বান্দরবান প্রতিনিধি
বান্দরবানে বর্ণাঢ্য আয়োজনে শেষ হলো মারমা সম্প্রদায়ের সর্ববৃহৎ সামাজিক উৎসব সাংগ্রাই। গতকাল শুক্রবার ঐতিহ্যবাহী পানি খেলার মধ্যে দিয়ে মারমারা পুরনো বছরকে বিদায় ও নতুন বছরকে স্বাগত জানায়। জেলা শহরের রাজার মাঠে উৎসব উদ্যাপন পরিষদের আয়োজনে এ উপলক্ষে তিনদিনব্যপী জলকেলি উৎসব শেষ হয়। জলকেলি উৎসবে নিজস্ব ঐতিহ্যবাহী নৃত্য-গানসহ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। যুবক-যুবতীদের অংশগ্রহণে অব্যাহত পানিবর্ষণ অন্যদিকে লোকজ সংস্কৃতিসহ স্থানীয় শিল্পীদের মনমাতানো পরিবেশনা পুরো মাঠজুড়ে উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়ে। তবে মূল আকর্ষণ পানি খেলা। পানিভর্তি দুই নৌকার দুইপাশে দাঁড়ানো তরুণ-তরুণী। পরনে ঐতিহ্যবাহী রঙিন পোষাক। বিচারক বাঁশি দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মগ দিয়ে নৌকা থেকে পানি তুলে সামনের পক্ষকে একযোগে নিক্ষেপ করছে। আর বিপরীত পক্ষও দেহে পাল্টা জল ছিটিয়ে তার প্রতিউত্তর দিচ্ছে। এভাবেই বান্দরবান শহরের রাজার মাঠে তরুণ-তরুণীরা পানি ছিটানোর মধ্য দিয়ে মৈত্রীপানি বর্ষণে মেতে ওঠেছে মারমা তরুণ-তরুণীরা। তাদের বিশ্বাস পুরোনো বছরের সব গ্লানি ও দুঃখ জলে মুছে নতুনভাবে পরিশুদ্ধ হবে। মারমাদের প্রাণের উৎসব মাহা সাংগ্রাইং পোয়েঃ। এই উৎসবের প্রধান আকর্ষণ জলকেলি বা পানি খেলা। পুরনো বছরের শুদ্ধ জলের মাধ্যমে দুঃখ গ্লানি মুছে ফেলে নতুন বছরটিকে গ্রহণ করার নামই জলকেলি উৎসব। যাকে মারমা ভাষায় বলা হয় রিলং পোয়েঃ। এই উৎসবকে ঘিরে এরই মধ্যে আনন্দের আমেজ বিরাজ করছে পার্বত্য জেলা বান্দরবানের পাহাড়ি জনপদে। প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় আনন্দ উৎসবে মাতোয়ারা পাহাড়ের মানুষ।
মৈত্রীপানি বর্ষণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পার্বত্য উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা। এসময় পানি খেলায় অংশ নেয়া যুবক যুবতীদের পানি ছিটিয়ে মৈত্রী পানি বর্ষণ অনুষ্ঠানের সূচনা করেন তিনি। এ সময় ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ইতালি ও নেদারল্যান্ড এর রাষ্ট্রদূত, পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান থানজামা লুসাই, জেলা প্রশাসক শামীম আরা রিনি, পুলিশ সুপার শহিদুল্লাহ কাওছার, সদর জোন কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কর্নেল এ এস এম মাহামুদুল হাসান, প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণসহ আয়োজক কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, ১২ এপ্রিল থেকে সপ্তাহব্যপী বান্দরবানে বর্ষবরণ মাহা সাংগ্রাইং পোয়ে উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। এই উৎসবকে ঘিরে আয়োজন করা হয় বিভিন্ন ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, নৌকা বাইচ, রাতে পাড়া মহল্লায় পিঠা উৎসব, খিলা খেলা, সাঙ্গু নদীতে ফুল ভাসানোসহ নানা ইভেন্টে ছোট-বড় সবাই অংশ নিয়ে থাকেন। সব শেষ আয়োজন ছিল জলকেলি উৎসব। এতে মারমা শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণীরা মেতে উঠেছে। পুরোনো বছরের সকল দুঃখ, কষ্ট ও গ্লানি মুছে দিতে একে অপরের উপর মৈত্রীময় পানিবর্ষণে অংশগ্রহণ করেন। এটি এখন শুধু মারমাদেরই না এই উৎসব এখন সার্বজনীন উৎসবে পরিণত হয়েছে।