বাবুনগরীসহ ৪৩ জনের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন

18

হেফাজতে ইসলামের প্রতিষ্ঠাতা আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফীকে মানসিক নির্যাতনের মাধ্যমে হত্যার অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলায় হেফাজতে ইসলামের আমীর জুনায়েদ বাবুনগরীসহ ৪৩ জনকে অভিযুক্ত করল পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। এ সংক্রান্তে দায়ের করা মামলায় আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। গতকাল সোমবার চট্টগ্রামের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে তদন্ত প্রতিবেদনটি দাখিল করা হয় বলে জানিয়েছেন পিবিআই প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার।
জানা গেছে, চট্টগ্রামের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শহীদুল্লাহ কায়সারের আদালতে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই চট্টগ্রাম জেলার পরিদর্শক মো. মুনির হোসেন তদন্ত প্রতিবেদনটি দাখিল করেন। এতে ৪৩ জনকে আসামি করা হয়েছে। ২২ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে। এছাড়া তদন্তের সময় ২১ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করার কথা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। আসামিদের বিরুদ্ধে নরহত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে তদন্ত প্রতিবেদনে। তদন্তে প্রমাণিত ধারা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে- দÐবিধির ১৪৩, ৪৪৮, ৪২৭, ১১৭, ৩২৩, ৩৪১, ৩৪২, ৩০৪, ৫০৬ ও ৩৪। আদালতে দায়ের করা মামলায় হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হককে আসামি করা হলেও তদন্ত প্রতিবেদনে তাকে বাদ দেওয়া হয়েছে। তবে হেফাজতে ইসলামের আরেক যুগ্ম মহাসচিব নাছির উদ্দিন মুনিরকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। আলোচিত হেফাজত নেতা কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদী, সহকারী সাংগঠনিক সম্পাদক মীর ইদ্রিস এবং হাবিব উল্লাহও আসামির তালিকায় আছেন।
তদন্ত প্রতিবেদন যে ৪৩ জনকে আসামি করা হয়েছে তাদের মধ্যে ৩১ জনের নাম মামলার এজাহারে আছে। তদন্তে সম্পৃক্ততা পেয়ে আসামি করা হয়েছে জুনায়েদ বাবুনগরীসহ আরও ১২ জনকে। গত ১২ জানুয়ারি জুনায়েদ বাবুনগরীকে ওই মামলায় জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল পিবিআই টিম।
এজাহারভুক্ত যেসব আসামি তদন্ত প্রতিবেদনেও আছেন তারা হলেন- নাছির উদ্দিন মুনির (৫৫), মীর ইদ্রিস (৫০), হাবিব উল্লাহ আজাদী (৫৫), আহসান উল্লাহ (৪৫), আজিজুল হক ইসলামাবাদী (৪৫), জাকারিয়া নোমান ফয়েজী (৪২), আব্দুল মতিন (২৪), মো. শহীদুল্লাহ (৪০), রিজুয়ান আরমান (৩০), হাসানুজ্জামান (২১), এনামুল হাসান ফারুকী (২২), মীর সাজেদ (২৪), জাফর আহমেদ (৬০), মীর জিয়া উদ্দিন (২৬), আহমদ (২২), মাহমুদ (২৪), আসাদ উল্লাহ (৩০), জুবাইর মাহমুদ (২২), জুনায়েদ আহমেদ (৩০), আনোয়ার শাহ (৩৭), ছাদেক জামিল কামাল (২০), কামরুল ইসলাম কাছেমী (৩২), মো. হাসান (২১), ওবায়দুল্লাহ ওবাইদ (২৫), জুবাইর (২০), মুহাম্মদ (৩৫), আমিনুল হক (৪৫), সোহেল চৌধুরী (৪৩), মবিনুল হক (২১), নাঈমুল ইসলাম খান (২০) এবং সায়েম উল্লাহ (৩৫)। তদন্তে সম্পৃক্ততা পেয়ে যাদের আসামি করা হয়েছে তারা হলেন- মো. জুনায়েদ প্রকাশ জুনায়েদ বাবুনগরী (৭০), শফিউল আলম (৪৩), শিব্বির আহমেদ (২২), আবু সাঈদ (২৬), হোছাইন আহাম্মদ (২৪), তাওহীদ প্রকাশ তৌহিদ (২৩), এরফান (২২), মো. মামুন (২০), আমিনুল ইসলাম (২৫), মাসুদুর রহমান (৩৫), জাহাঙ্গীর আলম (৪৮) এবং নুর মোহাম্মদ (৪৫)।
প্রসঙ্গতঃ ২০২০ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর হেফাজতে ইসলামের প্রতিষ্ঠাতা আমির শাহ আহমদ শফী মারা যান। তিনি হাটহাজারীর আল জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম মাদ্রাসার মহাপরিচালক ছিলেন। মৃত্যুর আগে ওই মাদ্রাসায় ছাত্র বিক্ষোভ হয়। এর মধ্যে শফী গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং এক পর্যায়ে শারীরিক অবস্থার গুরুতর অবনতি হয়। পরে হেলিকপ্টারে ঢাকায় হাসপাতালে নেওয়ার পর তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুর পর শফীর পরিবার এবং হেফাজতে ইসলামের মধ্যে তার অনুসারীরা শফীকে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন। এজন্য তারা বাবুনগরী ও তার অনুসারীদের দায়ী করেন। এরপর ১৭ ডিসেম্বর আহমদ শফীর শ্যালক মোহাম্মদ মঈন উদ্দিন বাদি হয়ে চট্টগ্রামের তৃতীয় জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শিপলু কুমার দে’র আদালতে একটি মামলা করেন। মামলায় মামুনুল হকসহ ৩৬ জনকে আসামি করা হয়। আদালত পিবিআইকে মামলা তদন্তের দায়িত্ব দেন। মামলার আরজিতে অভিযোগ করা হয়, নাছির উদ্দিন মুনির ও মামুনুল হকের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্ররোচনায় মাদ্রাসায় ভাঙচুর করে শাহ আহমদ শফীকে উত্তেজিত করার মাধ্যমে এবং উনাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে না দেওয়ার মাধ্যমে প্রাণে হত্যা করা হয়েছে। মাদ্রাসা অবৈধভাবে গ্রাস করার জন্য পূর্বপরিকল্পিতভাবে বিশ্ববরেণ্য এই ইসলামী চিন্তাবিদকে হত্যা করেছে। মৃত্যুকালে আল্লামা আহমদ শফির বয়স হয়েছিল ১০৪ বছর।