বিপ্লব এখনও শেষ হয়নি সতর্ক থাকতে হবে

2

চবি প্রতিনিধি

‘বৈষম্যহীন রাষ্ট্র ভাবনা’ শীর্ষক নাগরিক সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ছাত্র-শিক্ষক, রাজনীতিবিদ ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধিদের নিয়ে রাষ্ট্র সংস্কার ও মেরামতের মাধ্যমে নতুন এক বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নে আয়োজিত হয় এ অনুষ্ঠান। গতকাল শনিবার নগরীর জিইসিতে এক রেস্টুরেন্টে সমাজ ও রাষ্ট্রচিন্তা কেন্দ্র’র (সিএসপিটি) উদ্যোগে এ সংলাপ হয়। সিএসপিটি’র পরিচালক অধ্যাপক ড. এনায়েত উল্যা পাটওয়ারীর সভাপতিত্বে ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক ড. ফুয়াদ হাসের সঞ্চালনায় বিকেল ৩ টায় শুরু হয় অনুষ্ঠান।
এতে অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. আবুল কালাম আজাদ বলেন, আগস্ট বিপ্লবের নায়ক যেমন ছাত্ররা, তেমনি আমরাও। বিপ্লব এখনও শেষ হয়নি আমাদেরকে সতর্ক থাকতে হবে, নইলে তারা আবার আমাদের ওপর চেপে বসবে। আমাদেরকে সংবিধান এবং নিয়মের মধ্যে থেকে সব কাজ করতে হবে।
মানবাধিকার ও গণতন্ত্র বিষয়ে চবি আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিন বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছরে আমরা উন্নয়নের অনেক গল্প করেছি। মানবাধিকারের গুরুত্ব দেইনি। ২০০৯ সালের পর থেকে যে হারে বিচারবহির্ভূত গুম ও খুন হয়েছে, তা অবর্ণনীয়। সরকার র‌্যাবকে দিয়ে এসব কাজ করেছে। র‌্যাব নিয়ে আলোচনা শুরু হলে পুলিশ ও বিজিবি দিয়ে এসব গুম খুন জারি রাখা হয়। আমাদের গণতন্ত্রকে শেষ করা হয়ছে। আমরা দেখেছি কিভাবে আবু সাইদকে হত্যা করা হয়েছে। আমরা অধিকার আদায়ের জন্য ৩ বার স্বাধীন হয়েছি। ২৪ এর স্বাধীনতা হচ্ছে গণতন্ত্র, মানবাধিকার, ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করার স্বাধীনতা। এ রাষ্ট্রের বৈষম্য দূর করতে হলে সবার আগে মানবিকতার নিশ্চিত করতে হবে।
শিক্ষানীতি নিয়ে চবির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. শহিদুল হক বলেন, আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় রন্ধ্রে রন্ধ্রে সমস্যা। ১১-১২ বছরে যৌনশিক্ষার অবাধ জানাশুনার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিবর্তনবাদ, ট্রানজিন্ডার, এখানে সংযোজন করা হয়। এছাড়া ধর্ম শিক্ষাকে উপেক্ষা করা হয়েছে সব সময়। প্রস্তাবনা, কলাম, বক্তৃতার মাধ্যমে শিক্ষাব্যবস্থার ত্রæটি তুলে ধরতে হবে। দেশের বৈশ্বিক শক্তির প্রভাব যাতে বৃদ্ধি না পায় সে বিষয়ে নিয়মিত লেখালেখি করতে হবে।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক রাসেল আহমেদ বলেন, দেশের সকল স্থান থেকে দুর্নীতিরোধ করতে পারলেই আমরা একটি সুন্দর দেশ গড়ে তুলতে পারবো। বাংলাদেশের সব দল, মতের সকলকে আহŸান করবো আপনারা দেশ সংস্কার করার জন্য যে সময়টুকু প্রয়োজন তা আমাদের এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে দিবেন।
কেন্দ্রীয় সহ-সমন্বয়ক খান তালাত মাহমুদ রাফি বলেন, আমাদের বিপ্লব কিন্তু শেষ হয়নি। দেশের সব স্তর থেকে স্বৈরাচারের দোসরদের সর্বশেষ বিন্দুটিকে উপড়ে না ফেলা পর্যন্ত আমাদের বিপ্লব চলমান থাকবে। দেশের সর্বস্তরের জনগণ এক হয়ে কাজ করলে দেশের মধ্য থেকে অনিয়ম দুর্নীতির শিকড় উপড়ে ফেলা সম্ভব হবে।
চবি সমম্বয়ক মোহাম্মদ আলী বলেন, এতদিন যারা বিচার বহির্ভূতভাবে নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে তাদের বিচার আমরা সম্পন্ন করব। এদেশের বুদ্ধিজীবী ও সচেতন মহল যেসব পরামর্শ আমাদের দিবেন তার উপর পুঁজি করে আমরা সামনে এগিয়ে যাব।
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক ড. এনায়েত উল্যা পাটওয়ারী বলেন, নিজের নেতাদের কাছ থেকে সুরক্ষা পাওয়ার অধিকার আছে সব নাগরিকের এবং এটাও জনগণের মৌলিক অধিকার। আমাদের দেশের কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা একাকি কোনো দলের বা গোষ্ঠীর পক্ষে সম্ভব না। এজন্য সকলকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। যারা একসঙ্গে কাজ করবে তাদের সামনেই রয়েছে সুন্দর ভবিষ্যৎ।
সংলাপে অর্থনৈতিক সংকট ও বৈষম্য নিয়ে বক্তব্য রাখেন চবি অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম, উচ্চশিক্ষা নিয়ে অধ্যাপক রিজওয়ানুল হক এবং সরকার অফিস ও নাগরিক সেবা নিয়ে বক্তব্য রাখেন লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ড. মমতাজ উদ্দিন আহমেদ।
প্যানেল আলোচক ছিলেন লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ড. আমীর নসরুল্লাহ, মার্কেটিং বিভাগের ড. মো. ফুয়াদ হাসান, চবি লোক প্রশাসন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. মমতাজ উদ্দিন এবং দর্শন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. মোজাম্মেল হক। এছাড়া বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক ও শিক্ষার্থীরাও এতে বক্তব্য রাখেন।