বাকলিয়ায় ‘বার্মা জসিম’র বিরুদ্ধে জায়গা দখলের অভিযোগ

2

নিজস্ব প্রতিবেদক

নগরীর বাকলিয়া থানাধীন বাস্তুহারা খেতচর এলাকায় জায়গা দখলের অভিযোগ উঠেছে এলাকার আলোচিত ব্যক্তি ও বাস্তুহারা বহুমুখী সমবায় সমিতির সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ জসিম উদ্দিনের (প্রকাশ বার্মা জসিম) বিরুদ্ধে।
অভিযোগ রয়েছে, তিনি দলবল নিয়ে এক ব্যক্তির জায়গা দখল করে নিয়েছেন। এই জায়গা দখলে নেওয়ার জন্য তাকে সহযোগিতা করেছেন ৩৫ নং বক্সিরহাট ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মো. আরমান ও টুটুল বাক্কার প্রকাশ বার্মা বাক্কার।
ঘটনাটি ঘটে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে। বাস্তুহারা বহুমুখী সমবায় সমিতির বর্তমান সাধারণ সম্পাদক সোহেল কুটুম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, “জসিম উদ্দিন দলবল নিয়ে এসে পুরো জায়গাটি জোরপূর্বক দখল করার চেষ্টা করে। জায়গাটি সাবেক বেসরকারি কারা পরিদর্শক আব্দুল মান্নানের। এভাবে কারও সম্পত্তি দখল করা কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা বিষয়টি পুলিশকে জানিয়েছি, তারা ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।”
বাকলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইখতিয়ার উদ্দিন পূর্বদেশকে বলেন, “প্রাথমিক তথ্যে জানা গেছে, জসিম উদ্দিন আব্দুল মান্নানের কাছ থেকে সাড়ে তিন গন্ডা জায়গা কিনেছিলেন। কিন্তু অভিযোগ পাওয়া গেছে, তিনি এর বাইরে অতিরিক্ত জায়গাও দখল করেছেন। বিষয়টি যাচাইয়ের জন্য পুলিশ ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট পেলে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
জমির মূল মালিক আব্দুল মান্নান জানান, “জসিমের সঙ্গে আমার কিছু লেনদেন ছিল। তার ধারাবাহিকতায় আমি তাকে ৭ লাখ টাকায় প্রায় সাড়ে তিন গন্ডা (প্রায় ৩০২৫ বর্গফুট) জায়গা বিক্রি করি, যার বাজারমূল্য ছিল কমপক্ষে ১৫ লাখ টাকা। কিন্তু ক্রয় করা অংশ বুঝে না নিয়ে তিনি আমার আরও প্রায় তিন গন্ডা জায়গা দখল করে নিয়েছেন। বিষয়টি আমি সমিতি ও থানাকে জানিয়েছি।”
অভিযুক্ত মোহাম্মদ জসিম উদ্দিনের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “মান্নানের জায়গা আদৌ আছে কি না আগে সেটা যাচাই করুন। আমি কারও জায়গা দখল করিনি, এসব ভিত্তিহীন কথা। আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে।”
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন মূলত মিয়ানমারের আরাকান (বর্তমান রাখাইন) অঞ্চলের বাসিন্দা। ১৯৯৫-৯৬ সালের দিকে তিনি মিরসরাইয়ে এসে বসবাস শুরু করেন। পরে ২০০২ সালে জীবিকার প্রয়োজনে চট্টগ্রাম শহরে আসেন এবং ফিরিঙ্গিবাজার এলাকায় একটি করাতকল-এ কাজ শুরু করেন। কয়েক বছর পর ২০০৫ সালে তিনি বাকলিয়ার খেতচর এলাকায় বাস্তুহারা বহুমুখী সমবায় সমিতির সদস্য হিসেবে যোগ দেন এবং ২০০৯ সালে সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন।
সমিতির একাধিক সদস্য জানান, সভাপতি হওয়ার পর থেকেই জসিম সমিতির মধ্যে নিজস্ব প্রভাববলয় গড়ে তোলেন। অভিযোগ রয়েছে, তিনি নিজস্ব ‘চক্র’ ব্যবহার করে কর্ণফুলী নদীর উত্তর পাড়ে শাহ আমানত সেতুর সংলগ্ন এলাকায় বিশাল জায়গা দখল করে সেখানে বিভিন্ন স্থাপনা গড়ে তোলেন। এর মধ্যে রয়েছে দুটি মসজিদ, একটি মন্দির, একটি বিদ্যালয় ও প্রায় শতাধিক দোকানঘর। ওইসব দোকান ভাড়া দিয়ে তিনি মোটা অঙ্কের অর্থ আয় করছেন বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের তৈরি করা কর্ণফুলী নদীর তীর দখলদারদের তালিকায়ও ‘বাস্তুহারা জসিম’ নামে তার নাম অন্তর্ভুক্ত রয়েছে বলে জানা গেছে। তালিকা অনুযায়ী, জসিম নদীর তীরবর্তী সরকারি জমি দখল করে সেখানে বাণিজ্যিক স্থাপনা ও শুঁটকি পল্লী স্থাপন করেছেন।
স্থানীয় একাধিক বাসিন্দা বলেন, জসিমের নেতৃত্বে একটি প্রভাবশালী মহল দীর্ঘদিন ধরে এলাকাজুড়ে দখলবাজি চালিয়ে যাচ্ছে। কেউ প্রতিবাদ করলে ভয়ভীতি ও হামলার শিকার হতে হয়। বেশ কয়েকবার এলাকাবাসীর সঙ্গে সংঘর্ষ এবং মামলা-মোকদ্দমার ঘটনাও ঘটেছে।