বিপ্লব ও সংহতি দিবস আজ

1

নিজস্ব প্রতিবেদক

আজ ৭ নভেম্বর। বাংলাদেশের জাতীয় ইতিহাসের একটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ দিন, বিপ্লব ও সংহতির দিন। ১৯৭৫ সালের এই দিনে সৈনিক-জনতা রাজপথে নেমে এসেছিল জাতীয় স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্র রক্ষার দৃঢ় অঙ্গীকার নিয়ে। আর এ কারণেই ৭ নভেম্বরের ঐতিহাসিক তৎপর্য যথেষ্ট। দিবসটিকে ঘিরে নানা কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি।
১৯৭৫ সালের এই দিনে সংঘটিত সিপাহী ও জনতার বিপ্লবের স্মরণে এই দিবসটি পালিত হয়। কর্নেল (অব.) আবু তাহেরের নেতৃত্বে সংঘটিত এই বিপ্লব জেনারেল খালেদ মোশাররফের ৩ দিনের সরকারের পতন ঘটায়। এই বিপ্লবের ফলশ্রæতিতে জেনারেল জিয়াউর রহমান বন্দীদশা থেকে মুক্তি পান এবং পরবর্তীতে ক্ষমতায় আসেন। কোন কোন সময়ে ৭ নভেম্বর বাংলাদেশে সরকারি ছুটি হিসেবে পালিত হয়েছে।
‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ উপলক্ষে একগুচ্ছ কর্মসূচি হাতে নিয়েছে বিএনপি। দলটির ভারপ্রাপ্ত দফতর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারাদেশে দলীয় কার্যালয়গুলোতে দলীয় পতাকা উত্তোলন, জিয়াউর রহমানের সমাধিতে পুস্পস্তবক অর্পণ ও ফাতেহা পাঠ ছাড়াও দিবসটি উপলক্ষে ভার্চুয়াল আলোচনা সভার অনুষ্ঠানের তথ্য জানানো হয়। একইভাবে জেলা, মহানগর ও উপজেলা বিএনপির উদ্যোগে নিজ নিজ সুবিধানুযায়ী আলোচনা সভাসহ অন্যান্য কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে বলে জানানো হয়।
নগর বিএনপির পক্ষ থেকে দিবসটিকে উদযাপন করতে কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। নগরীর ষোলশহর ২নং গেট সাবেক প্রেডেন্ট জিয়াউর রহমানের স্মৃতি বিজড়িত বিপ্লব উদ্যানে পুস্পস্তবক অর্পনের মাধ্যমে দিবসটি উদযাপন করবে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠন।
বিভিন্ন সূত্রের তথ্য মতে, কিছু সেনা কর্মকর্তার দ্বারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট নিহত হওয়ার পর খন্দকার মোশতাক আহমেদ নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করেন। কিন্তু খন্দকার মোশতাকের ক্ষমতার নেপথ্যে ছিলেন ১৫ অগাস্টের ঘটনার মূল নায়করা। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল খালেদ মোশাররফ (বীর উত্তম) ব্যাপারটি মেনে নিতে পারেননি। তিনি তার অনুগত সৈন্য বাহিনী নিয়ে ৩ নভেম্বর মোশতাক সরকারের বিরুদ্ধে একটি অভ্যুত্থান ঘটান। অভ্যুত্থানটি প্রাথমিকভাবে সফলও হয়। কিন্তু তার স্থায়িত্ব ছিল মাত্র ৩ দিন। জেনারেল খালেদ মোশাররফ রক্তপাতহীন অভ্যুত্থান ঘটাতে গিয়ে জেনারেল জিয়াউর রহমানকে তার নিজ বাসভবনে গৃহবন্দী করেন। কর্নেল (অব.) আবু তাহের সে সময় নারায়ণগঞ্জ অবস্থান করছিলেন। কর্নেল তাহের ছিলেন জিয়াউর রহমানের একজন বিশেষ শুভাকাংখী। তিনি সমাজতন্ত্রে বিশ্বাসী ছিলেন। সৈনিক-অফিসার বৈষম্য তার পছন্দ ছিল না। তার এই নীতির জন্য তাহের সেনাবাহিনীর সাধারণ সৈনিকদের মাঝেও দারুণ জনপ্রিয় ছিলেন। কর্নেল তাহের বিশ্বাস করতেন জিয়াও তারই আদর্শের লোক। জিয়া তার বাসভবনে বন্দী হয়ে থাকেন। খালেদ মোশারফের নির্দেশে তাকে বন্দী করে রাখেন তরুণ ক্যাপ্টেন হাফিজুল্লাহ। জিয়ার বাসার টেলিফোন সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। কিন্তু ক্যাপ্টেন হাফিজুল্লাহ একটি ভুল করেন। তিনি ভুলে যান বেডরুমেও একটি টেলিফোন আছে। জিয়া কৌশলে বেডরুম থেকে ফোন করেন তাহেরকে। খুব সংক্ষেপে বলেন ‘সেভ মাই লাইফ’। তাহের জিয়ার আহবানে সড়া দেন। তিনি ঢাকাতে তার অনুগত ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সিপাহীদের পাল্টা প্রতিরোধ গড়ার নির্দেশ দিয়ে নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকা রওনা হন, এ সময় তার সফর সঙ্গী ছিল শত শত জাসদ কর্মী। কর্নেল তাহেরের এই পাল্টা অভ্যুত্থান সফল হয় ৭ নভেম্বর। কর্নেল তাহের, জিয়াউর রহমানকে বন্দী দশা থেকে মুক্ত করে নিয়ে আসেন।