পূর্বদেশ ডেস্ক
বিদ্যুৎ দেওয়া বাবদ বাংলাদেশের কাছ থেকে পাওনা অর্থের পুরোটা আদায়ের ব্যাপারে আশাবাদী ভারতের আদানি পাওয়ার। কোম্পানির প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা দিলিপ ঝার বরাতে বার্তা সংস্থা রয়টার্স লিখেছে, বাংলাদেশ সামগ্রিক বকেয়া ‘অনেকটা’ কমিয়েছে; বাকি প্রায় ৯০ কোটি ডলারও পাওয়ার ব্যাপারে আদানি আত্মবিশ্বাসী।
বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহে ২০১৭ সালে চুক্তির পর থেকে পাওনা আদায়ে চাপ দিয়ে আসছে আদানি পাওয়ার। গত বছর বিদ্যুৎ সরবরাহ অর্ধেক কমিয়েও দিয়েছিল কোম্পানিটি। তবে দিলিপ ঝা বলছেন, এখন তারা সম্পূর্ণভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ করছেন। মাসিক বিলের সঙ্গে কিছু বকেয়া পরিশোধ হওয়ায় তারা এখন পুরোদমে বিদ্যুৎ দিচ্ছেন।
গত বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে আমরা সক্ষমতার পুরোটা সরবরাহ করছি। এখন আমরা যে অর্থ পাচ্ছি, তা মাসিক বিলের চেয়ে বেশি। আমরা আশাবাদী যে, কেবল চলতি মাসের বিলের সমান অর্থ নয়, এর সঙ্গে পুরনো বকেয়াও পরিশোধ করা হবে’।
আদানি পাওয়ার বলছে, প্রায় ২০০ কোটি ডলারের মধ্যে বাংলাদেশ ১২০ কোটি ডলার পরিশোধ করেছে। খবর বিডিনিউজের
ভারতীয় ধনকুবের গৌতম আদানির কোম্পানি আদানি পাওয়ার ঝাড়খÐের কয়লাভিত্তিক কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য ২০১৭ সালে বাংলাদেশের সঙ্গে একটি চুক্তি করে। ১৬০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার ওই কেন্দ্রের দু’টি ইউনিট থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ করছিল আদানি। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর প্রায় ৮৫ কোটি ডলারের বকেয়া আদায়ে গত বছরের ৩১ অক্টোবর বিদ্যুৎ সরবরাহ অর্ধেক করে দেয় আদানি পাওয়ার।
রয়টার্স জানায়, ১ নভেম্বর একটি ইউনিট বন্ধ করে দেওয়া হলে কেন্দ্রের সক্ষমতার ৪২ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছিল। পরে বাংলাদেশও আদানিকে অর্ধেক বিদ্যুতই সরবরাহ করতে বলে। এখন আদানির বিদ্যুতের পুরো সরবরাহ চাইছে বাংলাদেশ
তবে গ্রীষ্ম শুরুর আগে ঝাড়খন্ড কেন্দ্রের পুরো ১৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহে সম্প্রতি আদানি পাওয়ারকে অনুরোধ করে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি)। সেই অনুরোধে সাড়া দিয়ে সক্ষমতার পুরো বিদ্যুৎ দিতে আদানি রাজি হয়। দিল্লি ২০১৯ সালে এ বিদ্যুৎকেন্দ্রকে একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের অংশ ঘোষণা করে। সেই সুবাদে আয়কর এবং অন্যান্য শুল্কের ক্ষেত্রে ছাড় পাচ্ছে আদানি পাওয়ার।
রয়টার্স বলছে, আদানি যে কর সুবিধা ভারত সরকারের কাছ থেকে পেয়েছে, তা যেন বাংলাদেশের বিদ্যুতের দামের ক্ষেত্রে সমন্বয় করা হয়- পিডিবির এমন অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করে কোম্পানিটি। তা ছাড়া বিদ্যুতের মূল্যছাড় অব্যাহত রাখতে পিডিবির অনুরোধও প্রত্যাখ্যান করা হয়।
আদানি পাওয়ার গত বছরের মে মাস পর্যন্ত ওই মূল্যছাড় সুবিধা বাংলাদেশকে দিয়েছিল, যাতে বাংলাদেশের প্রায় ১৩ মিলিয়ন ডলার সাশ্রয় হয়। পিডিবির আরও কয়েকটি দাবি পূরণে রাজি হয়নি আদানি পাওয়ার।
গত ডিসেম্বরে আদানির একটি সূত্র দাবি করে, বাংলাদেশের কাছে তাদের পাওনা ৯০ কোটি ডলার। অন্যদিকে পিডিবি চেয়ারম্যান রেজাউল করিম তখন বলেছিলেন, তাদের বকেয়ার পরিমাণ প্রায় ৬৫ কোটি ডলার। বিদ্যুতের শুল্ক কীভাবে গণনা করা হচ্ছে তা নিয়েই দামের বিরোধ তৈরি হয়।