রাহুল দাশ নয়ন
হাইড্রক্সি ক্লোরোকুইন। মরণব্যাধি সিস্টেমিক লুপাস ইরাইদেমেটোসাস (এসএলই) রোগের প্রধান ওষুধ হিসেবে এটি পরিচিত। কোন কোন ক্ষেত্রে ম্যালেরিয়ার জন্যও রোগীদের এ ওষুধ দেয়া হয়।
বাংলাদেশে ইনসেপটা, ডেল্টা ও জেনিথ ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড ভিন্ন ভিন্ন নামে এ জাতীয় ওষুধ বাজারজাত করে। সম্প্রতি করোনা সংক্রমিত রোগীরা এ জাতীয় ওষুধ সেবনে সুস্থ হওয়ার খবর ছড়ালে বাজারে ওষুধের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি হয়। কিছু ফার্মেসিতে হাইড্রক্সি ক্লোরোকুইন জাতীয় ওষুধ মিললেও দাম নেয়া হচ্ছে পাঁচগুণ বেশি। অথচ এখনো পর্যন্ত করোনা রোগীদের এ ওষুধ দেয়া ও কার্যকারীতা নিয়েও সুস্পষ্ট কোন নির্দেশনা পাননি চিকিৎসকরা। আজ থেকে এ জাতীয় ওষুধটি আবারো বাজারে ছাড়ছে বলে জানিয়েছেন ইনসেপটা।
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. শেখ ফজলে রাব্বী পূর্বদেশকে বলেন, ‘আমরা করোনা চিকিৎসায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সকল নির্দেশনা অনুসরণ করছি। উনারা যেভাবেই সুপারিশ করছেন আমরা সেভাবেই এগিয়ে যাচ্ছি। হাইড্রক্সি ক্লোরোকুইন ও এজিথ্রোমাইসিন জাতীয় কোন ওষুধ আমাদের হাসপাতালে নেই। এমন ওষুধ মজুদ করার কোন ধরনের নির্দেশনাও পাইনি। করোনা রোগীদের এ ওষুধ দেয়ার বিষয়েও আমাদের কাছে তথ্য নেই। গলা ব্যাথা ও জ্বরের জন্য স্বাভাবিক ওষুধই দেয়া হচ্ছে। এখন কেউ যদি এসব ওষুধ করোনার ওষুধ বলে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে আমি বলবো, এটা আমাদের বাঙালিদের অভ্যাস।’
সূত্র জানায়, করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় হাইড্রক্সি ক্লোরোকুইন ও এজিথ্রোমাইসিন ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ওষুধ প্রশাসন। এ ওষুধ সাতদিন সেবনে অধিকাংশ রোগী সুস্থ হয়েছে বলে প্রচার হয়।
বাংলাদেশ সোসাইটি অফ মেডিসিনের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরাও বিশ্বব্যাপী করোনা আক্রান্ত দেশগুলোর চিকিৎসা পদ্ধতি এবং নিজেদের অভিজ্ঞতা পর্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্র্যালোচনা করে দেশে করোনা আক্রান্তদের সুচিকিৎসা নিশ্চিতে স্ট্যান্ডার্ড ট্রিটিমেন্ট গাইডলাইন সুপারিশ করে। ওই সুপারিশেও হাইড্রক্সি ক্লোরোকুইন ওষুধের সাথে এজিথ্রোমাইসিন সেবনের পরামর্শ দেয়া হয়। আবার আমেরিকায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের অপরীক্ষিত ওষুধ হিসেবে হাইড্রক্সি ক্লোরোকুইন দেওয়ায় অনেকের মৃত্যু হচ্ছে বলে মেডিকেল কমিউনিটিতে আলোচনা হচ্ছে।
নিউইয়র্কে করোনা ভাইরাসের রোগীদের ওপর হাইডক্সি ক্লোরোকুইন ব্যবহার করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত হাইড্রক্সি ক্লোরোকুইন একমাত্র ওষুধ, যা এই রোগে কাজ করতে পারে।
স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. আ ম ম মিনহাজুর রহমান পূর্বদেশকে বলেন, ‘সরকারের কাছে হাইড্রক্সি ক্লোরোকুইন জাতীয় ওষুধের পর্যাপ্ত মজুদ আছে। সরবরাহ চেইনটা নিশ্চিত করতে হবে। সরকার এ মুহূর্তে ওষুধটি ফার্মেসিতে দেয়ার পক্ষে নয়। সরকার ওষুধটি ইডিসিএলের মাধ্যমে বাজারজাত করতে চাইছে। ওষুধটি অবশ্যই এসএলই রোগীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এখন কোন ফার্মেসিতে ওষুধটি পাওয়ার সম্ভাবনা কম।’
জানা যায়, বাংলাদেশের বাজারে ইনসেপটা ফার্মার রিকোনিল, ডেল্টা ফার্মা রিইউমাফ্লেক্স, জেনিথ ফার্মা রোকুইন নামে হাইড্রক্সি ক্লোরোকুইন ওষুধ পাওয়া যেতো। হাইড্রক্সি ক্লোরোকুইন জাতীয় ওষুধ এসএলই রোগীদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় সম্প্রতি ঢাকায় একটি কোম্পানির বুথ খোলা হয়েছে। সেখানে চিকিৎসকের পরামর্শ কপি নিয়ে যোগাযোগ করলেই ওষধু দেয়া হচ্ছে। তবে ইনসেপটা কোম্পানি নিজেদের ওষুধটি আজ থেকে আবার বাজারজাত শুরু করছে বলেও জানিয়েছেন কোম্পানি সংশ্লিষ্টরা।
ইনসেপটা ফার্মাসিউটিক্যালসের চট্টগ্রাম ডিপো ইনচার্জ মো. আখতারুজ্জামান খান পূর্বদেশকে বলেন, ‘আগামীকাল (আজ) থেকে আমাদের ওষুধটি বাজারে পাওয়া যাবে। সন্ধ্যা থেকেই প্রতিটি ওষুধের দোকানে পণ্যটি যথারীতি পাওয়া যাবে। আমরা পর্যাপ্ত ওষুধ বাজারে ছাড়ছি। যা লাগবে তাই নিতে পারবেন।’
বাংলাদেশ কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতি চট্টগ্রাম জেলার সাধারণ সম্পাদক লায়ন আশীষ ভট্টচার্য্য পূর্বদেশকে বলেন, ‘ইনসেপ্টা ও ড্রাগ কোম্পানির উৎপাদিত এ জাতীয় সব ওষুধ সরকারকে দিয়েছে। যে কারণে কোন ফার্মেসিতে এসব ওষুধ নেই। করোনা মারাত্মক আকার ধারণ করার শঙ্কায় ওষুধগুলো সরকারি হাসপাতালে রাখা হয়েছে। বাজারে কোন ওষুধ নেই। কোন ভোক্তা যাতে ওষুধগুলো নিয়ে বিভ্রান্তিতে না পড়েন সেজন্য ওষুধ প্রশাসন আগেভাগেই সতর্ক করেছেন। শুধুমাত্র সরকারি হাসপাতালে ওষুধগুলো পাওয়া যাবে।’