বিপর্যস্ত কক্সবাজার, পাহাড়ধসে দুই পরিবারের ৬ জনের মৃত্যু

5

পূর্বদেশ ডেস্ক

ভাদ্রের শেষ সময়ে কক্সবাজারে ২৪ ঘণ্টায় ৫০১ মিলিমিটার বৃষ্টি ঝরেছে, যা দুই দশকের মধ্যে দেশে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত। এই অতি ভারি বৃষ্টির মধ্যে পাহাড়ধস কেড়েছে ছয়জনের প্রাণ। ডুবেছে পর্যটন নগরীর হোটেল-মোটেল; পানিবন্দি হয়ে পড়েছে জেলার প্রায় একশ গ্রাম।
আবহাওয়াবিদ শাহিনুল ইসলাম বলেন, বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টা থেকে শুক্রবার বিকাল ৩টা পর্যন্ত ৫০১ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে কক্সবাজারে। এর আগে ২০০১ সালের ১৪ জুন সর্বোচ্চ ৫৯০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছিল স›দ্বীপে। সেই হিসাবে দুই দশকের মধ্যে কক্সবাজারে শুক্রবার সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছে। আর গত বছরের ৬ অক্টোবর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪৭৬ মিলিমিটার বৃষ্টি ঝড়ে কিশোরগঞ্জের নিকলীতে। খবর বিডিনিউজের
গতকাল শুক্রবার সকালে আবহাওয়ার এক সতর্কবার্তায় বঙ্গোপসাগরে সুস্পষ্ট লঘুচাপ তৈরি হওয়ার কথা জানিয়েছিল আবহাওয়া অফিস। সেটি বিকাল ৩টায় নিম্নচাপে পরিণত হওয়ার কথা জানান আবহাওয়াবিদ কাজী জেবুন্নেসা। এর প্রভাবেই বেশি বৃষ্টি হচ্ছে। কালকে থেকে বৃষ্টিপাত কমে যাবে।
এদিকে অতি ভারি বৃষ্টিতে কক্সবাজার শহরের ৯০ শতাংশ এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। প্রধান সড়কসহ শহরের ৫০টি উপসড়ক বৃষ্টির পানিতে তলিয়েছে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পানি প্রবেশ করে নষ্ট হয়েছে মালামাল; বসতবাড়িতে পানি প্রবেশ করায় সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছেন বাসিন্দারা।
পর্যটন জোন কলাতলীর সব সড়ক, সৈকত সংলগ্ন এলাকা আর বাজার ডুবে আছে পানিতে। কলাতলী সড়কের দুই পাশের পাঁচ শতাধিক হোটেলে যাতায়াতের ২০টি উপসড়কও ডুবেছে। তাতে করে কয়েক হাজার পর্যটক হোটেল কক্ষই বন্দি হয়ে পড়েছেন।
কক্সবাজার হোটেল মোটেল গেস্টহাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, ভারি বর্ষণে হোটেল-মোটেল জোন এখন পানিতে সয়লাব। কলাতলী সড়ক, সকল উপ সড়ক, সৈকত সংলগ্ন ছাতা মাকের্ট, হোটেল লাবণী থেকে সুগন্ধা এলাকা এখন পানি আর পানি।
শহরের প্রধান সড়কের বাজারঘাটা, বড়বাজার, মাছবাজার, এন্ডারসন সড়ক, টেকপাড়া, পেশকারপাড়া, বার্মিজ মার্কেট এলাকা, বৌদ্ধমন্দির সড়ক, গোলদিঘিরপাড়, তারাবনিয়াছড়া, রুমালিয়ারছড়া, বাঁচা মিয়ার ঘোনা, পাহাড়তলী, সমিতিপাড়া, কুতুবদিয়াপাড়া, ফদনারডেইল, নুনিয়াছড়া, বৈদ্যঘোনা, ঘোনারপাড়া, বাদশাঘোনা, খাজা মঞ্জিল, লাইটহাউস, কলাতলী, কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল, লারপাড়া এলাকা বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে। এসব এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা অন্তত ৫ লাখ।
কক্সবাজার পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আকতার কামাল বলেন, ভারি বর্ষণ অব্যাহত থাকলে এই ওয়ার্ডের ১০ হাজার ঘরবাড়ি ডুবে যাবে। এই ওয়ার্ডে ৮০ হাজার শ্রমজীবী মানুষের বসবাস।
৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ওসমা সরওয়ার টিপু জানিয়েছেন, পাহাড়ি ঢলের পানিতে পাহাড়তলীর তিনটি সড়ক ডুবে কয়েকশ ঘরবাড়িতে পানি ঢুকে পড়েছে। বিধ্বস্ত হয়েছে তিনটি সেতু। তাতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।
এদিকে ভারি বৃষ্টিতে টেকনাফ ও উখিয়ার অন্তত ৮০টি গ্রাম পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এর মধ্যে টেকনাফের ৬০টি গ্রামের মানুষ পানিবন্দি রয়েছি। টেকনাফ সদর, হোয়াইক্যং, হ্নীলা, বাহারছাড়া ও সাবরাং ইউনিয়নে এসব গ্রামের অবস্থান। উখিয়ার রাজাপালং, জালিয়াপালং, হলদিয়াপালং ও পালংখালী ইউনিয়নের আর ২০টি গ্রাম প্লাবিত হওয়ার খবর দিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।

পাহাড়ধসে প্রাণহানি : টানা বর্ষণে বৃহস্পতিবার গভীররাতে কক্সবাজার সদর উপজেলা এবং উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পাহাড়ধসের ঘটনায় ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলার ঝিলংজা ইউনিয়নের দক্ষিণ ডিককূল এলাকায় পাহাড়ধসে মারা গেছে একই পরিবারের তিনজন। আর উখিয়া উপজেলার ১৪ নম্বর হাকিমপাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পাহাড়ধসেও একই পরিবারের তিনজন প্রাণ হারিয়েছেন। মৃতরা হলেন কক্সবাজার সদরের দক্ষিণ ডিককূল এলাকার মিজানুর রহমানের স্ত্রী আঁখি মনি (২১) এবং সন্তান মিহা জান্নাত নাঈমা (৫) ও লতিফা ইসলাম (১)। আর উখিয়ায় মারা যাওয়া ব্যক্তিরা হলেন হাকিমপাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ই-২ বøকের কবির আহমেদের ছেলে আব্দুর রহিম, আব্দুল হাফেজ ও আব্দুল ওয়াহেদ।
ঝিলংজা ইউপির ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মিজানুর রহমান সিকদার বলেন, বৃহস্পতিবার রাত ২টার দিকে পাহাড়ধসের মাটিতে চাপা পড়ে মিজানুরের বাড়ি। তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিবেশীরা মিজানুরকে জীবিত উদ্ধার করতে সক্ষম হন। পরে মাটি সরিয়ে অপর তিনজনকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করে। কক্সবাজার সদরের ইউএনও নিলুফা ইয়াসমিন চৌধুরী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) বিভীষণ কান্তি দাশ বলেন, ঝিলংজায় পাহাড়ধসে নিহত তিনজনের পরিবারকে ৭৫ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা দিয়েছে জেলা প্রশাসন। পাহাড়ের ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থান থেকে লোকজনকে সরিয়ে নেয়ার জন্য ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে কাজ চলছে। পানিবন্দি এলাকার তালিকা তৈরি, ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার কাজ করা হচ্ছে।