পূর্বদেশ ডেস্ক
অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে ‘বৈষম্যবিরোধী’ চেতনার বাজেটেও আবাসন খাতে অপ্রদর্শিত আয় বৈধ করার যে সুযোগ রাখা হয়েছিল, তা বাদ দিতে পারে সরকার। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আয়কর অনুবিভাগের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেছেন, ‘তীব্র সমালোচনার মুখে’ এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে নতুন করে অধ্যাদেশ জারি করা হতে পারে।
তিনি বলেন, উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকেও এ নিয়ে তীব্র সমালোচনা হয়েছে। পরে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে যে এটা থাকবে না।
তাছাড়া অপ্রদর্শিত অর্থে আবাসন খাতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে যেভাবে কর বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে, তাতে বাস্তবে কেউ সুবিধা ওই সুবিধা নেবেন না বলেই এনবিআর কর্মকর্তারা মনে করছেন।
তবে এ বিষয়ে সরকারের তরফ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা এখনো আসেনি। এ বিষয়ে কথা বলতে ফোন করা হলে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ ধরেননি। কথা বলার জন্য এসএমএস পাঠালেও তিনি সাড়া দেননি। খবর বিডিনিউজের।
গত ২ জুন অর্থ উপদেষ্টা সালেহ উদ্দিন আহমেদ ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৮৯ হাজার ৯৯৯ কোটি টাকার বাজেট উত্থাপন করেন। সেখানে অপ্রদর্শিত অর্থ আবাসন খাতে বিনিয়োগ করে বৈধ করার সুযোগ রাখা হয়। তবে সেজন্য পাঁচ গুণ পর্যন্ত বেশি কর দিতে হবে।
এর সমালোচনা করে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, এতে বৈধ পথে উপার্জনকারীদের সঙ্গে বৈষম্য তৈরি হবে। তাছাড়া এই পদক্ষেপে সরকারের খুব বেশি আয় হবে বলে মনে হয় না।
আর টিআইবির তরফে বলা হয়, অন্তর্বর্তী সরকারের এ উদ্যোগ রাষ্ট্রীয় সংস্কার, বিশেষ করে দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কারের মূল উদ্দেশ্যের বিপরীত। এই অনৈতিক, বৈষম্যমূলক ও সংবিধান পরিপন্থি।
বাজেট উপস্থাপনের পরদিন রাজধানীর ওসমানী মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে প্রশ্নের মুখে অর্থ উপদেষ্টা স্বীকার করেন যে অপ্রদর্শিত আয় বৈধ করার সুযোগ রাখা ‘ভালো কিছু হয়নি’।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি সেদিন বলেন, অনেকের একটা প্রশ্ন যে-কালো টাকা সাদা করতে দেওয়া হল কেন। কালো টাকা কিন্তু ঠিক কালো টাকা না। আমরা যেটা বলেছি যে-অপ্রদর্শিত টাকা, কোনো কারণে যদি আপনার কাছে থাকে, শুধু ফ্ল্যাটের ব্যাপারে একটা বিধান দেওয়া হয়েছে।
দুটো দিক আছে। একটা নৈতিক দিক-কালো টাকা সাদা করা, আরেকটা হল প্র্যাক্টিক্যাল দিক- টাকা-পয়সা আমরা ট্যাক্স পাব কিনা। দুই দিকেই কালো টাকা সাদা করার বিষয়ে অবশ্যই কিছুৃ সেটা আমরা বিবেচনা করব।
কী বিধান এসেছিল বাজেটে : বর্তমানে ঢাকার গুলশান মডেল টাউন, বনানী, বারিধারা, মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকা ও দিলকুশা বাণিজ্যিক এলাকায় অবস্থিত ২০০ বর্গমিটারের আয়তনের ভবন বা অ্যাপার্টমেন্টে প্রতি বর্গমিটারে ৬ হাজার টাকা বিনিয়োগে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ রয়েছে।
বাজেটে বলা হয়েছিল, আগামী অর্থবছর থেকে প্রতি বর্গফুটে ২ হাজার টাকা করে; অর্থাৎ বর্গমিটারে (১০ দশমিক ৭৬৩৯ বর্গফুট) ২১ হাজার ৫৩০ টাকা খরচ করলে এই সুবিধা পাওয়া যাবে। এবার ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে এসব এলাকায় অনধিক ২০০ বর্গমিটার পর্যন্ত কর দিতে হবে প্রতি বর্গফুটে ৯০০ টাকা করে। তাতে প্রতি বর্গমিটারে কর দিতে হবে ৯ হাজার ৬৮৮ দশমিক ৫ টাকা।
বর্তমানে ঢাকার গুলশান মডেল টাউন, বনানী, বারিধারা, মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকা ও দিলকুশা বাণিজ্যিক এলাকায় অবস্থিত অনধিক ২০০ বর্গমিটার আয়তনের ভবন বা অ্যাপার্টমেন্টে প্রতি বর্গমিটারে ৪ হাজার টাকা বিনিয়োগে কালো টাকা সাদা করা যায়।
বাজেটে বলা হয়, এ ধরনের ভবন বা অ্যাপার্টমেন্ট ও ফ্ল্যাট কেনার ক্ষেত্রে নতুন অর্থবছরে প্রতি বর্গফুটে ১ হাজার ৮০০ টাকা করে, অর্থাৎ প্রতি বর্গমিটারে ১৯ হাজার ৩৭৭ টাকা কর দিতে হবে। এভাবে এলাকা ভেদে প্রতি ক্ষেত্রেই কর হার বাড়ানো হয়েছে।
২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে ১৫ শতাংশ কর পরিশোধ করলে বিনাপ্রশ্নে অপ্রদর্শিত অর্থ, নগদ টাকা ও শেয়ারসহ যে কোনো বিনিয়োগ ঢালাওভাবে বৈধ করার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। একই সঙ্গে জমি, ফ্ল্যাট, অ্যাপার্টমেন্ট কিনে থাকলেও এলাকা অনুযায়ী বেঁধে দেওয়া কর দিয়ে প্রশ্ন ছাড়াই সেগুলো বৈধ করার সুযোগ রাখা হয়েছিল তখন।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের হাল ধরা মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তরফে বারবার বলা হয়েছিল, তারা কালো টাকা বা অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগ করে সাদা করার সুযোগ রাখবে না।
গত সেপ্টেম্বরে সরকার কালো টাকা সাদা করার সুযোগ বাতিল করে। তবে তখন আবাসন খাত তথা ফ্ল্যাট বা ভবনে বিনিয়োগের এ সুযোগ বাতিলের কথা না বলায় এ বিধান বলবৎ থেকে যায়। এবার করের হার পাল্টে হলেও সে সুযোগ রাখার কথা বলা হয়েছিল বাজেটে।