বিচার শুরু হলেই শেখ হাসিনাকে ফেরত চাওয়া হবে

5

পূর্বদেশ ডেস্ক

বিচার প্রক্রিয়া শুরু হলেই ভারতের কাছে শেখ হাসিনাকে যথাযথ প্রক্রিয়ায় ফেরত চাওয়া হবে বলে অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল মন্তব্য করেছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঢাকার ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এমন অবস্থানের কথা তুলে ধরেন।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে তার কার্যালয়ে ছয় সংস্কার কমিশনের প্রধানদের নিয়ে বৈঠকের পর আলোচনার বিষয়বস্তু অবহিত করতে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলনে আসেন আসিফ নজরুল।
প্রবল গণআন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এখনও সেদেশে আছেন তিনি। ৮ আগস্ট ক্ষমতা নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। সেই থেকে গত দেড় মাসে শেখ হাসিনার নামে দেড় শতাধিক মামলা হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ফৌজদারি অপরাধে অভিযোগের পর অভিযোগ জমা পড়ছে, তবে এখনও কোনোটির বিচার শুরু হয়নি। খবর বিডিনিউজের।
সংবাদ সম্মেলনে আসিফ নজরুল বলেন, আমরা খুব দ্রুত আইন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আপনাদের জানাব, ছাত্র-জনতার ‘বিপ্লবকালে’ যে গণহত্যা হয়েছে, যে মানবতাবিরোধী অপরাধ হয়েছে; সেটার বিচারের লক্ষ্যে কিছু পদক্ষেপ আমরা গ্রহণ করেছি। দৃশ্যমান কিছু অগ্রগতি হয়েছে। তদন্ত দল, প্রসিকিউশন দল গঠন করা হয়ে গেছে, আদালত পুনর্গঠনের চিন্তা চলছে। অচিরেই দেখবেন, বিচার শুরু হয়েছে। বিচার শুরু হওয়ার পর অবশ্যই আমরা (শেখ হাসিনার) প্রত্যর্পণ চাইব।
আসিফ নজরুল বলেন, আমাদের সঙ্গে ভারতের বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তি আছে। সেই চুক্তি অনুযায়ী ভারতে যদি কোনো দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তি থাকেন, উনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী হোন; আর যাই হোন না কেন, উনার প্রত্যর্পণ আমরা চাইতে পারি। তবে কোন স্ট্যাটাসে ভারতে অবস্থান করছেন শেখ হাসিনা, সে বিষয়ে অবহিত নয় অন্তর্বর্তী সরকার।
১৭ সেপ্টেম্বর পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেছিলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কীভাবে, কোন ‘ইমিগ্রেশন স্ট্যাটাসে’ ভারতের অবস্থান করছেন, সে বিষয়ে ‘অফিসিয়ালি কিছু জানে না ঢাকা’।
সেদিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, না,আমরা অফিসিয়ালি কিছু জানি না। যেটুকু বলেছিলেন তাদের (ভারতের) পররাষ্ট্রমন্ত্রী, যে ‘উনি এসেছেন, তাকে খুব তাড়াতাড়ি আশ্রয় দিতে হয়েছে’।
আসিফ নজরুল বলেন, আজ (বৃহস্পতিবার) প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে তার কার্যালয়ে একটি আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে প্রস্তাবিত কমিশন প্রধানদের নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে অনলাইনের মাধ্যমে সংযুক্ত হন আলী রিয়াজ। আমরা প্রধানত আলোচনা করেছি সংস্কার ভাবনা নিয়ে।
সংস্কার কমিশনের কাজের প্রক্রিয়া, কর্মপদ্ধতি, সদস্য বাছাইসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, এসব কমিশন পহেলা অক্টোবরের মধ্যে কাজ শুরু করবে এবং ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেবে।
সেই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে পরবর্তী ধাপের আলোচনা শুরু হবে জানিয়ে আসিফ নজরুল বলেন, প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে উপদেষ্টা পরিষদ সংস্কার ভাবনা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করে। এরপর ধাপে ধাপে বৃহৎ আকারে আলোচনা হবে, সমাজের সকল স্তরের মানুষের প্রতিনিধিত্ব থাকবে।
সংস্কার কমিশনের রিপোর্ট পাওয়ার পর সেগুলো অনলাইনে উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। সবার মতামতকে প্রতিফলিত করার চেষ্টা করা হবে।

আওয়ামী লীগের আলোচনা হবে না : আসিফ নজরুল বলেন, সংস্কার বিষয়ে আওয়ামী লীগ ছাড়া সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। যারা গণহত্যা চালিয়েছে, হাজারের ওপর মানুষকে হত্যা করেছে, হাজার হাজার মানুষকে আহত করেছে, যারা বিচারের ভয়ে পালিয়ে আছে, তাদের সঙ্গে আলোচনা হবে না। এটা আমাদের পরিষ্কার বক্তব্য।