বিক্ষোভে উত্তাল চট্টগ্রাম, নিন্দার ঝড়

9

নিজস্ব প্রতিবেদক

ফিলিস্তিনে গণহত্যার প্রতিবাদে মুসলিম দেশগুলোকে এক হওয়ার আহবান জানিয়েছেন নগরীর রাজনৈতিক ও সামাজিক দলগুলো। গতকাল দুপুরে নগরীর আন্দরকিল্লা জামে মসজিদ, জমিয়তুল ফালাহ মসজিদ, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব প্রাঙ্গনসহ বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভে রাজনৈতিক ও সামাজিক নেতৃবৃন্দ এসব কথা বলেন। বিকেল ৫টায় চট্টগ্রামের আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ উত্তর গেটে গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যার প্রতিবাদে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী চট্টগ্রাম মহানগরীর উদ্যোগে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবশ ও মিছিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা মুহাম্মদ শাহজাহান বলেন, শহীদি রক্তের বদৌলতে ফিলিস্তিন মুক্ত হয়ে আকসা মুসলমানদেরই থাকবে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস নির্মূলের নামে গাজায় আগ্রাসন চালায় দখলদার ইসরাইলি বাহিনী। এরপর থেকে এ ভূখন্ডে চলছে হত্যাযজ্ঞ। নির্মম গণহত্যা চালানো হয় গাজার প্রতিটি অংশে। এতে প্রাণ হারায় ৫০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি, যার মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। হত্যাকান্ডের তালিকায় রয়েছে গণমাধ্যম, ত্রাণ ও স্বাস্থ্যকর্মী। ইসরাইলি বোমায় নিহতের লাশ আকাশে উঠে জমিনে পড়তে দেখা যায়। রবিবার রাতভর ইসরাইলি হামলায় নিহত হয়েছে কমপক্ষে ৪৬ জন। এর মধ্যে জাহা শহরে বাবা ও মেয়েসহ প্রাণ হারিয়েছে ২১ জন। এ ছাড়া দক্ষিণাঞ্চলের একটি আশ্রয় শিবিরে হামলায় মারা গেছে কমপক্ষে ছয়জন।
এসময় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য, সংসদীয় দলের সাবেক হুইপ, চট্টগ্রাম মহানগরী আমীর ও সাবেক এমপি শাহজাহান চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরা সদস্য ও চট্টগ্রাম মহানগরী সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মুহাম্মদ নুরুল আমিনের সঞ্চালনায় মিছিলে পরবর্তী বিক্ষোভ সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও চট্টগ্রাম মহানগরী নায়েবে আমীর ড. আ. জ. ম. ওবায়েদুল্লাহ ও মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম, নগর এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি মুহাম্মদ উল্লাহ, ফয়সাল মুহাম্মদ ইউনুস ও মোহাম্মদ মোরশেদুল ইসলাম চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক কাউন্সিলর অধ্যক্ষ শামসুজ্জামান হেলালী, কর্মপরিষদ সদস্য ডা. মুহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি এস এম লুৎফর রহমান প্রমুখ। এসময় নগর কর্মপরিষদ সদস্য আবু হেনা মোস্তফা কামাল, আবু বকর সিদ্দিক, মাওলানা মমতাজুর রহমান, আমির হোছাইন, হামেদ হাসান ইলাহী, চট্টগ্রাম ৮ সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী ডা. আবু নাসের প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
যুক্তরাষ্ট্রকে বয়কটের ডাক হেফাজতের : ফিলিস্তিনের গাজা ও রাফায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী চলা ‘নো ওয়ার্ক, নো ক্লাস’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ চট্টগ্রাম মহানগর। এসময় গাজায় ইসরাইলের হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন থাকায় যুক্তরাষ্ট্রকে বয়কটের ডাক দিয়েছেন হেফাজতের নেতারা। গতকাল সোমবার দুপুরে নগরীর জমিয়াতুল ফালাহ মসজিদ প্রাঙ্গণে ‘মজলুম গাজাবাসীর ডাকা বিশ্বব্যাপী হরতালের সমর্থনে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের আয়োজন করা হয়। বিক্ষোভ মিছিলটি মসজিদ প্রাঙ্গণ থেকে দামপাড়ার নার্সারি মোড় প্রদক্ষিণ করে শেষ হয়।
এ সময় মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা স্লোগান দেন ‘ইহুদিদের আস্তানা, জ্বালিয়ে দাও পুড়িয়ে দাও’, ‘ইহুদের দালালেরা, হুঁশিয়ার সাবধান’, ‘নারায়ে তাকবির, আল্লাহু আকবর’, ‘ফিলিস্তিন জিন্দাবাদ’, ‘ফিলিস্তিন জিন্দাবাদ’, ‘ফ্রি ফ্রি ফিলিস্তিন’, ‘বয়কট, বয়কট; আমেরিকা বয়কট’।
একমাত্র স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রই এ যুদ্ধের অবসান হতে পারে : ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ এর মহাসচিব অধ্যক্ষ আল্লামা জয়নুল আবেদীন জুবাইর বলেছেন- গাজা ভূখন্ডে দখলদার ইসরাইলের নৃশংসতা আইয়ামে জাহেলিয়াতকে হার মানিয়েছে। গাজা এখন সম্পূর্ণ মৃত্যুপুরি। পাখির মতো নারী-শিশুসহ মুসলমানদের নির্বিচারে হত্যা করা হচ্ছে। সা¤প্রতিক যুদ্ধ বিরতি লঙ্ঘন করে ইসরাইলী বর্বরতা অতীতের সকল রেকর্ড অতিক্রম করেছে। একমাত্র স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রই এ যুদ্ধের অবসান হতে পারে।
গতকাল সোমবার বিকেল ৩টায় ইসরাইল কর্তৃক গাজার মুসলমানদের উপর নির্বিচারে হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞের প্রতিবাদে চেরাগি পাহাড় চত্বরে বিক্ষোভ মিছিল পূর্ব সমাবেশে এসব কথা বলেন তিনি। ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি এইচ এম মুজিবুল হক শাকুর এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বিশেষ অতিথি ছিলেন ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ এর ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ আল্লামা এস এম ফরিদ উদ্দীন, ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ এম ইব্রাহীম আখতারী, চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সচিব অধ্যাপক ছৈয়দ হাফেজ আহমদ। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন অধ্যক্ষ ছৈয়দ মাওলানা জসিম উদ্দীন তৈয়বী, অধ্যক্ষ মাওলানা আবু ছালেহ, মাস্টার আনোয়ারুল আজিম, মাওলানা ওয়াহেদ মুরাদ, লায়ন এমরান, ডা. হাসমত আলী তাহেরী, আনিসুর রহমান, অধ্যক্ষ এম শাহজাহান, আলী আজগর খান, এস এম আবু সাদেক ছিটু, কাজী মোহাম্মদ আহসানুল আলম, রেজাউল জরিম, কাজী সোলতান আহমদ, রেজাউল মোস্তফা তানভীর। উল্লেখ্য, উক্ত সমাবেশ ও মিছিলে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, ইসলামিক যুবফ্রন্ট বাংলাদেশ, ইসলামী ছাত্রসেনার বিভিন্ন স্তরের নেতা-কর্মীসহ অসংখ্য ধর্মানুরাগী মানুষ অংশগ্রহণ করে। বিক্ষোভ মিছিল চেরাগী মোড় থেকে শুরু হয়ে আন্দরকিল্লা, লালদিঘি হয়ে শহীদ মিনারে গিয়ে শেষ হয়।
ইসরায়েলকে পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন করুন : বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের মহাসচিব স উ ম আব্দুস সামাদ বলেছেন, মানবতা বিরোধী বিশ্ব অপশক্তি ইসরাইলী ইহুদিদেরকে গোটা পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিতে হবে। গতকাল সোমবার বিকেল ৩টায় চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব চত্বরে বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, বাংলাদেশ ইসলামী যুবসেনা ও বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসেনা চট্টগ্রাম জেলার উদ্যোগে ফিলিস্তিনের রাফা ও গাজায় ইসরাইলী ইহুদিদের গণহত্যা বন্ধের দাবীতে আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিল পূর্ব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। মহানগর উত্তরের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাওলানা শেখ আরিফুর রহমানের সভাপতিত্বে প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন আবুল হোসেন মাস্টার, ইকবাল হোসাইন, সৈয়দ আবু আজম, মহিবুল আলম চৌধুরী, মাওলানা নুরুল্লাহ রায়হান, এম নাছির উদ্দিন মাহমুদ, আলহাজ্ব মোহাম্মদ ইউনুস তৈয়বি, মাওলানা গিয়াস উদ্দিন নিজামী, আলমগীর বৌদি, মাস্টার ইউসুফ, মাস্টার বদিবউর রহমান, নুর রায়হান চৌধুরী, এনামুল হক, হাবিবুল মুস্তাফা সিদ্দিকী, আলী আজগর, মোশারফ হোসেন, মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, জামাল উদ্দিন খোকন, আমান উল্লাহ আমান, মোহাম্মদ ইয়াকুব, এটিএম রেজাউল মুস্তাফা, আবু তৈয়ব চৌধুরী, ওসমান কাদেরী, মোহাম্মদ শাকের, হেলাল হাসান, মোহাম্মদ সাজ্জাদ, কোরশেদুল ইসলাম, মহিউদ্দিন, হাফেজ নুর আলম, মাওলানা নুরুল কবির, বশির আহমদ চৌধুরী, ইব্রাহিম খলিল প্রমুখ।

ফিলিস্তিনের পক্ষে যুদ্ধ করতে চায় জামেয়ার শিক্ষার্থীরা : ফিলিস্তিনের নির্যাতিত মুসলমানদের পক্ষে যুদ্ধে যাওয়ার জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে ব্যবস্থার আহবান জানিয়েছেন চট্টগ্রামের জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা। ফিলিস্তিনে যাওয়ার জন্য বাংলাদেশের অসংখ্য মানুষ তৈরি আছে বলেও জানান তারা। গতকাল সোমবার সকালে নগরীর ষোলশহর জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া মাদ্রাসার পক্ষ থেকে ‘মজলুম গাজাবাসীর ডাকা বিশ্বব্যাপী হরতালে’র সমর্থনে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের আয়োজন করা হয়। বিক্ষোভ মিছিল মাদ্রাসা প্রাঙ্গণ থেকে শুরু হয়ে মুরাদপুর মোড়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশ প্রশাসনের কাছে আমরা আহ্বান রাখছি, ফিলিস্তিনে যাওয়ার জন্য বাংলাদেশের অসংখ্য মানুষ তৈরি আছে। অতি শীঘ্রই বাংলাদেশ থেকে মুজাহিদ বাহিনী ফিলিস্তিনে যাওয়ার জন্যে, মুসলমানদের পক্ষে জিহাদ করতে যাওয়ার জন্য ব্যবস্থা যেন রাষ্ট্রীয়ভাবে করে দেওয়া হয়।
বক্তারা আরও বলেন, একটি কথা স্পষ্ট জানাতে চাই, আমরা মুসলমান। পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে, যেকোনো মুসলমানের ওপরে অন্যায়ভাবে হামলা আসবে যখন যেভাবে প্রতিবাদ করতে হয় আমরা তা করবো, লড়াই করবো। আজ বড় দুঃখ এবং পরিতাপের সঙ্গে বলতে হয়, আমরা যারা মুসলমানের পক্ষে জিহাদি চেতনা নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করছি, বিভিন্ন বক্তব্য-প্রতিবাদ করছি, তথাকথিত মুসলমান নামধারীরা জিহাদের বিরুদ্ধে বিষোদাগার করছে। ইহুদির দালালেরা প্রকাশ্যে দালালি করছে। এছাড়াও শামসুল হক ফাউন্ডেশনসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন গণহত্যার প্রতিবাদে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ সমাবেশ করেন।