বাজারে কোরবানির পশু আসছে তবে শুরু হয়নি বিক্রি

2

এম এ হোসাইন

ঈদকে সামনে রেখে জমে উঠতে শুরু করেছে কোরবানির পশুর হাট। প্রতিদিনই বাড়ছে গরু, ছাগল, মহিষ ও ভেড়ার সরবরাহ। স্থানীয় খামার ছাড়াও দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ট্রাক ও লরি ভর্তি করে গরু আসছে নগর-জেলার হাটগুলোতে। তবে গত বৃহস্পতিবার থেকে টানা বর্ষণের কারণে ক্রেতাদের উপস্থিতি কিছুটা কম। বিক্রেতাদের দাবি, আবহাওয়া স্বাভাবিক হলে ক্রেতার ভিড় বাড়বে এবং বেচাকেনা পুরোদমে জমে উঠবে।
চট্টগ্রামে এবার পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে নগর-জেলার ২২৮টি স্থায়ী ও অস্থায়ী হাট বসছে। এসব হাটে গরু, ছাগল, মহিষ, ভেড়া ছাড়াও এবার বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে এসেছে মরুভ‚মির উট ও দুম্বা। বিশেষ করে মইজ্জারটেক হাটে দেখা মিলেছে আরব আমিরাত থেকে আনা অ্যারাবিয়ান উটের, যা দেখতে প্রতিদিন ভিড় জমাচ্ছেন হাজারো দর্শনার্থী। কেউ কেউ আবার দাম জেনে কিনতেও আগ্রহ দেখাচ্ছেন।
মইজ্জারটেক পশুর হাটে গরু নিয়ে আসা সাতকানিয়ার খামারি জসিম উদ্দিন জানান, আমরা চারটি গরু এনেছি, কিন্তু গত দুই দিনে মাত্র একজন ক্রেতা দরদাম করেছেন। বৃষ্টির কারণে মাঠে কাদা, কেউ সহজে হাটে আসতে চাচ্ছে না। তবে আজ (শনিবার) রোদ উঠেছে, হয়তো বিকেলে কিছু বেচাকেনা হবে।
এদিকে পশুর হাটগুলোতে কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, ময়মনসিংহ, রাজশাহী, নওগাঁসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিদিনই ট্রাকে করে গরু আসছে। স্থানীয় খামারিরাও ব্যাপক হারে গরু প্রস্তুত করেছেন। জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের তথ্যমতে, চট্টগ্রাম জেলায় এবার কোরবানির পশুর চাহিদা প্রায় ৯ লাখ।এর মধ্যে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পশুর সংখ্যা ৮ লাখ ৬০ হাজার। ঘাটতি রয়েছে প্রায় ৩৫ হাজার। এই ঘাটতি পূরণে পার্বত্য জেলা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পশু আনা হয়েছে। বিশেষ করে কুষ্টিয়া, ময়মনসিংহ, রাজশাহী ও ঝিনাইদহ থেকে বিপুল পরিমাণ গরু এসেছে চট্টগ্রামে।
হাটে গরু কিনতে আসা আব্দুল কাদের বলেন, শুক্রবার বের হতে চেয়েছিলাম, বৃষ্টিতে আর হয়নি। আজ (শনিবার) একটু রোদ উঠাতে বের হয়েছি গরু দেখতে। দাম কিছুটা বেশি মনে হচ্ছে, তবে গরুর সরবরাহ ভালো। সেজন্য আরো দু-একদিন পর কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
হাটগুলোতে গরুর পাশাপাশি ছাগল ও ভেড়ার সরবরাহও রয়েছে প্রচুর। তবে এবার বিশেষ চমক হিসেবে আছে উট ও দুম্বা। এসব পশুর ছবি ও ভিডিও ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে গেছে।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) ও জেলা প্রশাসনের তত্ত¡াবধানে নগরীতে এবার মোট ১৩টি পশুর হাট বসেছে। এর মধ্যে তিনটি স্থায়ী এবং ১০টি অস্থায়ী। ব্যবসায়ীরা জানান, পশুর দামে কিছুটা ঊর্ধ্বগতি আছে। এক থেকে দেড় মণ ওজনের গরুর দাম ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। দুই থেকে চার মণ ওজনের গরু মিলছে দেড় থেকে আড়াই লাখ টাকায়। পাঁচ মণ ও তার বেশি ওজনের গরুর দাম তিন লাখ থেকে ছয় লাখ টাকা পর্যন্ত হাঁকা হচ্ছে। তবে এবার গরুর দাম বেশি হওয়ায় সাধারণ ক্রেতারা কিছুটা হতাশা প্রকাশ করছেন।
মইজ্জারটেক হাটে গরু কিনতে আসা চকবাজার এলাকার বাসিন্দা মনিরুজ্জামান বলেন, গতবারের তুলনায় এবার পশুর দাম অনেক বেশি। আগে যে গরু ৮০-৯০ হাজার টাকায় পাওয়া যেত, এবার তা এক লাখের ওপরে হাঁকছে। তবে হাটে গরুর সরবরাহ ভালো, তাই দরদামের সুযোগ আছে।
বিক্রেতারা অবশ্য এর পেছনে খাদ্যদ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি, গরু লালন-পালনের খরচ এবং পরিবহন ব্যয়ের কথা বলছেন। সাতকানিয়া থেকে গরু নিয়ে আসা বিক্রেতা নুর হোসেন বলেন, আমরা সারা বছর গরু লালন-পালন করি। খাদ্যের দাম দ্বিগুণ হয়েছে। গরু আনতেও ট্রাক ভাড়া আগের চেয়ে বেশি লাগছে, তাই দাম কিছুটা বেশি না হলে লোকসান হবে।
পশুর হাটে নিরাপত্তা ও সেবার বিষয়েও নেওয়া হয়েছে বাড়তি ব্যবস্থা। জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় থেকে জানা গেছে, এবারের কোরবানির মৌসুমে ৬৬টি ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। তারা পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা, হাটে চিকিৎসাসেবা, ভ্রাম্যমাণ চিকিৎসা ইউনিট ও স্বাস্থ্য সংক্রান্ত তথ্যসেবা দিয়ে যাচ্ছে। হাটে জালনোট শনাক্তে বসানো হয়েছে মেশিন এবং মোতায়েন রয়েছে র‌্যাব, পুলিশ ও আনসার সদস্য।
ক্রেতাদের সুবিধার্থে হাটে বসানো হয়েছে সান্ধ্যকালীন ব্যাংক বুথ। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী নগরের গুরুত্বপূর্ণ পশুর হাটে ব্যাংক লেনদেনের জন্য বিশেষ বুথ চালু রাখা হয়েছে। এতে বিক্রেতা ও ক্রেতারা সহজে আর্থিক লেনদেন করতে পারছেন।