এখন থেকে ভুল বা বিভ্রান্তিকর সংবাদ প্রকাশ হলে সরকার ‘প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা’ নেবে বলে হুঁশিয়ার করেছেন প্রধান উপদেষ্টার উপ প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার। গতকাল বুধবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “আমরা লক্ষ্য করেছি, বিভিন্ন সময় ভুল ও বিভ্রান্তিকর সংবাদ প্রকাশিত হচ্ছে। আমরা সেসব বিষয়ে আপনাদের সঠিক তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করি। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী এবং সমালোচনাকে সবসময় স্বাগত জানায়।
তবে এর মানে এই নয় যে, কেউ ইচ্ছামত মিথ্যা বা ভিত্তিহীন সংবাদ ছাপাতে পারেন। ভবিষ্যতে যদি কেউ বিভ্রান্তিকর, মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সংবাদ প্রকাশ করেন, যার ফলে জনগণ বিভ্রান্ত হন, সরকার বাধ্য হবে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নিতে। খবর বিডিনিউজের।
জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইন সংশোধনের অধ্যাদেশ নিয়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে আসা প্রতিবেদনের প্রতিক্রিয়ায় উপ প্রেস সচিবের এই হুঁশিয়ারি এল। তিনি বলেন, কয়েকটি সংবাদপত্র ও অনলাইন মাধ্যমে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে, যেখানে দাবি করা হয়েছে যে, মুজিবনগর সরকারের রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ এবং দুই মন্ত্রী ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী ও এইচএম কামরুজ্জামানসহ শতাধিক নেতার মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি বাতিল করা হয়েছে। সরকার স্পষ্টভাবে জানাচ্ছে, এই সংবাদটি সম্পূর্ণ মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এই অধ্যাদেশে মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা পরিবর্তনের পাশাপাশি আগে যারা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃত ছিলেন, তাদের একটি অংশকে ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ বলা হয়েছে।
তাতে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চার নেতাসহ মুজিবনগর সরকারের এমএনএ বা এমপিএদের মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি আর থাকল না বলে খবর প্রকাশিত হয় বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে।
আজাদ মজুমদার বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে গতকাল (মঙ্গলবার) যে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে, তা ইতোমধ্যে আমরা গণমাধ্যমের সঙ্গে শেয়ার করেছি। মনোযোগ দিয়ে পড়লে যে কেউ বুঝতে পারবেন, সেখানে এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত নেই।
এছাড়া মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এই বিভ্রান্তির বিষয়ে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম আমাদেরকে নিশ্চিত করেছেন, মুজিবনগর সরকারের নেতৃত্বে যারা ছিলেন—যেমন রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রীরা, তারা প্রত্যেকেই মুক্তিযোদ্ধা। যারা যুদ্ধ করেছেন, যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছেন, তাদের স্বীকৃতিতে কোনো পরিবর্তন হয়নি।
তবে, মুজিবনগর সরকারের অধীন কর্মরত প্রশাসনিক কর্মকর্তা-কর্মচারীরা, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কর্মী এবং ক‚টনীতিকরা জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) অধ্যাদেশ অনুযায়ী ‘সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা’ হিসেবে বিবেচিত হন।
উপ প্রেস সচিব বলেন, ‘সহযোগী’ মানে সম্মানহানি নয়। বরং ১৯৭২ সালেন সংজ্ঞা অনুযায়ী মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছিল, সেটিই বাস্তবায়ন করা হয়েছে। ২০১৮ ও ২০২২ সালে সংজ্ঞায় কিছু পরিবর্তন আনা হলেও, ‘মুক্তিযোদ্ধা’ এবং ‘সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা’, উভয়ের মর্যাদা, সম্মান ও সুযোগ-সুবিধা সমান থাকবে, যা আমাদেরকে উপদেষ্টা নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, যারা বিভ্রান্তিকর ও ভুল সংবাদ প্রকাশ করেছেন, তাদের প্রতি আহবান জানাই—তারা যেন ভুল স্বীকার করে সংশোধনী প্রকাশ করেন। এবং ভুল যে জায়গায় ছাপা হয়েছে, সেখানেই সংশোধনী ছাপিয়ে, পাঠকের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেন। কারণ এই ভুল সংবাদে দেশের মানুষ বিভ্রান্ত হয়েছেন।