বিএসএফের ঠেলে দেওয়া ৩০ জনকে স্কুলে আশ্রয়

1

পূর্বদেশ ডেস্ক

খাগড়াছড়িতে অনুপ্রবেশের অভিযোগে আটক ৭২ জনের মধ্যে ৩০ জনকে স্থানীয় একটি স্কুলে রেখে তাদের খাবার-দাবারের ব্যবস্থা করেছে প্রশাসন। বুধবার ভোরে এসব মানুষকে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী-বিএসএফ জেলার তিনটি সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ঠেলে দেয়। তারপরই তাদের আটক করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
এদের মধ্যে ৩০ জনকে বিজিবির হেফাজতে পানছড়ি উপজেলার লোগাং বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রাখা হয়েছে। বাকিরা আছেন মাটিরাঙা উপজেলার শান্তিপুর ও তাইন্দং সীমান্ত এলাকায়। খবর বিডিনিউজের।
গতকাল বৃহস্পতিবার খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক (ভারপ্রাপ্ত) নাজমুন আরা সুলতানা বলেন, আটকদের মধ্যে নারী ও শিশু রয়েছে। মানবিক কারণে তাদের আশ্রয় দেওয়া দিয়ে খাওয়া-দাওয়া দিচ্ছে প্রশাসন।
দুপুরে লোগাং বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়টির দ্বিতীয় তলার একটি কক্ষে ৩০ জনকে সেখানে রাখা হয়েছে। তাদের সেখানে কাউকে যেতে দেওয়া হচ্ছে না।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুরেশ কুমার ত্রিপুরা বলেন, বুধবার রাতে ৩০ জনকে এখানে নিয়ে আসা হয়েছে। সীমান্তবর্তী এলাকা রূপসেন পাড়া এলাকা থেকে তাদেরকে নিয়ে আসা হয়। এদের মধ্যে ২৩ জন নারী, তিনজন পুরুষ এবং চারজন শিশু। তাদেরকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে রান্না করা খাবার খাওয়ানো হচ্ছে।
এদিকে সীমান্তে ‘পুশইনের’ ঘটনায় শঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা। লোগাং বাজার পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল কাদের বলেন, গতকাল (বুধবার) আমরা খবর পেলাম ভারত থেকে লোক আসতেছে। রাত ৮টার দিকে বিজিবির গাড়িতে করে তাদেরকে নিয়ে আসে। তাদেরকে গুনে গুনে বিদ্যালয়ে নিয়ে আসা হয়।
পরে পানছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার প্রতিনিধি এসেছে। তাদেরকে মনিটরিং করা হচ্ছে। ভারত কেন এখানে লোক ঠেলে পাঠিয়ে দেবে? ভারতের মানুষ এখানে আসলে আমাদের আরো সমস্যা হবে।
লোগাংয়ের স্থানীয় বাসিন্দা আয়নুল হোসেন বলেন, এখানে ৩০ ভারতীয় নাগরিককে রাখা হয়েছে। তাদের রান্না করে খাওয়ানো হচ্ছে। দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে এভাবে পুশইন করার কারণে আমরা আতঙ্কিত। আমরা এখন বর্ডারে কড়া নজরদারি চাচ্ছি। যাতে ভারতের লোক ঢুকতে না পারে।
খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক (ভারপ্রাপ্ত) নাজমুন আরা সুলতানা বলেন, যাদেরকে পুশইন করা হয়েছে সীমান্ত রক্ষী বাহিনী ও স্থানীয় প্রশাসন তাদের বিষয়ে একসঙ্গে কাজ করছে। তাদের বিষয়ে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
যেহেতু সেখানে নারী ও শিশু রয়েছে মানবিক কারণে তাদেরকে আশ্রয় এবং খাবার প্রশাসনের পক্ষ থেকে দেওয়া হচ্ছে।
বুধবার ভোরে খাগড়াছড়ির মাটিরাঙার শান্তিপুর দিয়ে ২৭ জন, তাইন্দ দিয়ে ১৫ জন এবং পানছড়ির লোগাং দিয়ে ৩০ জনকে বিএসএফ বাংলাদেশে ঠেলে দেয়।
এদিন কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারী উপজেলার বিভিন্ন সীমান্ত এলাকা দিয়ে ৩০ জন এবং ভূরুঙ্গামারী উপজেলার ভাওয়ালকুরি সীমান্ত দিয়ে ১৪ জনকে ঠেলে দেয় বিএসএফ।
এ ছাড়া এদিন মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার ধলই সীমান্ত দিয়ে আরও ১৫ জনকে বিএসএফ বাংলাদেশে ঠেলে দেয়।
এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান। তিনি বলেন, বাংলাদেশের নাগরিক বলে ভারত যেভাবে লোকজনকে সীমান্তের এপারে ঠেলে দিচ্ছে, তা ‘সঠিক নয়’।
বুধবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, কেউ বাংলাদেশের নাগরিক হয়ে থাকলে প্রমাণসাপেক্ষে তাদেরকে গ্রহণ করবে ঢাকা। তবে, সেটা অবশ্যই ‘ফর্মাল চ্যানেলে’ হতে হবে।