টেকনাফ প্রতিনিধি
জীবন বাঁচাতে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন সে দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) আরও ৫ সদস্য। উপজেলার হোয়াইক্যংয়ের খারাংখালি সীমান্ত দিয়ে রোববার রাতে তারা বাংলাদেশে প্রবেশ করে বলে টেকনাফ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মহিউদ্দীন আহমেদ জানান। তিনি বলেন, এনিয়ে গত দুইদিনে মোট ১৪ জন এসেছেন। এর আগে রোববার সকালে হোয়াইক্যং সীমান্তের খারাংখালি দিয়ে তিনজন ও ঝিমংখালি সীমান্ত দিয়ে ৯ জন প্রবেশ করেন।
এছাড়া গত ৩০ মার্চ মিয়ানমার সেনাবাহিনীর তিনজন সদস্য নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন। ১১ মার্চ আশ্রয় নেন আরও ১৭৭ জন বিজিপি ও সেনাসদস্য।
এর আগে কয়েক দফায় বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছিলেন আরও ৩৩০ জন। যাদের গত ১৫ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয় বলে জানান কর্নেল মহিউদ্দীন আহমেদ।
এদিকে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর দুই সদস্যও গতকাল সোমবার দুপুরে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশফাড়ি সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।
কক্সবাজার বিজিবির একজন কর্মকর্তা বলেছেন, অস্ত্র জমা নিয়ে তাদের বিজিবি হেফাজতে রাখা হয়েছে। তবে বিজিবির ওই কর্মকর্তা নিজের নাম প্রকাশ করতে চাননি।
এদিকে, ঈদের দিন থেকে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে জান্তা সরকারি বাহিনীর সঙ্গে সশস্ত্র সংগঠন আরাকান আর্মির তুমুল যুদ্ধ চলছে। ওপারের একের পর এক মর্টার শেল-গোলার বিকট শব্দে বাংলাদেশের কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্তবর্তী বাসিন্দাদের আতঙ্ক কাটছে না।
টেকনাফের হ্নীলার স্থানীয় বাসিন্দা মো. হুমায়ুন বলেন, ঈদের পর আবারও শুরু হওয়া ওপারের সংঘাতের গোলার শব্দ এপারে পাওয়া যাচ্ছে। যুদ্ধে টিকতে না পেরে প্রাণে বাঁচতে দেশটির বিজিপির নয় সদস্য সীমান্ত দিয়ে এপারে ঢুকে পড়েছেন। বিজিবি তদের হেফাজতে নিয়েছে বলে শুনেছি। তবে এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে সীমান্তের লোকজন ধারণা করছেন।
নতুন করে সীমান্ত দিয়ে নয় জন মিয়ানমারের বিজিপি সদস্য ঢুকে পড়েছেন বলে জানিয়েছেন টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আদনান চৌধুরী। তিনি বলেন, বিজিপি সদস্যদের নিরস্ত্র করে বিজিবি হেফাজতে নিয়েছে। সীমান্তে আমরা সবাই মিলে কাজ করছি। আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী টহলের পাশাপাশি সতর্ক অবস্থানে আছে।
প্রসঙ্গত, এর আগে, গত ১১ মার্চ নাইক্ষ্যংছড়ির জামছড়ি সীমান্ত দিয়ে পালিয়ে এসেছিলেন ১৭৯ জন মিয়ানমার বর্ডার পুলিশ (বিজিপি) সদস্য। তারাও নাইক্ষ্যংছড়ি বিজিবি ব্যাটালিয়নে রয়েছেন। তাদের মিয়ানমারের ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। এ ছাড়া গত ২ ফেব্রূয়ারি রাত থেকে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সীমান্তের ওপারে আরাকান আর্মির সঙ্গে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপির সংঘর্ষ শুরু হয়। এর জের ধরে ৪ থেকে ৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসেন ৩৩০ জন। তাদের মধ্যে ৩০২ জন বিজিপি সদস্য, ৪ জন বিজিপি পরিবারের সদস্য, ২ জন সেনা সদস্য, ১৮ জন ইমিগ্রেশন সদস্য এবং ৪ জন বেসামরিক নাগরিক ছিলেন। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি তাদের আনুষ্ঠানিকভাবে ফেরত পাঠানো হয়।