নিজস্ব প্রতিবেদক
শ্রীপঞ্চমীতে পলাশপ্রিয়া বিদ্যাদেবীর আরাধনা। শাস্ত্রমতে এদিন থেকেই ঋতু বসন্তের সূচনা। সরস্বতী পূজার উপকরণেই সে ইঙ্গিত স্পষ্ট। বাগ্দেবীর পুষ্পপাত্রে আবির, কুমকুমের পাশাপাশি পলাশ, আমের মুকুল বা যবের শিষের উপস্থিতি বাধ্যতামূলক।
বৈদিক যুগে মা সরস্বতীকে শস্যের দেবী হিসাবে পূজা করা হতো। তাই তাঁর পূজায় নির্দিষ্ট কিছু শস্য ও ফুলের ব্যবহারের রীতি সুপ্রাচীন কাল থেকেই চলে আসছে। কিন্তু বিধি বাম। প্রকৃতির খামখেয়ালিপনায় পূজায় শাস্ত্রসম্মত আয়োজন করতে গিয়ে শীতেও ঘাম ছুটেছে।
নিয়ম মেনে মাঘের শুক্লা পঞ্চমীতে বিদ্যাদেবীর আরাধনা হচ্ছে নগর-গ্রামে। শ্বেতশুভ্র কল্যাণময়ী বিদ্যাদেবীর বন্দনায় মুখর পড়ুয়ারা। শ্বেত-শুভ্র বসনা সরস্বতী দেবীর এক হাতে বেদ, অন্য হাতে বীণা। এজন্য তাকে বীণাপানিও বলা হয়। ঐশ্বর্যদায়িনী, বুদ্ধিদায়িনী, জ্ঞানদায়িনী, সিদ্ধিদায়িনী, মোক্ষদায়িনী এবং শক্তির আধার হিসেবেও সনাতন ধর্মাবলম্বীরা সরস্বতী দেবীর আরাধনা করেন। এ বছর ২ ফেব্রুয়ারি দুপুর ১২টা ৪৪ মিনিট থেকে পঞ্চমী তিথি শুরু হয়ে থাকবে আজ ৩ ফেব্রæয়ারি সকাল ১০টা ২৭ মিনিট পর্যন্ত। তাই অনেকে গতকালও মায়ের পূজা করেছেন।
নগর ও জেলার বিভিন্ন পূজামন্ডপ ছাড়াও স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেও সরস্বতী পূজার আয়োজন করা হয়েছে। মÐপে অনুষ্ঠানমালায় আছে পুষ্পাঞ্জলি প্রদান, প্রসাদ বিতরণ, ধর্মীয় আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, সন্ধ্যারতি, আলোকসজ্জা প্রভৃতি। এদিন দেবীর সামনে ‘হাতেখড়ি’ দিয়ে শিশুদের বিদ্যা চর্চার সূচনা হয় অনেক স্থানে। যদিও তা শাস্ত্রবিহিত নয়।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার শুভেচ্ছা : সরস্বতী পূজা উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। বিদ্যা ও সংগীতের দেবীর আরাধনা উৎসব শুরুর ক্ষণে পৃথক বাণীতে তারা শুভেচ্ছা জানান।
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বাণীতে অসা¤প্রদায়িক, কল্যাণকর ও উন্নত সমাজ গঠনে দেশের মানুষকে এগিয়ে আসার আহবান জানান। তিনি বলেন, ‘আবহমান কাল থেকে এ দেশের মানুষ পারস্পরিক স¤প্রীতি ও সহাবস্থানের মধ্য দিয়ে নিজ নিজ ধর্মীয় আচার, অনুষ্ঠান পালন করে আসছে। এ ঐতিহ্যকে সুসংহত রাখতে দেশবাসীকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে অবদান রাখতে হবে।’
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘বাংলাদেশ সা¤প্রদায়িক স¤প্রীতির দেশ। হাজার বছর ধরে এদেশে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল ধর্মের মানুষ মিলেমিশে একত্রে বসবাস করে আসছেন। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে এদেশ সকল মানুষের নিরাপদ আবাসভূমি।’ প্রধান উপদেষ্টা হিন্দু স¤প্রদায়ের সকলকে জ্ঞানার্জনে ব্রতী হয়ে দেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রায় আত্মনিয়োগের আহবান জানান। তিনি বলেন, ‘দেবী সরস্বতী সত্য, ন্যায় ও জ্ঞানালোকের প্রতীক। বিদ্যা, বাণী ও সুরের অধিষ্ঠাত্রী। আমি বাংলাদেশের সকল নাগরিকের শান্তি, কল্যাণ ও সমৃদ্ধি কামনা করি।’