বাণিজ্যিক রাজধানীর দ্রুত বাস্তবায়ন

1

দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকার প্রতিবেদন হতে জানা যায়, দীর্ঘ ১৮ বছর পর দেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস নিজ বাড়ি চট্টগ্রামের হাটহাজারিতে আসছেন। তিনি চট্টগ্রামবাসীর গৌরব মাত্র নন, একজন শ্রেষ্ঠ বাংলাদেশি হিসেবে সমগ্র বিশ্বে খ্যাতিমান। বন্দর নগরী চট্টগ্রামে জন্মগ্রহণ করা এমন এক ব্যক্তিত্ব দেশের প্রধান উপদেষ্টা হওয়া যেমন সমগ্র দেশবাসীর জন্য গর্বের বিষয় তেমনি চট্টলবাসীর জন্য আরো বেশিকিছু। চট্টগ্রামের আর এক কৃতি পুরুষ ফজলুল কাদের চৌধুরী ক’দিনের জন্য নিখিল পাকিস্তানের সরকার প্রধানের দায়িত্ব পেয়ে চট্টগ্রামবাসীকে যেসব উপহার দিয়েছিলেন তা এখনো চট্টগ্রামবাসী শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ ফজলুল কাদের চৌধুরীর অবদানগুলো ইতিহাসে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে আছে। ইতোমধ্যে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস বৃটিশ সরকারের করা, অবহেলিত কালুঘাট সেতু নতুন করে স্থাপনে হাত দিয়েছেন। চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানোর কাজেও অর্থবরাদ্দ দিয়েছেন যা সমগ্রদেশের রাজস্ব আয় ও যোগাযোগে অসামান্য অবদান রাখবে।
একথা দুঃখজনক হলেও সত্য, দেশ স্বাধীনের পর হতে দলীয় সরকারসমূহ চট্টগ্রামকে বাণিজ্যিক রাজধানী ঘোষণা করে চট্টগ্রামবাসীকে প্রতারণা করেছে। কার্যত সরকারিভাবে চট্টগ্রাম বাণিজ্যিক রাজধানীর স্বীকৃতি পায়নি। চট্টগ্রাম বন্দর দেশের সর্ববৃহৎ বন্দর। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য এবং দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে চট্টগ্রাম বন্দর ও চট্টগ্রামের ভূমিকা অপরিসীম। তাই মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা চট্টগ্রামকে বাণিজ্যিক রাজধানীর কার্যকর ঘোষণা দিয়ে বাণিজ্যিক রাজধানী বাস্তবায়নে পদক্ষেপগুলো কার্যকর করবেন এটা সমগ্র চট্টগ্রামবাসীর প্রাণের দাবি।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথমবারের মতো নিজ গ্রামে আসছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আগামী ১৪ মে বিকেলে হাটহাজারীর শিকারপুর ইউনিয়নে বাথুয়া গ্রামে তিনি আসবেন, এমনটাই আশা করা হচ্ছে।
ড. ইউনূস নিজ গ্রামে আসছেন, এই খবরে গ্রামের বাসিন্দারা এলাকার সন্তান বিশ্ববরেণ্য এই ব্যক্তিত্বকে স্বাগত জানাতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন। এর পাশাপাশি তাকে স্বাগত জানাতে প্রশাসনের জোর প্রস্তুতিও চলছে বলে জানা গেছে।
নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানিয়েছে, আগামী ১৪ মে সকালে নগরীতে পূর্ব নির্ধারিত প্রোগ্রাম শেষে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ৫ম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন। সমাবর্তন শেষ করে বিকালে তিনি পৈতৃক বাড়ি বাথুয়া গ্রামে আসবেন। সেখানে পৌঁছে হাজী মোহাম্মদ নজু মিঞা সওদাগর বাড়ির অদূরে নুরালী বাড়ি উপ-ডাকঘর সংলগ্ন কবরস্থানে শায়িত দাদা-দাদির করব জেয়ারত করবেন। এছাড়া পাশর্^বর্তী মাঠে নিকট আত্মীয় ও এলাকাবাসীর সাথে কুশল বিনিময় করবেন।
এদিকে উচ্ছ¡সিত তার আত্মীয়-স্বজন ও এলাকাবাসী তাকে স্বাগত জানাতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন বলে জানান তার চাচাতো ভাই শেখ হারুন। তিনি বলেন, নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাথুয়া গ্রামের কৃতি সন্তান। প্রায় ১৮ বছর পর তিনি পৈতৃক বাড়িতে আসছেন। এটি আমাদের এবং এলাকাবাসীর জন্য গৌরবের। অনেক বছর পর আমরা তাকে দেখবো। তাই আমাদের আনন্দের সীমা নেই। এই অনুভ‚তি প্রকাশ করার মত ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না।
গতকাল রবিবার সরেজমিন দেখা গেছে, আত্মীয়-স্বজন ও এলাকাবাসীর পাশাপাশি প্রধান উপদেষ্টাকে স্বাগত জানাতে উপজেলা প্রশাসনও প্রস্তুতি নিচ্ছে। হাজী মোহাম্মদ দুলা মিয়া সওদাগর সড়কটির সৌন্দর্য বর্ধনের পাশাপাশি নুরালী বাড়ি উপ-ডাকঘর সংলগ্ন ড. ইউনূসের পারিবাবরিক করবস্থানটিতে চুনকামের কাজ চলছে। পাশর্^বর্তী যে মাঠটিতে তিনি আত্মীয়-স্বজন ও এলাকাবাসীর সাথে কুশল বিনিময় করবেন সেই মাঠেরও পরিচর্যা চলছে।
এছাড়া তার বাবার পৈত্রিক নিবাস হাজী মোহাম্মদ দুলা মিয়া সওদাগর বাড়িতেও দেখা গেছে উপজেলা ও পৌরসভা প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বাড়ির নানা স্থাপনায় সৌন্দর্য বর্ধনে বেশ তৎপর।
হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবিএম মশিউজ্জামান বলেন, ১৪ মে বিকেলে মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা মহোদয় গ্রামের বাড়িসংলগ্ন দাদা-দাদির করব জেয়ারত এবং নিকট আত্মীয়-স্বজন ও এলাকাবাসীর সাথে কুশলবিনিময় করবেন বলে কথা রয়েছে। তাই সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশনা অনুয়ায়ী সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
চট্টগ্রামবাসী আশা করে, নেবেল বিজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষ্ঠানে চট্টগ্রামকে বাণিজ্যিক রাজধানী রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি প্রদান করে তা দ্রুত বাস্তবানের কার্যকর ব্যবস্থা করবেন।