২০০৩ সালে চট্টগ্রাম বন্দরে এসেছিল বিপজ্জনক পণ্য ‘থিনার’। সেই চালান খালাস হয়নি ২০ বছরেও। রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে পণ্যের গুণগতমান নষ্ট হয় অনেক আগেই।
কনটেইনার পড়েছিল এনসিটি সিএফএসের পেছনে সীমানা দেয়াল সংলগ্ন এলাকায়। এভাবে ২০০৯ সালে এসেছিল অ্যাসিটিক অ্যাসিড, ২০১২ সালে এসেছিল গিøসারিন, ২০১৩ সালে এসেছিল কেমিক্যাল, ২০১৪ সালে নাইট্রিক অ্যাসিড, ২০১৬ সালে সালফিউরিক অ্যাসিড, ২০১৯ সালে অ্যাসিটিক অ্যাসিড। মামলা, জরিমানা, মিথ্যা ঘোষণা, দেশে পণ্যের দাম কমে লোকসানের আশঙ্কাসহ নানা কারণে এসব ১২ কনটেইনার পণ্যচালান খালাস নেননি আমদানিকারক।
একদিকে কনটেইনারগুলো বন্দরের মূল্যবান জায়গা দখল করেছিল অন্যদিকে ঝুঁকি বাড়াচ্ছিল বিস্ফোরণের। সর্বশেষ গত ২৭ অক্টোবর অতিদাহ্য সোডিয়াম নাইট্রোক্লোরাইড ভর্তি ৪টি ট্যাংক কনটেনার নিলামের মাধ্যমে ডেলিভারি দেওয়া হয়েছে। বাকি ৯টি কনটেইনার বিপজ্জনক পণ্য শ্রীলংকার কলম্বো বন্দরের মাধ্যমে ধ্বংস করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। খবর বাংলানিউজের
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক। তিনি বলেন, বন্দরে বিপজ্জনক কনটেইনার সংরক্ষণের জন্য নির্ধারিত ইয়ার্ডে ৪টি অতিদাহ্য সোডিয়াম ক্লোরাইড পরিবাহী ট্যাংক কনটেইনার দীর্ঘকাল অনিষ্পন্ন অবস্থায় ছিল। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার নির্দেশে এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও শুল্ক কর্তৃপক্ষের সার্বিক সহযোগিতায় কনটেইনারগুলো নিলামের মাধ্যমে ডেলিভারি দেওয়া হয়েছে। এতে চট্টগ্রাম বন্দর বিস্ফোরণের ঝুঁকি থেকে শঙ্কামুক্ত হয়েছে। বাকি ৯টি বিপজ্জনক পণ্যবাহী কনটেইনার শ্রীলংকার কলম্বো বন্দরের মাধ্যমে ধ্বংস করার প্রক্রিয়া চলছে।
সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ বিদেশ থেকে আমদানি করা পণ্য ৩০ দিনের মধ্যে খালাস না নিলে ওই চালান নিলাম বা ধ্বংসের জন্য কাস্টম হাউসের কাছে বাইপেপারে হস্তান্তর করে। নিলাম বা ধ্বংস প্রক্রিয়া জটিল ও সময়সাপেক্ষ হওয়ায় বছরের পর বছর এসব কনটেইনার বন্দরের জিম্মায় থাকে। ২০১৮ সালের ২৬ অক্টোবর বন্দরের জিসিবি ইয়ার্ডে ৪০ ফুট দীর্ঘ দুইটি কনটেইনারে ৭১২ প্যাকেজ ব্যাটারির পার্টস খালাস করার সময় একটি ছোট ড্রামে আগুন ধরে যায়। এ সময় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
২০২০ সালের ১৫ জুলাই বন্দরের ৩ নম্বর শেডে অগ্নিকাÐের ঘটনা ঘটে। বন্দরের নিজস্ব অগ্নিনির্বাপণকারী গাড়ি ছাড়াও ফায়ার সার্ভিসের আগ্রাবাদ, বন্দর ও ইপিজেড স্টেশন থেকে ১২টি গাড়ি পাঠানো হয় আগুন নেভাতে। নিলামযোগ্য কেমিক্যাল, ফেব্রিক্সসহ বিভিন্ন ধরনের দাহ্য পণ্য থাকায় আগুন নিয়ন্ত্রণে বেগ পেতে হয় ফায়ার সার্ভিসকে। ওই বছরের ৯ আগস্ট ‘পি’ শেডে থাকা বিদেশ থেকে আমদানি করা কেমিক্যাল ও বিপজ্জনক (হ্যাজারাডাস) পণ্যের তালিকা ও সুপারিশ দেওয়ার লক্ষ্যে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্যকে (হারবার ও মেরিন) প্রধান করে ৬ সদস্যের কমিটি গঠন করে। কমিটি ‘পি’ শেডে রাখা কেমিক্যাল ও বিপজ্জনক পণ্যের তালিকা, কত দিন ধরে পণ্যগুলো আছে তার হিসাব, নিলাম বা ধ্বংসযোগ্য পণ্যের তালিকা তৈরি ও সুপারিশ জমা দেয়। ওই বছরের ২ ডিসেম্বর বন্দরের প্রি-কেমিক্যাল শেডে এক যুগ ধরে পড়ে থাকা ৪৯ টন কেমিক্যাল ধ্বংসের জন্য সিলেটের সুনামগঞ্জের ছাতকে লাফার্জ হোলসিম বাংলাদেশ লিমিটেডের কারখানায় নিয়ে যাওয়া হয়। এবার ৯টি কনটেইনার বিপজ্জনক পণ্য শ্রীলংকার কলম্বো বন্দরের মাধ্যমে ধ্বংস করার উদ্যোগ নেওয়া হলো।
সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী বন্দরে নিলামযোগ্য ৭৪৪ টন ওজনের ৩৭২ ইউনিট গাড়ি, ২০ ফুট দৈর্ঘ্যরে ২ হাজার ৮৪৫টি কনটেইনারে ৪৫ হাজার ৫২০ টন, ৪০ ফুটের ৩ হাজার ৫৬০ কনটেইনারে ৭১ হাজার ২০০ টন, ৭৫ হাজার ৫৪৫ প্যাকেজে ৩ হাজার ৫৬০ টন এলসিএল কার্গো এবং ৬ হাজার ৮৪০ প্যাকেজে ৫ হাজার ৪৪৩ টন বাল্ক কার্গো রয়েছে।
বন্দরের পি শেডে গত ৩১ আগস্ট পর্যন্ত কেমিক্যাল ও বিপজ্জনক পণ্য ছিল ১ হাজার ১১৫ প্যাকেজে ৩৩৪ টন। এর মধ্যে পুরাতন নিলাম ও ধ্বংসযোগ্য কেমিক্যাল ও বিপজ্জনক পণ্য ছিল ১৬৫ প্যাকেজে ৫৯ টন। এ ছাড়া বন্দরের বিভিন্ন ইয়ার্ডে ২০ ফুট হিসেবে ২৮৬ টিইইউস (২২৮ বক্স) পুরাতন বিপজ্জনক পণ্যবাহী কনটেইনার নিলাম বা ধ্বংসের অপেক্ষায় রয়েছে। যার মধ্যে ৪৬ বক্সে ৪৮ টিইইউস কনটেইনার খুবই জরাজীর্ণ।