নিজস্ব প্রতিবেদক
নগরীতে নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে বন্দর ভবনের দিকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে শ্রমিক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদ (স্কপ)। গতকাল বুধবার সকালে আগ্রাবাদ মোড়ে অনুষ্ঠিত সমাবেশ থেকে বিদেশি প্রতিষ্ঠানের কাছে বন্দরের স্থাপনা হস্তান্তর বন্ধের দাবিতে এ কর্মসূচি পালিত হয়। তবে পুলিশের বাধার মুখে মিছিলটি বন্দর ভবন পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেনি।
বিক্ষোভ-সমাবেশে বক্তারা সরকারের সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করে বলেন, দেশের কৌশলগত স্থাপনা কোনোভাবেই বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়া যাবে না। সমাবেশ শেষে স্কপের পক্ষ থেকে আগামী ১ নভেম্বর চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে অনশন কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়।
সকাল সাড়ে ১০টার পর থেকেই নগরীর বিভিন্ন স্থান থেকে খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে আগ্রাবাদের বাদামতলী মোড়ে জড়ো হন শ্রমিকরা। সেখানে স্কপ চট্টগ্রাম জেলা শাখার উদ্যোগে আয়োজিত সমাবেশে ‘চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশিদের দেব না’, ‘আমার মাটি আমার মা, বিদেশিদের হবে না’এসব স্লোগানে পুরো এলাকা মুখর হয়ে ওঠে।
সমাবেশে ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র (টিইউসি) চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি তপন দত্ত বলেন, বন্দর ১৯ কোটি মানুষের সম্পদ। এখানে শ্রমিকদের রক্ত, ঘাম ও পরিশ্রমের ইতিহাস জড়িয়ে আছে। এখন সেটি বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে, এটা মেনে নেওয়া যায় না। একদিকে কর্মকর্তাদের লাখ টাকার বেতন বাড়ানো হচ্ছে, অন্যদিকে শ্রমিকদের পেটে লাথি মারা হচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা আগামী ১ নভেম্বর সকাল ১০টায় চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে অনশনে বসব। শ্রমিক-কর্মচারীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষকেও অনুরোধ করছি, এই আন্দোলনে অংশ নিতে।
জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক কাজী শেখ নুরুল্লাহ বাহার বলেন, বিগত স্বৈরাচারী সরকারের সময়ে নেওয়া একতরফা সিদ্ধান্ত বর্তমান সরকার বহাল রেখেছে, এটি অত্যন্ত দুঃখজনক। দেশের বন্দর বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়ার ষড়যন্ত্র কোনোভাবেই সফল হতে দেওয়া হবে না। শ্রমিকদের দাবি মানা না হলে হরতালসহ কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।
সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি এসকে খোদা তোতন, ট্রেড ইউনিয়ন সংঘের সভাপতি খোরশেদুল ইসলাম, বিএলএফের সাংগঠনিক সম্পাদক রবিউল হক শিমুল, বিএফটিইউসির সভাপতি কাজী আনোয়ারুল হক হুনি, বন্দর জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের নেতা ইব্রাহিম খোকন এবং ডক ইয়ার্ড শ্রমিক দলের নেতা তসলিম হোসেন সেলিম।
সমাবেশ শেষে আগ্রাবাদ থেকে বন্দর ভবনের দিকে মিছিল শুরু হলে বারিক বিল্ডিং মোড়ের আগে বিদ্যুৎ ভবনের সামনে পুলিশ তাদের আটকে দেয়। এ সময় পুলিশের সঙ্গে সংক্ষিপ্ত বাগ্বিতন্ডা হলেও স্কপ নেতারা শ্রমিকদের শান্ত রাখেন এবং পুনরায় আগ্রাবাদে ফিরে যান।
চট্টগ্রাম ডবলমুরিং থানার ওসি বাবুল আজাদ জানান, বন্দর এলাকায় মিছিল-সমাবেশের ওপর চলমান নিষেধাজ্ঞার কারণে তাদের ডবলমুরিং থানার শেষ সীমানা পর্যন্ত মিছিল করতে দেওয়া হয়েছে।
এর আগে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনারের জারি করা এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ১১ অক্টোবর থেকে পরবর্তী ৩০ দিন চট্টগ্রাম বন্দর সংলগ্ন এলাকায় যে কোনো ধরনের সভা, মিছিল, সমাবেশ ও মানববন্ধন নিষিদ্ধ থাকবে। বন্দরের আমদানি-রফতানি কার্যক্রম নির্বিঘ্ন রাখতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।











