বাজার ব্যবস্থাকে সিন্ডিকেট মুক্ত করতে হবে

6

দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকার এক প্রতিবেদন হতে জানা যায় দু-একটি সবজি বাদে সব সবজির দাম ৫০ থেকে ৬০ টাকার ওপরে। সবজির এত দাম হলে স্বস্তি মেলে কী করে? আমরা তো ভেবেছিলাম নতুন সরকার ঠিকঠাকভাবে বাজার নিয়ন্ত্রণ করবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কিছুই হচ্ছে না। বাজার এখনও সিন্ডিকেটের দখলেই রয়ে গেছে। ক্রেতাসাধারণের এমনই মতামত। বাজারে সিন্ডিকেট এখনো সক্রিয় আছে। তারা বিগত বছরগুলোতে একটি বিশেষ দলের আনুকূল্যে চলেছে। বর্তমানে অন্য একটি দলের ব্যানারে সিন্ডিকেট ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। চাঁদাবাজির বিষয়টি নিয়ে ব্যবসায়ী নেতারা আমতা আমতা করে মুখ খুলতে দেখা গেছে। চাঁদাবাজদের কোন বিশেষ দল নেই। তারা এখন আর একটি দলের নাম ভাঙ্গিয়ে চাঁদাবাজি করছে। অবৈধ সিন্ডিকেট এবং চাঁদাবাজি বন্ধ করা না গেলে বাজার ব্যবস্থায় স্থিতিশীলতা ফেরানো সম্ভব নয়। এব্যাপারে সরকারের উচ্চমহলের কঠোর পদক্ষেপ জরুরি।
সবজিতে বাজার ভরপুর। অথচ দাম বেশি। দু-তিন রকম সবজি কিনলেই এক-দেড়শো টাকার ওপরে চলে যাচ্ছে। মাছ-মাংস বাদ দিয়ে সবজি কিনে খাবো, তারও উপায় নেই। নি¤œ আয়ের মানুষ খুব কষ্টে জীবন পার করছে। বাজারে শিম, ফুলকপি, বাঁধাকপি, মুলার পাশাপাশি বাজারে বেগুন, পটল, ঢেঁড়স, ঝিঙা ও করলার পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে। কিন্তু এত বাহারি সবজি থাকার পরও দাম আগের মতোই বেশ চড়া। ফলে স্বস্তি মিলছে না ক্রেতাদের। আবার আলু ও পেঁয়াজের শুল্ক কমালেও বাজারে অপরিবর্তিত রয়েছে দাম। বিক্রেতাদের অজুহার বরাবরের মতই তারা বলছে গত কয়েক মাস ধরে সবজির দাম বাড়তি থাকলেও সপ্তাহ ধরে কিছুটা কম দামে বিক্রি হচ্ছে। কয়েকটি সবজির বর্তমানে মৌসুম না হওয়ায় সেগুলোর দাম কিছুটা বাড়তি যাচ্ছে এগুলো কথার কথা মাত্র।
প্রতিকেজি শিম বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত, যা গত সপ্তাহের বাজারে তেমন দেখা মিলেনি। শিমের পাশাপাশি চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে শীতের সবজি বাঁধাকপি ও ফুলকপি। ছোট আকারের ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা পিস, যা গত সপ্তাহে ছিল ৬০ টাকা। আজকের বাজারে বাঁধাকপি বিক্রি হচ্ছে প্রতি পিস ৬০ টাকা করে। তবে তুলনামূলক দাম কমার তালিকায় আছে মুলা। শীতের আগাম এ সবজিটির কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৫০ থেকে ৬০ টাকা।
কয়েক মাস ধরে চড়া দামে বিক্রি হওয়া পাকা টমেটো ও গাজরের দাম এখনও চড়া। পাকা টমেটো আগের সপ্তাহের মতো প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৪০ টাকা কেজি। গাজর বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা কেজি। এদিকে শিমসহ নতুন কিছু সবজি আসায় কিছুটা কম দামে বিক্রি হচ্ছে করলা, ঝিঙে, বরবটি, বেগুন, পটল, ঢেঁড়স, ধুন্দলসহ সব ধরনের সবজি। করলা বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি। একই দামে বিক্রি হচ্ছে বরবটি। বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি। চিচিঙ্গা, ঝিঙে, ধুন্দলের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৭০ টাকার মধ্যে। এ সবজিগুলোর দাম সপ্তাহের ব্যবধানে অপরিবর্তিত রয়েছে। গত সপ্তাহের মতো ছোট আকারের লাউ বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা পিস। বাজারে সবচেয়ে কমদামি সবজি হিসেবে ৩০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে পেঁপে। বাজারে শিম বিক্রি করছি ২০০ টাকা কেজি দরে। গত সপ্তাহে শিম ছিলই না। শিমসহ ২/৪ আইটেমের সবজির বর্তমানে মৌসুম না হওয়ায় কিছুটা বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। আবার নতুন করে এসব সবজি উঠতে শুরু করলে এগুলোরও দাম কমে যাবে। এসব কথার কথা মাত্র। আসলে কাঁচাবাজারে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য ও কাঁচাবাজারে শৃঙ্খলা ফেরানোর কোন কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেনি। টোটাল বাজার ব্যবস্থায় ক্রয়-বিক্রয়ের নিয়ম কাযর্কর করা সময়ের দাবি।
নি¤œ আয়ের মানুষের খাবার ডিম বিক্রি হচ্ছে প্রতি একশ ১২২০ টাকা। অর্থাৎ, প্রতিপিছ ১২ টাকা ২০ পয়সা। সে ডিম ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা করে। তবে খুচরা দোকানে ১৫ টাকার নিচে ডিম বিক্রি হচ্ছে না। আবার দেশে আলু এবং পেঁয়াজের বিদ্যমান বাজারমূল্য ও সরবরাহ বিবেচনায় বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে সার্বিক অবস্থা পর্যালোচনা ক্রমে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আলু আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক কমিয়ে ১৫ শতাংশ করার পাশাপাশি ৩ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক তুলে দিয়েছে। এছাড়া পেঁয়াজ আমদানিতে বিদ্যমান ৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণক‚লক শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার ট্যারিফ কমিশনের প্রস্তাবনা মোতাবেক এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে এনবিআর। অথচ এর একদিন পর (গতকাল শুক্রবার) বিভিন্ন বাজারে দেখা গেছে, খুচরা বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ আগের মতো ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি আলুও আগের মতো ৬০ টাকায় প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে।
পাইকারী ও খুচরা বাজারেও সামঞ্জস্য দেখা যায় না। এর আগে বৃহস্পতিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ গত ১ সেপ্টেম্বর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক বৈঠকে পেঁয়াজ, আলু, সার ও কীটনাশকের ন্যায় নিত্যপণ্যের শুল্ক ও ম‚ল্য সংযোজন কর কমাতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে এনবিআরকে নির্দেশ দেন। প্রজ্ঞাপনে আলুর আমদানিতে বিদ্যমান ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক কমিয়ে ১৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে এবং এর সঙ্গে প্রযোজ্য ৩ শতাংশ রেগুলেটরি ডিউটি সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করা হয়েছে। এছাড়া পেঁয়াজের ওপর প্রযোজ্য ৫ শতাংশ রেগুলেটরি ডিউটি সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করা হয়েছে। জনগণ চলতি বছরের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত এই সুবিধা বহালের আশা করলেও তা কতটুকু বাস্তবে দেখা যাবে তা সময় বলে দেবে। নিয়মিত বাজার মনিটরিং চালু রাখলেই নিত্যপণ্যের আমদানি শুল্ক ও রেগুলেটরি ডিউটি প্রত্যাহারের ফলে আলু ও পেঁয়াজের দাম কমে যাবে এবং ভোক্তাদের স্বস্তি দেবে এমন অভিমত ক্রেতাসাধারণের।