বিএনপিকে ‘ভিন্ন শিবিরে ঠেলে দেয়ার চক্রান্ত’ হচ্ছে

1

‘এক এগারোর’ সঙ্গে যুক্ত করে বিএনপিকে ‘ভিন্ন শিবিরে ঠেলে দেওয়ার চক্রান্ত’ হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। তিনি বলেছেন, ‘আমি স্পষ্টট করে বলতে চাই, বিএনপিকে যারা ভিন্ন শিবিরে ঠেলে দিয়ে ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করছেন, এর পরিণতি ভালো হবে না’।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গত বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তার পাল্টায় সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেন, মির্জা ফখরুলের ‘নিরপেক্ষ’ সরকারের দাবি আরেকটা ‘এক এগারো সরকার গঠনের ইঙ্গিত’ বহন করে। খবর বিডিনিউজের
গতকাল শুক্রবার এক দোয়া মাহ্ফিলে নাহিদ ইসলামের মন্তব্যের জবাব দিয়ে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘এক এগারো নয়, যদি আপনারা এই ৫ আগস্টের পরে এই ধরনের কথা-বার্তা, সংঘাত-বিভেদ সৃষ্টির কথা বলতে থাকেন, তাহলে কিন্তু গণতন্ত্রের চেহারা কোনোদিন দেখবেন না। আমি বলব, এই বিভেদ-বিভ্রান্তি সৃষ্টি না করে দেশটাকে ঐক্যবদ্ধ রাখার চেষ্টা করেন’।
৫ আগস্টের অভ্যুত্থানের অন্যতম সংগঠক নাহিদ ইসলাম বৃহস্পতিবার বিকালে তার ফেসবুক পোস্টে লিখেছিলেন, ‘ছাত্ররাই এ সরকারের এবং বিদ্যমান বাস্তবতার একমাত্র ফ্যাক্টর, যেটা ১/১১ এর সরকার থেকে বর্তমান সরকারকে সম্পূর্ণভাবে আলাদা করে। বিএনপি কয়েক দিন আগে ‘মাইনাস টু’ এর আলোচনা করলেও এখন ক্ষমতায় যাওয়ার পথ সুগম করার জন্য নিরপেক্ষ সরকারের নামে আরেকটি ১/১১ সরকারের প্রস্তাবনা করছে’।
এ ধরনের পরিকল্পনা ‘গণতন্ত্র ও জাতীয় স্বার্থের’ বিরুদ্ধে যাবে এবং ছাত্র-জনতা কোনোভাবেই তা মেনে নেবে না মন্তব্য করে নাহিদ বলেন, ‘আমি মনে করি এটা বিএনপির বিরুদ্ধেও ষড়যন্ত্র’।
তার ওই বক্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে মির্জা আব্বাস গতকাল শুক্রবার বলেন, ‘আজকে বহু মত, বহু পথ, বহু টেলিভিশন, বহু সংবাদপত্র আর ইদানিং কথা বলার সুযোগ পেয়ে বহু কথা বিএনপির বিরুদ্ধে, আমাদের দলের বিরুদ্ধে বলছে। আমাদের দুয়েকজন নেতা তার নিজ দায়িত্বে দুয়েকটা কথা বলে থাকতে পারেন হয়ত কোথাও, আমি ঠিক শুনি নাই, আমি দেশের বাইরে ছিলাম। ইদানিং দেখলাম, বহু লোক বহুভাবে কথা বলছেন। কি বলছে? কেউ বলছে, বিএনপি নাকি ওয়ান ইলেভেন আনার পাঁয়তারা করছে’। তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, ২০০৭ সালের এক এগারোর ভয়াবহ পরিণতি- এটা বিএনপির চাইতে কেউ বেশি ভোগ করে নাই। বিএনপির প্রতিটি নেতা-কর্মী, সাধারণ কর্মী থেকে শুরু করে আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া পর্যন্ত ওই এক এগারোর ষড়যন্ত্র থেকে রেহাই পায় নাই। তাকে নির্মমভাবে হত্যা করার চেষ্টা করা হয়েছে’।
উপদেষ্টা নাহিদের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানানোর পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীরও সমালোচনা করেন মির্জা আব্বাস। তিনি বলেন, ‘একটা দল আছে যেটার নাম বলব না। ওই যে বলে না, গাছে কাঁঠাল, গোঁফে তেল… ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য পাগল হয়ে গেছে। এবং তারা এমনভাব করছে যে তারা যেন কিছুই জানেন না- ভাজা মাছটিও উল্টে খেতে জানে না। না জেনে পুট করে বিএনপি সম্পর্কে দুই-একটা কথা বলে ফেলেন। যাই হোক, আমি কারো সমালোচনা করব না’।
মির্জা আব্বাস বলেন, ‘আজকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, হঠাৎ করে যেমন নতুন মুখে কথা ফুটলে বাচ্চারা যেভাবে কথা বলেন না- আবোল-তাবোল প্রলাপ বকতে থাকে। অনেক দল, অনেক ব্যক্তি, যারা আজকে কথা-বার্তা বলছেন, এমনভাবে কথা-বার্তা বলছেন যে- আমি মাঝে মাঝে হঠাৎ যথন সুযোগ হয় টেলিভিশনে দেখি, উনাদের কথা-বার্তায় মনে হয় বিএনপি যেন আওয়ামী লীগের দোসর। বিএনপিকে আওয়ামী শিবিরের দিকে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমি স্পষ্টভাবে বলতে চাই, নিজের চেহারা আয়না দিয়ে দেখুন, নিজের অন্তরটা আয়না দিয়ে দেখুন। দেশবাসীকে আর ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা করবেন না’।
তিনি বলেন, ‘বিএনপি ১৭ বছর রাজপথে লড়াই করেছে, এখনো যারা এখানে আছেন, আমাদের রিজভীসহ (রুহুল কবির রিজভী), রিজভীতো পঙ্গু হয়ে গেছে, অকালে মৃত্যু হয়ে গেছে ছেলেটার। এবং আমার নিজের পরিবারের কথা যদি বলি, আমার জেল হয়েছে ১১ বছর, আমার স্ত্রীর জেল হয়েছে ১৬ বছর, আমার ছোট ভাইয়ের (মির্জা খোকন) ৮ বছর জেল হয়েছে; ১৭ বছর বিদেশে থেকে আজকে বাংলাদেশে ফেরত এসেছে। এই নিপীড়ন শুধু আমার পরিবার নয়, বাংলাদেশের প্রতিটি বিএনপির নেতা-কর্মীর ওপর এই নিপীড়ন হয়েছে। আজকে আমাদেরকে ঠেলে দিতে চাচ্ছেন অন্য শিবিরে। উদ্দেশ্যটা কী? আওয়ামী লীগের সিল মারতে চান? আমাদেরকে তাড়াতে চান? এই কথা কখনো চিন্তাও করবেন না। এদেশের অতন্দ্র প্রহরী ছিলেন রাষ্ট্রপতি জিয়্উার রহমান, এদেশের স্বাধীনতার অতন্দ্র প্রহরী ছিলেন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, এদেশের অতন্দ্র প্রহরী আমার এই দলের নেতা-কর্মী ভাইয়েরা স্বাধীনতা-সার্বভ্মৌত্বের জন্য’।