বান্দরবান প্রতিনিধি
অবৈধভাবে পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে একাধিকবার প্রশাসন অভিযান চালালেও বান্দরবানে যেন থামছেই না পাহাড় কাটার মহোৎসব। নানা অজুহাতে পাহাড় খেকোরা সাবাড় করছে পাহাড়। সর্বশেষ গতকাল বৃহস্পতিবার পাহাড় কাটার দায়ে নাজিম উদ্দিন নামে এক বিএনপি নেতাকে জরিমানা করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর। তিনি প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে দিনে রাতে সমানতালে কাটছেন পাহাড়।
সরেজমিনে দেখা যায়, বান্দরবান সদর উপজেলার বাকীছড়া, বালাঘাটা চড়ুই পাড়া, লেমুঝিড়ি, থোয়াইংগ্য পাড়াসহ এলাকার বিভিন্ন স্থানে স্কেভেটর দিয়ে অবৈধভাবে পাহাড় কাটছেন জেলা যুবদলের নেতা নাজিম উদ্দিনসহ মনির, ফারুক ও জসিম সিন্ডিকেট। বেশ কিছুদিন ধরে এসব এলাকা থেকে স্কেভেটর দিয়ে পাহাড় কেটে ১০-১৫টি ডাম্পার ট্রাকে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বান্দরবান ১৩২/৩৩ কেভি (জিআইএস) গ্রিড উপকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের জায়গা ভরাট কাজে।
এদিকে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি উপেক্ষা করে ট্রাকে করে মাটি পরিবহন করার কারণে আশেপাশের বেশ কয়েকটি সড়ক কর্দমাক্ত হয়ে গেছে। এতে স্থানীয় বাসিন্দাসহ স্কুল ও কলেজগামী শিক্ষার্থীদের চলাচলে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বেড়েছে দুর্ঘটনার শঙ্কা।
থোয়াইংগ্য পাড়া এলাকার বাসিন্দা থুইক্য মার্মা বলেন, আমাদের থোয়াইংগ্য পাড়া স্কুলের পাশের একটি পাহাড় থেকে দিন দুপুরে স্কেভেটর দিয়ে মাটি কাটা হচ্ছে এবং মাটি গুলো ট্রাকে করে বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে যাচ্ছে। এর ফলে পুরো রাস্তা কাঁদায় ভরে গেছে, ছেলে মেয়েরা স্কুলে আসা যাওয়া করতে কষ্ট হচ্ছে। যেকোনো সময় পা পিছলে পড়ে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
একই এলাকার নাম প্রকাশে আরেক বাসিন্দা বলেন, বিএনপির লোকেরা প্রকাশ্যে পাহাড় কাটছে, প্রশাসন তো কিছুই বলতেছে না, আমরা বাঁধা দিয়ে কি হবে। আমাদের বাঁধা তো তারা মানবে না। এভাবে নির্বিচারে পাহাড় কাটতে থাকলে আশেপাশের বেশ কিছু এলাকা সমতল ভূমিতে পরিণত হবে। আমরা চাই দ্রুত এই পাহাড় কাটা বন্ধ করা হোক।
অবৈধভাবে পাহাড় কাটার বিষয়ে যুবদল নেতা নাজিম উদ্দিন বলেন, যেসব স্থানে পাহাড় কাটা হচ্ছে সবগুলো আমার সাইট। পাহাড়ের মাটিগুলো আমরা বান্দরবান ১৩২/৩৩ কেভি (জিআইএস) গ্রিড উপকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের জায়গা ভরাট কাজে ব্যবহার করছি।
পাহাড় কাটার স্থান পরিদর্শন করেছেন বান্দরবান সদর উপজেলার নির্বাহী অফিসার মারুফা সুলতানা খান হীরামনি। তিনি বলেন, শহরের বালাঘাটা এলাকায় অবৈধভাবে পাহাড় কাটা হচ্ছে- এমন খবর পেয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরসহ আমরা ঘটনাস্থলে এসেছি। তবে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেলেও ঘটনাস্থলে পাহাড় কাটায় জড়িত কাউকে পাওয়া যায়নি। তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
নির্বিচারে পাহাড় কাটার কারণে প্রতিবছর বর্ষায় ঘটে পাহাড় ধ্বসের ঘটনা, হয় প্রাণহানীও। তারপরও থামছে না অবৈধভাবে পাহাড় কাটা। গেল একদশকে বান্দরবানে পাহাড় ধ্বসে প্রাণহানী হয়েছে ১০৫ জনেরও অধিক মানুষের।