বিশ্বজুড়ে মৃতের সংখ্যা ৫ হাজারে পৌঁছেছে

15

ইউরোপ ও আমেরিকায় নভেল করোনাভাইরাসের প্রকোপ দ্রুত বাড়তে থাকায় মাত্র চার দিনে আরও এক হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে, বিশ্বে মৃতের সংখ্যা পৌঁছে গেছে প্রায় পাঁচ হাজারে। আড়াই মাসে মহামারীর আকার পাওয়া নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বিশ্বের ১২৩টি দেশ ও অঞ্চলে আক্রান্তের
সংখ্যা ১ লাখ ৩২ হাজার ছাড়িয়ে গেছে বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
এই পরিস্থিতিতে বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ কড়াকড়ি আরোপ করতে থাকায় দারুণভাবে বিঘিœত হচ্ছে বিশ্ব যোগাযোগ। একের পর এক আন্তর্জাতিক ক্রীড়া আয়োজন ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বন্ধের ঘোষণা আসছে নানা দেশ থেকে। কোথাও কোথাও খেলা চলছে গ্যালারি শূন্য রেখে।
বেলজিয়াম, ফ্রান্স, পর্তুগালস, শ্রীলঙ্কাহ আরও কয়েকটি দেশ স্কুল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছে। জমায়েত ও জনসমাগম নিষিদ্ধ করা হয়েছে বিভিন্ন শহরে। ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে তিন দিন ধরে কার্যত অবরুদ্ধ দশায় থাকা ইতালিতে গত বৃহস্পতিবার দেড় হাজার নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে। ইউরোপে করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের অন্যতম কেন্দ্র হয়ে ওঠা এই দেশটিতে মৃতের সংখ্যা ইতোমধ্যে হাজার ছাড়িয়েছে।
যানবাহন চলাচলে কড়াকড়ি আরোপের মাধ্যমে ফিলিপিন্সের রাজধানী ম্যানিলাকে এক মাস বাইরের দুনিয়া থেকে আলাদা করে ফেলার ব্যবস্থা হয়েছে।
কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর স্ত্রী সোফি গ্রেগরি ট্রুডো যুক্তরাজ্য থেকে ঘুরে এসে নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। ট্রুডোর মধ্যে এখনও কোনো উপসর্গ দেখা না গেলেও চিকিৎসকের পরামর্শে তিনিও ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে থাকার সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন।
আক্রান্ত হয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পিটার ডাটনও, যিনি গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে অনেকের সঙ্গে দেখা করেছেন; যাদের মধ্যে প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের মেয়ে ইভাঙ্কা ট্রাম্পও আছেন।
ফিলিপিন্সের প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতের্তের পর ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জাইর বোলসোনারোও করোনাভাইরাস পরীক্ষা করিয়েছেন।
করোনাভাইরাস পরীক্ষা করা নিয়ে জটিলতায় থাকা যুক্তরাষ্ট্রের আরও কয়েকটি স্টেটে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। স্কুল বন্ধ রাখার পাশাপাশি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের বাসা থেকে কাজ করতে বলা হচ্ছে। কোথাও কোথাও নিত্যপণ্যের দোকানে জরুরি জিনিসপত্র পাওয়া যাচ্ছে না। আতঙ্কের মধ্যে জনজীবন অনেকটাই স্থবির হয়ে পড়েছে।
পরিসংখ্যানে কভিড-১৯
চীনের মূল ভূখন্ডে ৮০ হাজার ৯৮১ জন আক্রান্ত ও ৩ হাজার ১৭৩ জনের মৃত্যু হয়েছে।
বিশ্বজুড়ে মোট ১ লক্ষ ৩২ হাজার ৫৬৭ জন আক্রান্ত হয়েছেন। মৃত্যুবরণ করেছেন ৪ হাজার ৯৪৭ জন। চীনের বাইরে মৃত্যু হয়েছে ইতালিতে ১০১৬, ইরানে ৪২৯, দক্ষিণ কোরিয়ায় ৬৬, স্পেনে ৮৪, ফ্রান্সে ৬১, যুক্তরাষ্ট্রে ৩৬, জাপানে ১৯, ইরাকে ৭, যুক্তরাজ্যে ৮, নেদারল্যান্ডস এ ৫, সুইজারল্যান্ডে ৬, জার্মানিতে ৬, হংকং এ ৩, অস্ট্রেলিয়ায় ৩, লেবাননে ৩, সান মারিনোতে ২, ফিলিপিন্সে ২, অস্ট্রিয়ায় ১, গ্রিসে ১, পোল্যান্ডে ১, আলজেরিয়ায় ১, গিনিতে ১, কানাডায় ১, মিশরে ১, থাইল্যান্ডে ১, তাইওয়ানে ১, আয়ারল্যান্ডে ১, ইন্দোনেশিয়ায় ১, আর্জেন্টিনায় ১, পানামায় ১, বুলগেরিয়ায় ১, মরক্কোয় ১ এবং অন্যান্য দেশে ৭ জন মৃত্যুবরণ করেছে। খবর বিডিনিউজের
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, গতকাল শুক্রবার সকাল (ইউরোপীয় সেন্ট্রাল টাইম) পর্যন্ত বিশ্বে এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে ১ লাখ ৩২ হাজার ৫৬৭ জন। আর মৃত্যু হয়েছে ৪ হাজার ৯৪৭ জনের। আক্রান্তদের মধ্যে ৬৮ হাজার মানুষ ইতোমধ্যে সেরেও উঠেছেন বলে তথ্য দিয়েছেন জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা।
আক্রান্ত ও মৃত্যুর অধিকাংশ ঘটনা ঘটেছে চীনে, তবে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি জনসংখ্যার দেশটি নানা ধরনের কঠোর ব্যবস্থা নিয়ে পরিস্থিতি সামলে ওঠার পর এখন সংক্রমণ বাড়ছে ইউরোপ, আমেরিকায়।
ডিসেম্বরের শেষে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণের প্রথম ঘটনা ধরা পড়ে। সেই হুবেই প্রদেশে নতুন রোগীর সংখ্যা বৃহস্পতিবার নেমে এসেছে ৬ জনে। চীনের মূলভূখন্ডে বুধবার নতুন করে ৩৩ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে, মারা গেছেন ৭ জন।