বাংলাদেশ ব্যাংকের আয় বেড়েছে সাড়ে ৪০ শতাংশ

2

এক অর্থবছরের ব্যবধানে বাংলাদেশ ব্যাংকের মোট আয় বেড়েছে ৪০ হাজার কোটি টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে পরিচালন ব্যয় বাদে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিট মুনাফা করেছে ১৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা। তার আগে ২০২২-২৩ অর্থবছরে নিট মুনাফা ছিল ১০ হাজার ৭৪৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে আয় বেড়েছে ৪০ দশমিক ৫০ শতাংশ। বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকের কার্যালয়ে বোর্ড সভা অনুষ্ঠিত হয়। বোর্ড সভায় বিষয়টি উত্থাপন করা হয়। খবর বিডিনিউজের।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক বলেন, বোর্ড মিটিংয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের বার্ষিক আয়-ব্যয়ের বিষয়টি উত্থাপন করা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন ঊর্ধতন কর্মকর্তা বলেছেন, গত অর্থবছর বাংলাদেশ ব্যাংক সবচেয়ে বেশি আয় করেছে রেপো, ষ্পেশাল রেপোর বিপরীতে বিভিন্ন ব্যাংককে দেওয়া স্বল্পমেয়াদি ধারের বিপরীতে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক গত অর্থবছরে ৩২ লাখ ২১ হাজার কোটি টাকা ধার দিয়েছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে, যা আগের সাত বছরে দেওয়া মোট ধারের পরিমাণকে ছাড়িয়ে যায়।
বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে গত অর্থবছরের আর্থিক হিসাব বিবরণী অনুমোদন দেওয়া হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সভাকক্ষে গভর্নর আহসান এইচ মনুসর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে অন্য পরিচালকরা উপস্থিত ছিলেন।আর্থিক হিসাব বিবরণী অনুসারে, সব ধরনের খরচের পর গত অর্থবছর নিট আয় থেকে ১৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে সরকারি কোষাগারে।
বাংলাদেশ ব্যাংক রেপো, স্পেশাল রেপোর বিপরীতে বিভিন্ন ব্যাংককে দেওয়া স্বল্পমেয়াদি ধারের বিপরীতে আয়ের পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা বিক্রি ও সরকারকে ঋণ দেওয়াসহ অন্যান্য উপায়ে আয় করে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের নিট ঋণ দেখানো হয় ৯৪ হাজার ২৮২ কোটি টাকা। এর মধ্যে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে দেখানো হয় ৯৭ হাজার ৯২৭ কোটি টাকা। আর বাংলাদেশ ব্যাংকে ঋণ না বেড়ে উল্টো ৬ হাজার ৪৫৭ কোটি টাকা কমেছে।
তবে সাবেক গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের সময়ে তথ্য গোপন করে ৬২ দিনে সরকারকে টাকা ছাপিয়ে প্রায় ৪১ হাজার কোটি টাকার ঋণ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
যদিও বাংলাদেশ ব্যাংকের মাসিক প্রতিবেদনে দেখাচ্ছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সরকারের ব্যাংক থেকে নিট ঋণ ছিল ৮২ হাজার ৬০৯ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংক সরাসরি ঋণ সরবরাহ করলে মূল্যষ্ফীতি বাড়ে। এমনিতেই এখন ১১ শতাংশের ওপরে মূল্যষ্ফীতি। এর মধ্যে এভাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ সরবরাহ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা করেন অর্থনীতিবিদরা। অবশ্য গত অর্থবছরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরকারকে ঋণ সরবরাহ না করারই প্রতিশ্রতি দিয়েছিল।
বৈদেশিক মুদ্রার চরম সংকটের কারণে গত অর্থবছরও বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে ১২ দশমিক ৭৯ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করে। আগের অর্থবছর বিক্রি করে ১৩ দশমিক ৫৮ বিলিয়ন ডলার। আবার এ সময়ে টাকার বিপরীতে ডলারের দর অনেক বেড়েছে। সব মিলিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা খাত থেকে ভালো আয় হয়েছে। ডলার বিক্রির কারণে অবশ্য দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ব্যাপক কমে এখন আইএমএফের বিপিএম-৬ অনুযায়ী গ্রস রিজার্ভ ২০ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ডলারে নেমেছে।
অবশ্য নতুন গভর্নর আহসান এইচ মনসুর দায়িত্ব নেওয়ার পর রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি বন্ধ করেছে। সরকারের আমদানি চাহিদা আন্তঃব্যাংক থেকে সংগ্রহ করে দিচ্ছে।