নির্বাচন নিয়ে বিএনপি-জামায়াতের চক্রান্তের তথ্য থাকার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তারা কি ধরনের চক্রান্ত করে সেটা খুঁজে বের করতে হবে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে ধানমন্ডির সুধাসদন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে নড়াইলে নির্বাচনী জনসভায় দেওয়া বক্তব্যে তিনি বলেন, ওরা (বিএনপি-জামায়াত) কোথায় কি চক্রান্ত করবে সেগুলো খুঁজে বের করতে হবে। শুধু নড়াইল বলে না, সমস্ত বাংলাদেশের কথাই বলছি। আমার কাছে এমন অনেক তথ্য এসেছে, তাদের এই সমস্ত চক্রান্তের।
বিএনপি-জামায়াত আওয়ামী লীগের নাম ভাঙিয়ে আগেও কয়েকটা নির্বাচন করেছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নৌকার ব্যাজ গায়ে দিয়ে ভেতরে গিয়ে ধানের শীষে ভোট দিয়েছে। তারা এমনভাবে সিল মারা শুরু করে যেন আওয়ামী লীগ করছে। অথচ আওয়ামী লীগ জানে সারা বাংলাদেশে নৌকার পক্ষে জোয়ার। প্রতিটা মানুষ নৌকায় ভোট দিতে উদগ্রীব।
এদিন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী রাজশাহী, গাইবান্ধা ও জয়পুরহাটের নির্বাচনী জনসভায় বক্তব্য দেন।
ভিডিও কনফারেন্সে মহাজোটের প্রার্থীদের জনগণের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের বিভিন্ন প্রত্যাশার কথাও শোনেন।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ কখনো বিএনপির মতো মনোনয়ন বাণিজ্য করে না। বিএনপি এক জায়গায় ৩/৪ জন করে নমিনেশন দিয়েছে। নমিনেশন দেবার পর সেই সিট তারা অকশনে দিয়েছে অর্থাৎ যে বেশি টাকা দেবে সে নমিনেশন পাবে। এভাবে তারা বাণিজ্য করেছে এবং যার জন্য আজ তারা নিজেদের মধ্যে গোলমাল করে, মারামারি করে, নিজেদের অফিসে আগুন দেয়। তারপর আবার অন্যের উপরে দোষ দেয়। এটাই হচ্ছে বাস্তবতা।
তারা আরেকটা চক্রান্ত করছে বলে আমি শুনতে পাচ্ছি। নির্বাচনের সময় তারা মুজিব কোট বানাবে, আওয়ামী লীগের ব্যাজ বানাবে বা যুবলীগের, ছাত্রলীগের ব্যাজ বানাবে এবং ওইভাবে তারা গোলমাল করে ভোট কারচুপি করবে। খবর বিডিনিউজের
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা জনগণের সম্পদ লুট করে অগাধ সম্পদের মালিক। মানিলন্ডারিং, অস্ত্র চোরা কারবারি, এতিমের অর্থ আত্মসাৎ, এভবে তারা এত টাকা কামাই করেছে…বিএনপি-জামায়াত দুইজনেরই টাকার কোনো অভাব নেই।
একটা জিনিস লক্ষ্য করবেন নির্বাচনের স্বাভাবিক প্রচার প্রচারণায় তারা নেই। কারণ তারা একটা চক্রান্তে ব্যস্ত, একটা ষড়যন্ত্রে ব্যস্ত। আরেক জায়গায় শুনলাম তারা ভুয়া ব্যালট পেপার বানাচ্ছে। কাজেই এভাবে তারা নানাভাবে চক্রান্ত করার চেষ্টা করছে। এই চক্রান্তের হাত থেকে জনগণের ভোটের অধিকার রক্ষা করতে হবে।
বিএনপির অভিযোগ করার প্রবণতারও সমালোচনা করেন শেখ হাসিনা। তারা আরেকটা পারে, প্রতিদিন শুধু নালিশ করা। নিজেরা অপকর্ম করবে, আমাদের নির্বাচনী অফিসে তারা আগুন দিয়েছে, ভেঙেছে, জ্বালিয়ে দিয়েছে, কর্মীদের হত্যা করেছে আবার নালিশ করছে। এটাই তাদের চরিত্র।
নড়াইল-২ আসনে নৌকার প্রার্থী ওয়ানডে ক্রিকেট দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজাকে পাশে নিয়ে ভিডিও কনফারেন্স করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সে সময় তিনি নড়াইল-১ আসনে নৌকার প্রার্থী বিএম কবিরুল হক মুক্তিকেও পরিচয় করিয়ে দেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আপনারা কয়েকদিন আগে দেখেছেন টেস্ট খেলা..ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতো আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ক্রিকেট টিমকে আমরা হারিয়েছি। এটা বাংলাদেশের জন্য বিরাট সম্মান। কাজেই আমরা সেই ক্রিকেট প্লেয়ার মাশরাফি বিন মুর্তজাকে নড়াইল-২ থেকে নমিনেশন দিয়েছি। খেলায় তার পায়ে ইনজুরি হয়েছে বলে তাকে যেতে দেইনি। সে এখানেই আছে। তার জন্যও নৌকা মার্কায় ভোট চাই।
এর আগে রাজশাহীতে ভিডিও কনফারেন্সের শুরুতেই মেয়র পদে খায়রুজ্জামান লিটনকে জয়ী করায় রাজশাহীবাসীকে ধন্যবাদ জানিয়ে জাতীয় নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীদের জয়ী করার আহব্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হয়েছে। নৌকা মার্কায় ভোট চাই কারণ শুধু রাজশাহী বিভাগ নয়, পুরো বাংলাদেশে উন্নয়ন হয়েছে। এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হবে।
আবারো তিনি বিএনপি-জামায়াতের সমালোচনা করে বলেন, গত নির্বাচনেও দেখেছি কিভাবে বিএনপি-জামায়াত জোট মিলে সেই নির্বাচন ঠেকানোর জন্য অগ্নিসন্ত্রাস শুরু করেছে। আইনশৃঙ্খলা সংস্থা পুলিশকে রাস্তায় ফেলে মারে, সাধারণ মানুষ যারা ট্রেনে চড়ে, লঞ্চে চড়ে, বাসে চড়ে, নিজেদের গাড়িতে চড়ে তাদেরকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে। ট্রাকের ড্রাইভার-হেলপারকে পুড়িয়ে মারে। মানুষ পুড়িয়ে হত্যার মতো জঘন্য ঘটনা তারা ঘটিয়েছিল শুধু নির্বাচন ঠেকানোর জন্য। ৫৮২টা স্কুল তারা পুড়িয়েছিল, ৭০টা সরকারি অফিস পোড়ায়, ৬টা ভূমি অফিস পোড়ায় ।
বিএনপি-জামায়াত বাংলা ভাই সৃষ্টি করে প্রকাশ্য দিবালোকে তাদের দিয়ে মিছিল করিয়েছে, জঙ্গিদের মদদ দিয়ে বোমা হামলা করিয়েছে, গ্রেনেড হামলা চালিয়ে সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এস এম কিবরিয়া, আহসানউল্লাহ মাস্টারকে হত্যা করেছে, নাটোরের নেতা মমতাজসহ আওয়ামী লীগের হাজার হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে। একটার পর একটা বোমা হামলা করেছে।
তিনি বলেন, তাদের এই সমস্ত অপকর্মের জবাব জনগণ দিয়েছিল নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে, আমাদের জয়ী করে। আগামী ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচন। ইনশাল্লাহ আবারও জয়ী হলে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষা করা হবে।
এ সময় রাজশাহী থেকে মহাজোটের প্রার্থী ওমর ফারুক চৌধুরী, ফজলে হোসেন বাদশা, মো. আইনউদ্দীন, এনামুল হক, মো. মনসুর রহমান, মো. শাহরিয়ার আলম উপস্থিত ছিলেন।
একটানা ভিডিও কনফারেন্সে তিনি গাইবান্ধাও নেতা কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে মহাজোটের প্রার্থীদের পরিচয় করিয়ে দেন।
সবশেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জয়পুরহাটেও নৌকার পক্ষে ভোট চান।