বাইরে নয়, দেশের সমস্যা দেশেই সমাধান করতে হবে

5

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের উদ্দেশে বলেছেন, বাংলাদেশের সমস্যা বাংলাদেশের মাটিতেই সমাধান করতে হবে। দেশের বাইরে গিয়ে বেশি কথা না বলে দেশেই বলা উচিত। কারণ সমস্যার সমাধান দেশের মানুষের হাতেই। বাইরের শক্তির কাছে সমাধান নেই। সংস্কার, বিচার সবকিছুর সমাধান একটাই, তা বাংলাদেশের জনগণ। সমাধান দেওয়ার একটাই অস্ত্র, সেটা জনগণ।
তিনি গতকাল শুক্রবার নগরীর মুরাদপুরে এলজিইডি ভবন মিলনায়তনে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে মহানগর বিএনপির স্মরণসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন।
মহানগর বিএনপির আহব্বায়ক আলহাজ এরশাদ উল্লাহর সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব নাজিমুর রহমানের পরিচালনায় সভায় প্রধান আলোচক ছিলেন পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. এসএম আবদুল আউয়াল। বিশেষ অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম।
নির্বাচিত সরকার ছাড়া জনগণের প্রত্যাশা পূরণ সম্ভব নয় জানিয়ে আমীর খসরু বলেন, আমরা নির্বাচনের অপেক্ষায় আছি। একটি নির্বাচিত সরকার না আসা পর্যন্ত জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করা সম্ভব নয়। অনির্বাচিত সরকারের পক্ষে এসব বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। জনগণের সমর্থন ব্যতীত কোন কিছুই সম্ভব নয়। তাই যত দ্রুত সম্ভব দেশে নির্বাচিত সরকারের প্রয়োজন। এটা কোনো দল চায় কি চায় না, সেটা মুখ্য নয়।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে জর্জ ওয়াশিংটনের সঙ্গে তুলনা করে খসরু বলেন, বিশ্বের অল্প কয়েকজন ব্যক্তিত্বের মধ্যে জিয়াউর রহমান ছিলেন একজন। জিয়াউর রহমান প্রথমে দেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছেন। স্বাধীনতা ঘোষণা করতে যে সাহস ও ঝুঁকি একজন লিডার নেন, সেটা একটা বিশাল ব্যাপার। দ্বিতীয়ত হচ্ছে তিনি একজন বিশ্বমানের সংস্কারক, একজন রাজনীতিবিদ,একজন দার্শনিক, একজন সমাজ গড়ার কারিগর। তিনি বাংলাদেশের মানুষের পরিচয় দিয়েছেন, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি দিয়েছেন, জাতির দিকদর্শন দিয়েছেন। সবকিছুর সমন্বয়ে চিন্তা করলে দেখা যাবে এই মানের বিশ্বে মাত্র কয়েকজন মানুষ রয়েছেন। বাংলাদেশের কারও সঙ্গে জিয়াউর রহমানের তুলনা করার প্রয়োজন নেই।
বিএনপিকে দেশপ্রেমিক দল আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, দলটি দেশপ্রেমের ওপর ভিত্তি করে সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশকে গড়ার জন্য এই দলের সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশকে স্বাধীন-সার্বভৌম দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য বিএনপি সৃষ্টি হয়েছে। এটি সবার মধ্যে ধারণ করতে হবে।
তিনি বলেন, একটি দেশের শিক্ষা, স্বাস্থ্য থেকে শুরু করে সংস্কৃতি সবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে আমাদের সংস্কৃতির জায়গাটি অনেকটা পিছিয়ে পড়েছে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ‘ক্রিয়েটিভ ইন্ডাস্ট্রি’ নামক একটি উদ্যোগ নিয়েছেন। এতে নাটক, সংগীত, চিত্রশিল্প, কামার-কুমার, তাঁতি; যারা সংস্কৃতিভিত্তিক কাজ করেন, তাদের একটি বিশাল অর্থনৈতিক পরিসরে অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে। বাইরের সংস্কৃতি থেকে মুক্তি পেতে হলে নিজেদের সংস্কৃতিকেই এগিয়ে আনতে হবে।
তিনি বলেন, বিএনপি এখন যে প্রস্তুতি নিচ্ছে, তা অত্যন্ত পরিকল্পিত। জনগণ যদি আমাদের নির্বাচিত করে, তাহলে আমরা প্রথম দিন থেকেই কাজ শুরু করতে পারব। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অর্থনীতি প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে আমরা নির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছি। এই পরিকল্পনার কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে শহীদ জিয়াউর রহমানের দর্শন।
প্রধান আলোচক ড. এসএম আবদুল আউয়াল বলেন, ২৫ মার্চের কালোরাত্রিতে জাতি যখন দিশেহারা তখন এগিয়ে এসেছিলেন শহীদ জিয়াউর রহমান। চট্টগ্রামের ষোলশহর বিপ্লব উদ্যান থেকে তিনি পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা দিয়ে তিনি চুপ করে বসে ছিলেন না। তিনি মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছেন আবার অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেছেন। শেষ পর্যন্ত যুদ্ধের মাঠে থেকে দেশকে স্বাধীন করেছেন। স্বাধীনতার পরের সরকারের একদলীয় শাসন ব্যবস্থা থেকে দেশকে বের করে নিয়ে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মাহবুবের রহমান শামীম বলেন, শহীদ জিয়া স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন বলেই আমরা একটি বাংলাদেশ পেয়েছি। তিনি বাকশালী দুঃশাসন থেকে জাতিকে মুক্ত করে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এখন পর্যন্ত দেশের যে মৌলিক উন্নয়নগুলি হয়েছে তার ভিত্তি শহীদ জিয়া গড়েছিলেন। বিএনপি দীর্ঘ ১৭ বছর একটি ভোটবিহীন স্বৈরাচারর শাসকের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছে। অত্যাচার-নির্যাতন সহ্য করে এখনও মাঠে ঠিকে আছে।
সভাপতির বক্তব্যে আলহাজ এরশাদ উল্লাহ বলেন, শহীদ জিয়া ছিলেন একজন ক্ষণজন্মা পুরুষ। তার সততা ও দেশপ্রেমের ব্যাপারে তার শত্রুরাও প্রশ্ন তুলতে পারেনি। মহান মুক্তিযুদ্ধে তার ঐতিহাসিক স্বাধীনতার ঘোষণা এবং সম্মুখ সমরে তার বীরোচিত অংশগ্রহণ জাতিকে স্বাধীনতা অর্জনে অনুপ্রাণিত করেছিল। তার শাসনামলে দেশে অর্থনৈতিক মুক্তি, সামাজিক ন্যায়বিচার এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
এএম নাজিম উদ্দীন বলেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ছিলেন বাংলাদেশের উজ্জ্বল নক্ষত্র। স্বাধীনতা উত্তর দুর্ভিক্ষ পীড়িত জনগণ যখন হতাশা আর অনিশ্চয়তায় নিমজ্জিত, ঠিক তখনি তার আবির্ভাব ঘটেছিল ধুমকেতুর মত। তিনি ছিলেন বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের প্রবক্তা ও বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাতা।
আবুল হাশেম বক্কর বলেন, দেশের সংকটময় মুহূর্তে ত্রাণ কর্তা হিসেবে শহীদ জিয়া বার বার দেশকে মুক্ত করেছেন। তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন আবার অস্ত্রহাতে যুদ্ধও করেছেন। তিনি ছিলেন ১ নং সেক্টরের কমান্ডার, এরপর জেড ফোর্সের অধিনায়ক। দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় তার অবদান ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লিখা থাকবে।
উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটির সদস্য ইসরাফিল খসরু মাহমুদ চৌধুরী, মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক আলহাজ এমএ আজিজ, কাজী বেলাল উদ্দিন, সফিকুর রহমান স্বপন, হারুন জামান, নিয়াজ মোহাম্মদ খান, আর ইউ চৌধুরী শাহিন, শওকত আলম খাজা, ইয়াছিন চৌধুরী লিটন, আহম্মেদুল আলম চৌধুরী রাসেল, শিহাব উদ্দিন মুবিন, মনজুরুল আলম, আহবায়ক কমিটির সদস্য ইসকান্দর মির্জা, মো. কামরুল ইসলাম, আনোয়ার হোসেন লিপু, মামুনুল ইসলাম হুমায়ুন, মো. জাফর আহম্মদ, গাজী আইয়ুব, মাহবুব রানা, মো. আবু মুসা, মো. আজম, মো. ইসমাইল বালি, মো. আবু ইউছুপ, নগর যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহেদ, বিভাগীয় শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক শেখ নুরুল্লাহ বাহার, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব জমির উদ্দিন নাহিদ। বিজ্ঞপ্তি