউরোপকে ‘নেতৃত্ব দিতে এগিয়ে আসার দরকার পড়ব”। যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্টের জন্য এমন একটি বিশ্ব অপেক্ষা করছে যেখানে শান্তির চেয়ে সংঘাত বেশি। এই যুদ্ধ মোকাবেলা করেই তাকে কাজ করে যেতে হবে। ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রæপের প্রেসিডেন্ট ও সিইও কমফোর্ট ইরো বলেন, “শান্তি ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র এখনও সবচেয়ে প্রভাবশালী আন্তর্জাতিক শক্তি। তবে দ্বন্দ্ব-সংঘাতের সমাধানে সহায়তা করার শক্তি যুক্তরাষ্ট্রের কমে গেছে।”
যুদ্ধ শেষ করা দিনদিন কঠিন হয়ে পড়েছে। ইরোর মতে, “প্রাণঘাতী সব সংঘাত আরও জটিল হয়ে উঠছে, বড় বড় শক্তির দেশগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা ত্বরান্বিত হচ্ছে এবং মাঝারি শক্তির দেশগুলোর ক্ষমতা বাড়ছে।”
ইরো আরও বলেন, “ইউক্রেইনের মতো যুদ্ধ একাধিক শক্তিকে টেনে রেখেছে। আবার সুদানের মতো সংঘর্ষগুলো একে-অপরের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বী স্বার্থের সঙ্গে আঞ্চলিক খেলোয়াড়দের ক্ষমতার খেলায় নামার সুযোগ করে দেয়। এখন সবাই শান্তি রক্ষার চেয়ে যুদ্ধেই বেশি বিনিয়োগ করে।”
ইরোর মতে, আমেরিকা তার নৈতিকতার উঁচু স্থান হারাচ্ছে। তিনি বলেন, “কমলা হ্যারিসের জয় বর্তমান প্রশাসনের ধারাবাহিকতার প্রতিনিধিত্ব করে।