বাংলাদেশ কারো তালুক নয় : মির্জা আব্বাস

1

পূর্বদেশ ডেস্ক

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের কর্মকান্ডের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস হুঁশিয়ার করে বলেছেন, বাংলাদেশ কারো তালুক নয়’। গতকাল বুধবার দুপুরে ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে কয়েকটি রাজনৈতিক দলের অবস্থানের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি প্রশ্ন করেন, নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে এত ‘শর্ত’ কেন? খবর বিডিনিউজের।
গত ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর দেশের হাল ধরা অন্তর্বর্তী সরকার দেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণে সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে। সংস্কার শেষ করার পর জাতীয় নির্বাচনের পক্ষে অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীদের সংগঠন, জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি দল।
শিক্ষার্থীদের নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি দ্রুত জুলাই সনদ বাস্তবায়নের দাবি তুলেছে। তারা জাতীয় নির্বাচনের সঙ্গে গণপরিষদ নির্বাচন চায়। গণপরিষদের মাধ্যমে ‘নতুন সংবিধান ও সেকেন্ড রিপাবলিক’ প্রতিষ্ঠা করতে চায়।
সরকারের তরফে বলা হচ্ছে, সংস্কার পুরোপুরি শেষ করে নির্বাচন চাইলে সে ক্ষেত্রে আগামী বছরের প্রথমার্ধে করা সম্ভব হবে। আর অল্প সংস্কার চাইলে এ বছর ডিসেম্বরে ভোট হতে পারে। সরকার জুলাই সনদ স্বাক্ষরের তার ভিত্তিতে নির্বাচন কথাও বলছে। অন্যদিকে বিএনপি দ্রুত প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে জাতীয় নির্বাচন দাবি করে আসছে।
গতকাল দলের অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্বাস বলেন, আমরা বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছি গণতন্ত্রের জন্য, কথা বলার জন্য, ভোটের অধিকারের জন্য।
আজকে যখন ভোটের সময়ের কথা আসছে, এখন বলেন- এটা না করলে ভোট হবে না, ওইটা না করলে ভোট হবে না, কেন রে ভাই কেন?
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ তো দেশটাকে বাপের তালুক ভেবেছিল, যার কারণে যা-খুশি তাই হয়েছে। আপনারাও কি তাই ভাবেন? এই বাংলাদেশ কারো তালুক নয়। এই বাংলাদেশ জনগণের। সুতরাং কথা-বার্তা বলার সময়ে হিসেব করে বলবেন। যাতে আমাদেরকে বে-হিসাবি কথা বলতে না হয়।
মির্জা আব্বাস বলেন, অনেকের ভেতরে কিছু লোভী রাজনীতিবিদ আছেন, কিছু লোভী রাজনৈতিক দল আছে যারা শুধুমাত্র বিরোধিতার কারণে বিরোধিতা করে, কার্যকর কোনো বিরোধিতা নয়। এই দলগুলো পাকিস্তান সৃষ্টির লগ্ন থেকে, ভারত বিভক্তি থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত শুধু বিরোধিতাই করে গেল, দেশপ্রেমের লেশমাত্র তাদের ভেতরে নাই। তারা দেশকে ভালোবাসে না, দেশের মানুষকে ভালোবাসে না। তারা ভালোবাসে যেভাবে হোক ক্ষমতায় থাকতে হবে, যেভাবেই হোক ক্ষমতায় যেতে হবে।
নির্বাচনের মাধ্যমে যে-ই ক্ষমতায় আসুক তাতে বিএনপির ‘আপত্তি নেই’ তুলে ধরে মির্জা আব্বাস বলেন, ভোটে আসেন। ভোটকে ভয় পান কেন? নির্বাচনকে ভয় পান কেন?
নির্বাচনের বিরোধিতাকারী রাজনৈতিক দলগুলোর নাম উল্লেখ না করে তিনি বলেন, যারা লম্বা লম্বা কথা বলেন আজকে, নির্বাচন করতে দেওয়া হবে না, করতে দেওয়া যাবে না, তারা বুকে হাত দিয়ে বলেন, এই জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে আপনাদের কতজন নেতা-কর্মী শাহাদাত বরণ করেছেন? বিএনপির ৪২২ জন নেতা-কর্মী শাহাদাত বরণ করেছেন, শহীদ হয়েছেন এক মাসে। আপনাদের কতজন হয়েছে?
রাজধানীর ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি শাহজাহানপুরে রেলওয়ে অফিসার্স ক্লাব মাঠে দলের ‘রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ৩১ দফা ও জনসম্পৃক্তি’ শীর্ষক প্রশিক্ষণ কর্মশালা আয়োজন করে। সে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছিলেন মির্জা আব্বাস।
এ সময় সংবাদমাধ্যমের সমালোচনা করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য বলেন, আমাদের সাংবাদিক ভাইয়েরা আজকাল অনেক দলের কথা পত্র-পত্রিকায় লেখে না, অনেক দলের খারাপ কথা লেখে না, ভালো কথা হয়ত লেখে দুই-একটা। আর বিএনপির ভালো কথা লেখে না। খারাপ দুই-একটা লেখে দেয়।
দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে মির্জা আব্বাস বলেন, অন্যরা অপকর্ম, চাঁদাবাজি ও দুষ্কর্ম করে বিএনপির ওপর চাপিয়ে দেয়। এ চাঁদাবাজদের প্রতিরোধ করতে হবে, প্রতিহত করতে হবে মুখের কথায় অথবা কাজে। যদি না করেন আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সাহেব বার বার বলেছেন, যদি জনগণের মন থেকে উঠে যান, আওয়ামী লীগের যে পরিণতি হয়েছে তার চেয়ে ভয়াবহ পরিণতি হতে পারে। সাবধান থাকবেন।