পূর্বদেশ ডেস্ক
বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশের প্রতিক্রিয়ায় ভারতের কঠোর সমালোচনা করেছেন অন্তর্র্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। তার অভিযোগ, ভারতে সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষের ওপর ‘অসংখ্য নির্মমতার’ ঘটনা ঘটছে। সেসব নিয়ে দেশটির কোনো সংকোচ বা অনুশোচনা নেই। কিন্তু বাংলাদেশের পরিস্থিতিতে তারা ‘অযাচিত উদ্বেগ’ প্রকাশ করছে।
আসিফ নজরুলের দৃষ্টিতে ভারত ‘দ্বিচারিতা’ করছে এবং সেটি নিন্দনীয় ও আপত্তিকর। খবর বিডিনিউজের
বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের নিরাপত্তা নিয়ে দুই দেশের পাল্টাপাল্টি বিবৃতির মধ্যে গতকাল শুক্রবার আইন উপদেষ্টা তার ফেসবুক পেজে এ নিয়ে একটি পোস্ট দেন। তিনি ভয়েস অব আমেরিকা বাংলার জরিপের উদ্ধৃতি দিয়ে লেখেন, ‘বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ (৬৪ দশমিক ১ শতাংশ) মনে করছেন, অন্তর্র্বর্তী সরকার দেশের সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীকে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের চেয়ে বেশি নিরাপত্তা দিতে পারছে’।
ভয়েস অব আমেরিকার এই জরিপের ফলাফল নিয়ে তুমুল আলোচনা চলছে বাংলাদেশে। এই জরিপটিতে যে নমুনা নেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে ৯২ শতাংশের বেশি মুসলমান এবং তাদের মতামতের ভিত্তিতে হিন্দুদের নিরাপত্তাবোধের বিষয়টি নিয়ে সিদ্ধান্ত কতটা যৌক্তিক, এ নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ, তাদের বাসভবন ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে আক্রমণের অভিযোগের মধ্যে ভারত থেকে একাধিকবার তীব্র প্রতিক্রিয়া এসেছে। দু’টি বিবৃতিরই তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ।
গত তিন দিনে ভারত সরকারের তরফে দু’টি বক্তব্য এসেছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারীকে গ্রেপ্তারের পর গত মঙ্গলবার ‘গভীর উদ্বেগ’ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘উগ্রবাদী গোষ্ঠীর দ্বারা বাংলাদেশে হিন্দু ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের ওপর বিভিন্ন হামলার পরে এই ঘটনা ঘটল। সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ ও লুটের পাশাপাশি প্রতিমা ও মন্দিরে চুরি, ভাঙচুর ও অবমাননার কিছু নথিবদ্ধ ঘটনাও রয়েছে। এসব ঘটনায় জড়িতরা যখন ধরাছোঁয়ার বাইরে, তখন শান্তিপূর্ণ সমাবেশের মাধ্যমে ন্যায়সংগত দাবি উত্থাপনকারী একজন ধর্মীয় নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনাটা দুর্ভাগ্যজনক’।
জবাবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশ সরকার মনে করছে, এই ধরনের ভিত্তিহীন বিবৃতি কেবল তথ্যের ভুল উপস্থাপনই নয়, বরং দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে বন্ধুত্ব ও বোঝাপড়ার যে মেজাজ, সেটারও পরিপন্থি’।
দিল্লির আহ্বানের বিপরীতে ঢাকা বলেছে, ‘দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতেও বাংলাদেশ সরকার প্রতিশ্রæতিবদ্ধ’।
গত বৃহস্পতিবার ভারতের রাজ্যসভার অধিবেশনে এক লিখিত প্রশ্নোত্তরে ভারতের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কৃতি বর্ধন সিং বলেন, ‘বাংলাদেশের সংখ্যালঘুসহ সব জনগণের জীবন ও ব্যক্তি স্বাধীনতার সুরক্ষা নিশ্চিতের প্রাথমিক দায়িত্ব বাংলাদেশ সরকারের’।
আসিফ নজরুল তার পোস্টে চলতি বছর বাঙালি হিন্দুদের প্রধান উৎসব শারদীয়া দুর্গাপূজার আয়োজনের কথাও তার পোস্টে উল্লেখ করেন। তিনি লেখেন, ‘আমরা নিজেরাও দেখেছি, ছাত্রসংগঠন, মাদ্রাসা ও রাজনৈতিক দলসহ বাংলাদেশের মানুষ সাম্প্রতিক দুর্গাপূজার সময় কীভাবে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার জন্য কাজ করেছে’।
চিন্ময় কৃষ্ণ দাশকে গ্রেপ্তারের পর চট্টগ্রামে সংঘাতে এক মুসলিম আইনজীবী হত্যার কথাও উল্লেখ করেন আইন উপদেষ্টা। তিনি লেখেন, ‘সর্বশেষে চট্টগ্রামে আইনজীবী সাইফুল ইসলামকে নির্মম ও উসকানিমূলকভাবে হত্যার পরও বাংলাদেশের মুসলমানরা অসীম সংযম ও ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে’।