নিজস্ব প্রতিবেদক
কয়েক বছর ধরে ২নং গেইট এলাকায় ভিক্ষা করেন রহিমা বেগম। প্রতিবন্ধী ছেলেকে নিয়ে থাকেন ষোলশহর এলাকার বস্তিতে। প্রতিদিন ভিক্ষা করে যা পান তা দিয়ে কোনোমতে একবেলা খেতে পারেন। অনেক সময় সেটিও জুটে না। গতকাল রবিবার তাঁর জন্য ছিল ভিন্ন একটি দিন। পেট ভরে খেয়েছেন এবং যাওয়ার সময় পুরো সপ্তাহের খাবারও নিয়ে গেছেন।
একই টেবিলে ইফতার করেন ব্যবসায়ী আনিসুর রহমান। তার মতে, ধনী-গরীব সবাই একই টেবিলে কখনো বসা হয় না। সবার সাথে ইফতার করতে পেরে অন্যরকম শান্তি লাগছে। অন্যরকম অনুভূতি। এ ইফতারের আয়োজন করে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন।
আয়োজকরা জানান, সাম্য ও ভ্রাতৃত্বের আহবানে রমজানের মূল চেতনা ধনী-গরীব ভেদাভেদ দূর করে বৈষম্য ভাঙার প্রচেষ্টা এটি। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সার্বিক সহযোগিতায় এক টাকার ইফতার ও সেহরি চলবে পুরো রমজান মাসব্যাপী।
গতকাল রবিবার নগরীর ২নং গেইট বিপ্লব উদ্যানে সন্ধ্যায় এমন বৈষম্যহীন ইফতারের আয়োজন দেখা যায়। সকল শ্রেণি-বৈষম্য ভুলে কয়েকশ মানুষ একত্রিত হন এ আয়োজনে। ধনী-গরীব, এতিম, ফকির সবাই একই টেবিলে সেরেছেন ইফতার। প্রতিটি ইফতারের প্লেটে কলা, ছোলা, পেঁয়াজু, বেগুনী, খেজুর, ডিম, ফিরনিসহ আরো হরেক রকমের ইফতারি সাজানো ছিল।
এ আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। নিজ হাতে সবার মাঝে ইফতারি তুলে দেন তিনি। মাসব্যাপী এ আয়োজনের উদ্বোধনও করেন এসময়।
এক পর্যায়ে সিটি মেয়র বলেন, বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন সবসময় ভাল কাজ করে। সিটি কর্পোরেশন তাদের সব ভাল কাজের পাশে আছে ও ভবিষ্যতেও থাকবে। তিনি আশা করেন বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের মতো সমাজের অন্যান্য বিত্তবান মানুষেরাও যাতে ছিন্নমূল মানুষদের পাশে দাঁড়ায়।
বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের গভর্নিং বডির সদস্য জামাল উদ্দিন বলেন, সাম্য ও ভ্রাতৃত্বের আহবান নিয়ে প্রতি বছর পবিত্র রমজান মাস আমাদের সামনে হাজির হলেও ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য রয়ে যায়। তাই রোজা ভাঙার মুহুর্তে সেই বৈষম্যও ভাঙার প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে এই ধরনের আয়োজন আমরা করে থাকি।
তিনি আরো বলেন, সারাদেশে লক্ষাধিক ছিন্নমূল রোজাদারকে ইফতার ও সেহরি খাওয়াব আমরা। চট্টগ্রামে প্রতিদিন এক হাজার মানুষ বিনামূল্যে সেহরি ও ইফতার পাবেন বিপ্লব উদ্যান, সিআরবিসহ বিভিন্ন এলাকায়। আর এসব পাবেন নি¤œবিত্ত মানুষগুলো।
এ আয়োজনে মেয়রের একান্ত সচিব মারুফুল হক মারুফ, চট্টগ্রাম সৃজনশীল প্রকাশক পরিষদের সভাপতি সাহাবুদ্দিন বাবু, পাঁচলাইশ থানার ওসি মো. সোলেমানসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।