বিএনপিকে যারাই থামাতে গেছে তারাই ধ্বংস হয়েছে

1

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, ‘বিগত দিনগুলোতে আমরা রাজপথে রক্ত দিয়েছি, জেলে গিয়েছি, অনেক নেতাকর্মী হারিয়েছি, অনেক কিছুই হারিয়েছি জীবনে। কিন্তু একটা জায়গায় ভালো কাজ করেছি, বিএনপির নেতাকর্মীরা জ্বলে পুড়ে খাঁটি সোনায় পরিণত হয়েছে। এ জন্য বিএনপিকে ভাঙতে পারে নাই। বিএনপি আজ অনেক শক্তিশালী। বিএনপিকে যারা যখনই থামাতে গিয়েছে, তখনই তারা ধ্বংস হয়েছে। বিএনপি কোথায় আর যারা বিএনপিকে ধ্বংস করতে চেয়েছিল তারা আজ কোথায়?’
তিনি গতকাল শনিবার বিকেলে নগরীর ষোলশহর বিপ্লব উদ্যানে ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ উপলক্ষে চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত কেন্দ্রীয় যুবদলের দিনব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে সমাবেশ ও বিপ্লব উদ্যান থেকে কালুরঘাট অভিমুখী যুব পদযাত্রা কর্মসূচিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
কেন্দ্রীয় যুবদল সভাপতি আব্দুল মোনায়েম মুন্নার সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম নয়নের পরিচালনায় কর্মসূচিতে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, কেন্দ্রীয় বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন, কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব নাজিমুর রহমান।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আমি আবারও বলছি বিএনপিকে থামানোর চেষ্টা করবেন না। বাংলাদেশের গণতন্ত্রের মাধ্যমে জনগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে তাদের সরকার, তাদের সংসদ দেখতে চায়। এটা বাধাগ্রস্ত করার কোনো সুযোগ নেই। বিএনপি এর জন্য বিগত দিনে অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছে, প্রয়োজনে আবার ত্যাগ স্বীকার করতে আমরা রাজি আছি। জনগণের সিদ্ধান্ত জনগণকে নিতে দেন, অন্য কেউ দিতে পারবে না। আমরা দিনক্ষণ বলছি না, আমরা বলছি সবাই মিলে দেশ গড়ি। সবাই মিলে হাসিনার পতন ঘটিয়েছে। বিএনপি এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও এককভাবে ক্ষমতায় যাবে না, সবাইকে নিয়ে জাতীয় সরকার করা হবে।
‘জাতির জনক’ কোনো একক ব্যক্তি নয়, মন্তব্য করে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, এর পেছনে অনেক নেতার ত্যাগ রয়েছে। জাতির জনক বলতে যা বোঝায়, এটা তো কোনো একক ব্যক্তির নয়। এটার পেছনে অনেক নেতাদের ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে। অনেক নেতাদেরকে জীবন যুদ্ধে জড়াতে হয়েছে। অনেক নেতাকে জিয়াউর রহমানসহ সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নিয়ে বাংলাদেশকে স্বাধীন করতে হয়েছে। অনেকের অনেক ভ‚মিকা আছে। সবাইকে স্বীকৃতি দিতে হবে। এ জন্য আমেরিকাতে ‘ফাউন্ডিং ফাদার’ অনেককে স্বীকৃতি দিয়েছে। জাতির জনক হিসাবে একাধিক ব্যক্তিকে স্বীকৃতি দিয়ে আজ পর্যন্ত সবাইকে স্মরণ করছে। এটা কোন একজন ব্যক্তি নয়।
তিনি বলেন, ওই যে একজন ব্যক্তিকে সিম্বল হিসেবে ব্যবহার করে, বাংলাদেশে যে গুম, খুন, হত্যা, মামলা, নিপীড়ন, নির্যাতন, লুটপাট, এদেশের মানুষের মানব অধিকার, গণতন্ত্রের অধিকার, আইনের শাসন কেড়ে নেওয়া, বাংলাদেশকে একটি ফ্যাসিষ্ট রাষ্ট্রে পরিণত করা করেছে। ওই সেই ব্যক্তির নাম দিয়ে এবং সেই ব্যক্তির মূর্তি স্থাপন করেছে বাংলাদেশে, এই খারাপ কাজগুলো করেছে তারা। তারা এ খারাপ কাজগুলো করেছে, তাদের সাথে সাথে সেই ব্যক্তিও হঠাৎ করে চলে যায়। একটা সিম্বল ব্যবহার করে খারাপের পর খারাপ কাজ করতে থাকেন, এরপর আপনার যখন পতন হয়, তখন ওই সিম্বলেরও পতন হয়। এটা দুর্ভাগ্য। তারা যদি সকলকে স্বীকৃতি দিত, দেশের গণতন্ত্র অব্যাহত রাখতো, দেশের মানুষের অধিকারগুলো দিয়ে দিত, ভোটাধিকার দিত, জনগণের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকার থাকতো, যারা জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকতো। তাহলে এ দুর্ভাগ্য হতো না।
কোন ব্যক্তিকে মূলধন বানিয়ে খারাপ কাজ টিকে থাকা যায় না মন্তব্য করে তিনি বলেন, স্বাধীনতা বা কোন ব্যক্তিকে মূলধন বানিয়ে কোন খারাপ কাজ করে টিকে থাকতে পারে না। এটা বাংলাদেশে প্রমাণ হয়েছে। সেই শহীদ জিয়াউর রহমান, যিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল করেছিলেন। এটার মূল ভিত্তি ছিল, বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ, অর্থনৈতিক মুক্তি, একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ, এখানে জনগণ মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। এজন্য শহীদ জিয়াউর রহমানের বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল আজকেও মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। এ দলকে ধ্বংস করার জন্য এমন কোন কিছুই বাদ রাখেনি। আমাদের নেতাকর্মীরা চাকরি হারিয়েছে, বাড়িতে থাকতে পারেনি, পালিয়ে থাকতে হয়েছে। আমাদের নেতাকর্মীরা বছরের পর বছর মিথ্যা মামলায় জেল কেটেছে।
বিপ্লব উদ্যানের কথা তুলে ধরে আমীর খসরু মাহমুদ বলেন, ঐক্যের টান হচ্ছে বিপ্লব উদ্যান। এখানে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে বিপ্লব ঘটিয়েছিলেন। পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে রিভোল্ট করেছিলেন। পাকিস্তানিদের মুখের ওপর বলেছিলেন, ‘আমি তোমাদের বিরুদ্ধে বিপ্লব ঘোষণা করেছি।’ সেই ঘোষণায় পাকিস্তানি তৎকালীন অফিসারদের অনেককে জীবন দিতে হয়েছে। সেই বিপ্লবের মাধ্যমে জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের প্রথম মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে পরিচিত হয়েছে। সেখান থেকে এ ঘোষণা দিয়ে বাংলাদেশি সৈন্যদের নিয়ে তিনি বের হয়েছিলেন পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে। এরপর কালুরঘাট বেতার কেন্দ্রে গিয়ে প্রথম বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছেন জিয়াউর রহমান।
কেন্দ্রীয় যুবদলের সভাপতি আব্দুল মোনায়েম মুন্নার সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়নের সঞ্চালনায় এ সময় উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন, কেন্দ্রীয় বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দীন, মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব নাজিমুর রহমান, মহানগর যুবদলের সাবেক সভাপতি মোশাররফ হোসেন দীপ্তি, মহানগর যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ শাহেদ, কেন্দ্রীয় যুবদলের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান, লক্ষীপুর জেলা যুবদলের আহব্বায়ক রেজাউল করিম লিটন, কেন্দ্রীয় যুবদলের সাবেক সহ-সাধারণ সম্পাদক ফেরদৌস আহমেদ মুন্না, চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাবেক সহ-সাধারণ সম্পাদক ও নোয়াখালী জেলা যুবদলের সভাপতি মনজুরুল আজিম সুমন, সাবেক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক জাহিদ হাসান, সাবেক উপজাতি বিষয়ক সম্পাদক ও রাঙ্গামাটি জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম, কেন্দ্রীয় যুবদলের সহ দপ্তর সম্পাদক মিনহাজুল ইসলাম ভ‚ঁইয়া, যুবদল কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাবেক সহ-সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দিন, যুবদল কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাবেক সদস্য সাইফুর রহমান শপথ, আমিনুল ইসলাম তৌহিদ, সোহেল, লক্ষীপুর জেলা যুবদলের সদস্য সচিব হুমায়ুন কবির, দক্ষিণ জেলা যুবদলের সভাপতি মো. শাহজাহান, সাধারণ সম্পাদক মো. আজগর, উত্তর জেলা যুবদলের সভাপতি হাসান জসিম ও সাধারণ সম্পাদক এস এ মুরাদ চৌধুরী প্রমুখ।
সমাবেশ শেষে কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র অভিমুখে যুব পদযাত্রায় অংশ নেন আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। বিশাল যুব পদযাত্রা যুবদলের নেতাকর্মীরা শৃঙ্খলার সাথে অংশ নেন।
সমাবেশের আগে বিপ্লব উদ্যানে রং তুলিতে আঁকা স্বাধীনতার ঘোষণার চিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম ও সহ সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন।
তার আগে দুপুর ১২টায় শহীদ জিয়া স্মৃতি জাদুঘরে এতিম শিশুদের অংশগ্রহণে কোরআনখানি ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন।
সকাল সাড়ে ১০টায় কালুরঘাট বেতার কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয় শিশু কিশোরদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা। এতে অতিথি ছিলেন নগর বিএনপির আহব্বায়ক এরশাদ উল্লাহ ও সদস্য সচিব নাজিমুর রহমান।
তাছাড়া সকালে রাঙ্গুনিয়ায় সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের প্রথম সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন যুবদল ও বিএনপির নেতৃবৃন্দ। সেখানে অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় যুবদলের সভাপতি আব্দুল মোনায়েম মুন্না, সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম নয়ন।