বিদেশেও যাচ্ছে বিলাতি ধনিয়া পাতা

3

রাঙ্গুনিয়া প্রতিনিধি

রাঙ্গুনিয়ায় এবারে বিলাতি ধনিয়া পাতা ব্যাপক সফলতা। কৃষকের মুখে হাসির ঝিলিক। উপজেলায় বিলাতি ধনিয়া পাতার চাষ বেড়েই চলেছে। প্রায় জমিতে কৃষকের চাষ করা বিলাতি ধনিয়া পাতার বাম্পার ফলন হয়েছে। বাজারে দাম পাচ্ছেন কৃষকরা । চাষে যে টাকা খরচ হয়েছে ধনিয়া পাতা বিক্রি করে তা থেকে ৩ গুণ লাভের মুখ দেখছেন তারা। বাজারে এখন একমাত্র বিলাতি ধনিয়া পাতা পাওয়া যাচ্ছে। সেজন্য এর কদর বেশি।
রাঙ্গুনিয়ায় বিলাতি ধনিয়া পাতার বাম্পার ফলন হয়েছে। উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় কৃষকরা বিলাতি ধনিয়াপাতা চাষ করেছেন। এবারে চাষে আবাহাওয়া পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ায় কৃষকরা চাষ নিয়ে সন্তেুাষ প্রকাশ করেন। বাজারে আরো ৫ মাস আগে আসছে বিলাতি ধনিয়া পাতা। এমনিতে বর্তমানে বাজারে বিলাতি ধনিয়া পাতা সব সময় ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। যে অর্থ পরিশ্রম করে এ চাষ করা হয়েছে তা যদি উঠে এসে আরো ৩ গুণ লাভের মুখ দেখেছে কৃষকরা।
দাম পাওয়ায় রাঙ্গুনিয়ায় ৩ শতাধিক কৃষক এ চাষের প্রতি আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে। বিলাতি ধনিয়া পাতার বাম্পার ফলন দেশ ছাড়িয়ে বিদেশে যাচ্ছে । দেশের চেয়ে বিদেশে এ ধনে পাতার চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে।
রাঙ্গুনিয়া কৃষি অফিস থেকে জানা যায়, ৪৩ হেক্টর জমিতে বিলাতি ধনিয়া পাতার চাষ হয়েছে। উপজেলার ইসলামপুর ৩০ হেক্টর ও কোদালা ইউনিয়ন ও পোমরা ও পারুয়া আরো ১৩ হেক্টর জমিতে বিলাতি ধনিয়া পাতার চাষ হযেছে। একখানি জমিতে বিলাতি ধনিয়া পাতার চাষ করতে প্রায় ৩ লাখ টাকা খরচ হয়। আর উৎপাদিত ধনিয়া পাতা বিক্রি করে ৮ লাখ টাকা মতো আয় হয়। চাষ করা বিলাতি ধনিয়া পাতা নভেম্বর ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাস ছাড়া বাকি ৯ মাস ক্ষেত থেকে বিক্রি করা যায়। কম বিনিয়োগে অধিক লাভ হওয়ায় দিন দিন এ চাষ কৃষকের আগ্রহ বাড়ছে। রোগ বালায়ে তেমন আশংকা থাকেনা।
এবারে বিলাতি ধনিয়া পাতার বাম্পার ফলনও হয়েছে। এ পাতা চাষ করে আর্থিকভাবে লাভ অর্জন করেছেন অনেক কৃষি পরিবার। বাজারে পাহাড়ে উৎপাদিত বিলাতি ধনিয়ার চাহিদা অনেক। অধিক ফলনের কারণে ক্রেতাদের জন্য বিলাতি ধনিয়ার দাম যেমন সহনশীল, তেমনি চাষীরাও ভালো দাম পাচ্ছেন। উচ্চ বাজারমূল্যের অধিক আয়ের কারণে রাঙ্গুনিয়ায় তাই বাড়ছে বিলাতি ধনিয়া পাতার চাষ। বিলাতি ধনিয়া পাতা এখান থেকে চট্টগ্রাম ছাড়িয়ে বিদেশে ও বিভিন্ন জেলায় পাইকারি সবজি ব্যবসায়ীরা পরিবহন করে নিয়ে যায়। এখানকার বিলাতি ধনিয়া পাতার কদর অন্যান্য স্থানের চেয়ে অনেক বেশি। সুগন্ধি ও স্বাদে মানে অনেক ভালো।
ইসলামপুর ইউনিয়নের বেতছড়ি গ্রামের কৃষক বিশু মোহন তঞ্চঙ্গ্যা বলেন এবার ১৫ শতাংশ জমিতে বিলাতি ধনিয়ার আবাদ করি। প্রায় ২ লাখ টাকা খরচ হয়। এখন বাজারে ধনিয়া পাতা ২৪০ টাকা থেকে ২৬০ টাকা। প্রতিদিন বাজারে ধনিয়া পাতা বিক্রি করে আসছি। এ পর্যন্ত প্রায় ৪ লাখ টাকার ধনিয়া পাতা বিক্রি করেছি। আরো ২মাস বিক্রি করতে পারবো।
একই গ্রামের সিআইজি কৃষক সমিতির সভাপতি আলাউদ্দিন বলেন ঋণ নিয়ে আধা কানি জমিতে বিলাতি ধনিয়া চাষ করি। ধনে পাতার ভালো ফলন হয়েছে। বাজারে ভালো দাম পাচ্ছি। এবারে বিলাতি ধনিয়া পাতায় পোকা মাকড় আক্রমণ নেই। রোগ বালাইও হয় নাই।
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা প্রিয়তোষ বসাক জানান ইসলামপুরের প্রায় ১২০ জন কৃষক এবার বিলাতি ধনিয়ার আবাদ করেছে। নিয়মিত মাঠ পরিদর্শন করে পরামর্শ প্রদান করি। ফসলের অবস্থাও ভালো দেখা যাচ্ছে। পাহাড়ের পাদদেশে উৎপাদিত এ বিলাতি ধনিয়া পাতার গন্ধ কড়া। পাতা চ্যাপ্টা, সবুজ ও ভারি। দু’পাশে খাঁজকাটা ও দেখতে খুবই আকর্ষণীয়।
সাধারণত এ গাছের পাতা লম্বায় ১৫ থেকে ২০ সেন্টিমিটার ও চ্যাপ্টায় ২ থেকে ৩ সেন্টিমিটার হয়ে থাকে। এক বার বীজ বুনলে বেঁচে থাকে কয়েক বছর। তাই বার বার ফলন সংগ্রহ করা যায়। গাছগুলো পর্যাপ্ত বড় হলে কৃষকরা ছোট ছোট আঁটি বেঁধে রাজারজাত করে। পাহাড়ে বিলাতি ধনিয়া পাতার চাহিদা অনেক। তাই লাভবান হচ্ছেন বিলাতি ধনিয়া পাতার চাষীরা। কম খরচ, অধিক ফলন, বেশি লাভ। ফলে বিলাতি ধনিয়া চাষে আগ্রহ বেড়েছে অন্যান্য কৃষকদেরর।
জানা যায়, একটা সময় পাহাড়ে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের মধ্যে শুধুমাত্র তঞ্চঙ্গ্যা সম্প্রদায় বিলাতি ধনিয়া পাতার চাষ করত। কিন্তু কালের বিবর্তনে আগ্রহ বেড়েছে অন্যান্য সম্প্রদায়ের কৃষকের মধ্যেও। সব মৌসুমে পাওয়া যাচ্ছে বিলাতি ধনিয়া পাতা।
ইসলামপুর ইউনিয়নে চাষি খুরশিদ আলম জানান, অল্প পুঁজি, বেশি লাভ। বিভিন্ন সবজির পাশাপাশি চাষ করা যায় এ বিলাতি ধনিয়া পাতা। সহজ পদ্ধতিতে চাষ করা সম্ভব। তাই কৃষকদের মধ্যে এর চাহিদা বাড়ছে।
লিচুবাগানের সবজি বিক্রেতা নজরুল ইসলাম জানান, রাঙ্গুনিয়া উৎপাদিত বিলাতি ধনে পাতার চাহিদা বেড়েই চলেছে। আমরা পাইকারিভাবে রাঙ্গুনিয়ার ইসলামপুরের পাইকারিসবজি বিক্রেতাদের থেকে কেজি ২২০ টাকায় কিনে ২৪০ টাকায় বিক্রি করি। দেশি ধনিয়া পাতার সব সময় না থাকায় বিলাতি ধনিয়া পাতার চাহিদা প্রচুর রয়েছে। এবারে দাম অনেক চড়া।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইমরুল কাযেস বলেন, এবারে রাঙ্গুনিয়ার ৪টি ইউনিয়নে ৪৩ হেক্টর জমিতে বিলাতী ধনিয়া পাতার চাষ হযেছে। এবছর বিভিন্ন সবজি চাষিরা বিলাতি ধনিয়া পাতার চাষ করেছে। ফলন ভালো হওয়ায় কৃষক ভালো দাম পাচ্ছে। একটু পরিশ্রম করলে বিলাতি ধনিয়া পাতা অন্যান্য চাষের চেয়ে অধিক লাভ। পুঁজি কম লাগে। রাঙ্গুনিয়া ব্যাপক ভাবে বিলাতি ধনিয়াপাতা চাষ হয় সেজন্য আমরা কুষকদের উদ্বুদ্ধ বরছি। কৃষকরা যাতে সঠিকভাবে ধনিয়া পাতা চাষ করতে পারে আমরা সর্বাত্মক সহযোগিতা করছি।