কক্সবাজার প্রতিনিধি
কক্সবাজারের টেকনাফের হ্নীলা উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী শিশু তাউসিফুল করিম রাফিকে অস্ত্র মামলায় কারাগারে পাঠানো নিয়ে তুমুল সমালোচনা চলছে। শিশুর পরিবারের দাবি, হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য রেজাউল করিমকে ঘরে না পেয়ে গত ২৬ নভেম্বর ভোরে তার সন্তান শিশু রাফিকে ধরে নিয়ে যায় পুলিশ। পরে তাকে অস্ত্র মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়।
তবে পুলিশ বলছে, ভোরে রাস্তায় অভিযান চালিয়ে ওই শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়। এ সময় তার হাতে থাকা ব্যাগ থেকে বিদেশি পিস্তল ও গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। যদিও পুলিশের করা মামলার দুই সাক্ষী বলেছেন ভিন্ন কথা।
গত শুক্রবার রাতে এ সংক্রান্ত একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করেছে টেকনাফ থানা পুলিশ। টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন জানিয়েছেন, ২৬ নভেম্বর ভোর ৪ টার দিকে আমার নেতৃত্বে অভিযানের সময় হ্নীলার দরগাহ পাড়ার নুরুল আমিনের বাড়ির সামনে রাস্তা থেকে দু’জন পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় আটক করা হয় তাউসিফুল করিম রাফিকে। তার ডান হাতে থাকা একটি নীল রংয়ের শপিং ব্যাগের ভেতর থেকে ১টি বিদেশি পিস্তল, ৬ রাউন্ড গুলি, ৪০ রাউন্ড নীল রংঙের কার্তুজ উদ্ধার করা হয়। সাক্ষীদের উপস্থিতিতে তা জব্দ করা হয়।
তিনি জানান, শিক্ষার্থী রাফিকে জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায় তার বাবা রেজাউল করিমের অস্ত্র এটি। তার বাবা তাকে এটি পাশের বাসার নুরুল আমিনের বাড়ির পেছনে লুকিয়ে রাখার জন্য দিয়েছেন। তাকে আদালতে পাঠানো হলে আদালত রাফিকে কারাগারের শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠিয়েছেন। পুলিশের দায়ের করা মামলায় তার বাবাকে পলাতক আসামি করা হয়েছে।
ওসি আরও বলেন, মূলত শিশু রাফির বাবা রেজাউল করিম চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও ইয়াবা কারবারের সঙ্গে জড়িত। সন্ত্রাসী কাজের জন্য লাইসেন্সবিহীন এই অস্ত্র মজুদ করেছিল তারা।
তবে রাফির বাবা রেজাউল করিম বলেন, ‘মূলত রাজনৈতিক এবং নির্বাচন নিয়ে একটি পক্ষ পরিকল্পিতভাবে আমাকে না পেয়ে আমার শিশু পুত্রকে অস্ত্র মামলায় ফাঁসিয়েছে। আমার ছেলে খুবই মেধাবি। সে ২০২১ সালে হ্নীলা প্রি ক্যাডেট স্কুল থেকে চতুর্থ শ্রেণিতে ড. গাজী কামরুল ইসলাম বৃত্তি লাভ করে। ২০২১ সালে চতুর্থ শ্রেণিতে হ্নীলা একাডেমি বৃত্তি ও ২০২২ সালে ৫ম শ্রেণিতে জি এইফ এইচ বৃত্তি পায়। চলমান বার্ষিক পরীক্ষায় আমার ছেলে অংশ নিতে পারল না।
মামলার সাক্ষী প্রবাসী নুরুল আমিনের স্ত্রী সুফাইদা আকতার ও মৌলভী জামাল হোসাইনের সঙ্গে কথা বলতে বলেন রেজাউল করিম।
পরে যোগাযোগ করলে মামলার সাক্ষী সুফাইদা আকতার বলেন, ‘ওই দিন মধ্যরাতে পুলিশ আমার ঘরে ঢুকে। কোনো কথা না বলে ঘরের আলমারি খুলে কিছু খুঁজতে থাকে। এক পর্যায়ে আমার আলমিরাতে অস্ত্র পেয়েছে বলে একটি কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে চলে যায়’।
মৌলভী জামাল হোসাইন জানান, ভোরে মসজিদে যাওয়ার পথে পুলিশের ওসি আমাকে দাঁড় করান। ওই সময় রেজাউলের ছেলেকে বাড়ি থেকে বের করতে দেখি। ওসি আমাকে জানান, অস্ত্রসহ শিশুটিকে আটক করেছে। এরপর একটি কাগজে স্বাক্ষর নেন। এটা মামলার সাক্ষী কি না জানি না।
এদিকে স্কুল পড়ুয়া একজন শিশু শিক্ষার্থীকে অস্ত্র মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠানোর ঘটনায় সমালোচনার ঝড় উঠেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন নেটিজনরা। অনেকেই লিখেছেন, এটা পুলিশের নির্বুদ্ধিতা অথবা অতিরিক্ত পাকনামি, তেলবাজি বা দলবাজি।
সাংবাদিক শফিউল্লাহ শফি তার ফেসবুক পেইজে লিখেছেন, এই অবুঝ শিশুটির কাঁধে অস্ত্রের ভার তুলে দিয়ে চালান দেওয়া মোটেই ভালো হয়নি। অস্ত্রের ভার বহন করার শক্তি, জ্ঞান, বুদ্ধি তার কোনোটাই হয়নি। পুলিশের আইন প্রয়োগের পদ্ধতির অভাব নেই। আমি মনে করি ওসির সঠিক সিদ্ধান্ত ও দূরদর্শিতার অভাবে এই ফুটপুটে শিশুটির জীবন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে চলে যাবে।