পূর্বদেশ ডেস্ক
অর্থ উপদেষ্টা সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরে বাজেটের আকার অহেতুক বড় করবো না। বাজেট ‘খুবই বাস্তবমুখী’ হবে দাবি করে তিনি বলেন, তার লক্ষ্য মূল্যস্ফীতি কমানো, মানুষেরর আয় বাড়ানোর জন্য ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটানো। বাজেট নিয়ে গতকাল বুধবার বিভিন্ন গণমাধ্যমের সম্পাদক ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন অর্থউপদেষ্টা ও বাজেট সংশ্লিষ্টরা। বাজেট প্রণয়নের আগে সবার পরামর্শ নেওয়ার জন্যই এই বৈঠক।
মতবিনিময় সভা শেষে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, বাজেটে মূল্যস্ফীতি, কর্মসংস্থান, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী, শিশুদের শিক্ষাসহ নানা বিষয় আসছে। আমরা বলেছি আগামী বছরের বাজেটটা বাস্তবমুখী করবো। বাজেটের আকার অহেতুক বড় করবো না। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) আকারও খুব একটা বড় হবে না। কিন্তু আমরা কতগুলো বিষয় যেমন মূল্যস্ফীতিটা কমাবো, একই সঙ্গে আমরা আয় যাতে বাড়ে এবং বেসরকারি খাতে যাতে কর্মসংস্থানের প্রসার ঘটে সেটা আমরা চেষ্টা করবো।
উপদেষ্টা বলেন, বাজেটে আমাদের উদ্দেশ্য থাকবে একটি সমতাভিত্তিক এবং কল্যাণমুখী বাজেট যেন আমরা দিতে পারি। বাজেট হবে মধ্যমেয়াদী, কারণ দীর্ঘমেয়াদী বাজেট আমাদের ম্যান্ডেট না। খবর বাংলা ও বিডিনিউজের।
আমি কথাবার্তা কমই বলি, লম্বা বক্তৃতা আমি পছন্দ করি না। বাজেট স্পিচটা এবার ৫০/৬০ পাতার মধ্যেই হবে। এবারের বাজেটটা একটু বাস্তবমুখী করব। মূল্যস্ফীতি কমবে, ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে।
বৈঠকে কর পরিশোধে নাগরিকদের ভোগান্তির কথা তুলে ধরেন কয়েকজন সাংবাদিক। পাশাপাশি করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানো, সারা দেশে করজালের বিস্তৃতি ঘটানোর পরামর্শ আসে।
উপদেষ্টা বলেন, ক্যাশলেস সোসাইটি এবং ফেসলেস ট্যাক্স সিস্টেম প্রয়োজন। আমি মনে করি ট্যাক্স অফিসারদের মুখোমুখি হওয়া আপনাদের জন্য মোটেও বাঞ্ছনীয় নয়। সামনাসামনি হলে টেবিলের নিচ দিয়ে লেনদেন হয়। অটোমেশন নিশ্চিত করার জন্য তথ্য প্রযুক্তির উপরে আরো গুরুত্ব দিতে হবে।
সাংবাদিকরা কী চাইছেন : পরামর্শ পর্বে যুগান্তর সম্পাদক আব্দুল হাই শিকদার বলেন, গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বর্তমান সরকার ভালো করছে। আগামী বাজেটও একটা চ্যালেঞ্জ। ধ্বংসস্তূপ থেকে দেশকে জাগাতে হবে।
কবি আব্দুল হাই শিকদার বলেন, বাজেটের আকার বাস্তবমুখী হোক। মফস্বলে কর দেওয়ার মত অনেক ব্যবসায়ী আছেন। তাদেরকে করের আওতায় আনা যায় কিনা।
ডিবিসি নিউজের সম্পাদক লোটন একরাম বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের স্বপ্ন আমরা দেখতে পাব বাজেটে। করমুক্ত আয়সীমা ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা করার দাবি করছি। ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের ঋণ সহজলভ্য করা উচিত। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির ভাতা কমপক্ষে ৫ হাজার টাকা করা উচিত।
দৈনিক সমকালের সহযোগী সম্পাদক জাকির হোসেন বলেন, সামজিক সুরক্ষার ভাতা বছর বছর সামান্য বাড়ে, এই ভাতাটা এমনভাবে বাড়াবেন, যাতে একটা মানুষ এক মাস চলতে পারে। সিপিডি থেকে তিন হাজার টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
দৈনিক প্রথম আলোর হেড অব অনলাইন শওকত হোসেন বলেন, গত ১৫ বছরে প্রবৃদ্ধি কাগজে কলমে হয়েছে, কিন্তু কর্মসংস্থান হয়নি। প্রতিবছর কত কর্মসংস্থান হচ্ছে তার একটা হিসাব চাই। ঢাউস বাজেট বক্তৃতার অবসান চাই। বাজেট বক্তৃতায় মন্ত্রণালয়ের যে বর্ণনা দেওয়া হয়, তা অহেতুক। এবার এখানেও একটা সংস্কার চাই।
গত ৫ বছরে ৫০টি দেশের বাজেট পড়েছি বা দেখেছি। বাংলাদেশের মত এত বাজে বাজেট বক্তৃতা আর কোথাও হয় না।
এটিএন বাংলার প্রধান নির্বাহী সম্পাদক মনিউর রহমান বলেন, কর্মহীনতা সা¤প্রতিক অস্থিতিশীল আইন শৃংখলা পরিস্থিতির কারণ। কর্মসংস্থান বাড়ানো উচিত। করমুক্ত আয়সীমা ৫ লাখ টাকা করা উচিত।
এসএ টিভির নির্বাহী পরিচালক রাশেদ কাঞ্চন বলেন, বিগত দুর্বৃত্ত সরকারের পর আপনাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বাজেট কি ফ্যাসিবাদী সময়ের মত বড় হবে, নাকি বাস্তবধর্মী হবে সেটা জানতে চাই।
ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভির সহযোগী সম্পাদক শামীম আব্দুল্লাহ জাহেদী বলেন, বাজেটে একটা ‘ন্যায় বিচারের দর্শন’ নিশ্চিত করতে হবে। কালো টাকা থেকে সাদা টাকা আলাদা করতে হবে।
যমুনা টিভির প্রধান বার্তা সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম বলেন, বাজেটে দুর্নীতি বা সিস্টেম লস কীভাবে কমানো যায় তার একটা রূপরেখা দিয়ে যাবেন। বাজেট বাস্তবায়নের একটা রূপরেখা থাকা উচিত।
জনকণ্ঠের সিটি এডিটর ও প্রধান প্রতিবেদক কাওসার রহমান বলেন, কর্মসংস্থান প্রয়োজন, বিনিয়োগ প্রয়োজন। কর কাঠামো সহজ করা দরকার। মানুষকে করের আওতায় নিয়ে আসতে ডিজিটাল সিস্টেম চালু করতে হবে।
চ্যানেল আইয়ের প্রধান বার্তা সম্পাদক মীর মাসরুর জামান বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে শিশুদের মানসিক বিকাশ ব্যাহত হচ্ছে। স্কুল পর্যায়ে মানসিক বিকাশে যেন বিনিয়োগ বাড়ানো হয়।