পূর্বদেশ ডেস্ক
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের সফর বাংলাদেশবিরোধী যে কোনো ধরনের ‘মিথ্যা প্রচার ও অস্থিতিশীল করার চেষ্টাকে’ প্রতিহত করবে বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। গতকাল শনিবার দুপুরে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে গুতেরেসের সঙ্গে যৌথ ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, ‘জাতিসংঘের মহাসচিব বাংলাদেশবিরোধী ভুয়া তথ্য প্রচার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তার এই সফর যে কোনো ধরনের মিথ্যা প্রচার ও অস্থিতিশীল করার চেষ্টাকে প্রতিহত করবে।’ খবর বিডিনিউজের
এ সফরকে ‘ঐতিহাসিক মুহূর্ত’ বলে মন্তব্য করে পররাষ্ট্র উপদেষ্টার বলেন, এটি বাংলাদেশ ও জাতিসংঘ উভয়ের জন্যই একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত, কারণ মহাসচিব নিজেই এমন এক নতুন বাংলাদেশের গঠনপর্ব প্রত্যক্ষ করছেন। যে বাংলাদেশ জুলাই-অগাস্ট গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে চূড়ান্ত আত্মত্যাগের মাধ্যমে এক ন্যায়সঙ্গত, গণতান্ত্রিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজের স্বপ্ন দেখেছে। তিনি বলেন, ‘রমজান সংহতি সফর’ একটি ঐতিহ্য, যা মহাসচিব গুতেরেস নিজেই শুরু করেছিলেন। তার ভাষায়Ñ‘ইসলামের প্রকৃত চেহারা স্মরণ করিয়ে দিতে’। সংকটময় সময়ে তিনি সব সময় ন্যায়বিচারভিত্তিক, শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক সমাজের প্রচেষ্টার প্রতি সংহতি প্রকাশ করেছেন, বলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা।
উপদেষ্টার মতে, এই সফর সরকার এবং বাংলাদেশের ভবিষ্যতের জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
জাতিসংঘ মহাসচিব বৃহস্পতিবার বিকালে বাংলাদেশে আসেন। রবিবার-১৬ মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশে অবস্থানের মধ্যে তার সফরের প্রধান কর্মসূচি শুক্র ও শনিবার (১৪ ও ১৫ মার্চ)। শুক্রবার তিনি প্রধান উপদেষ্টা ও পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং কক্সাবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে যান। ‘মহাসচিব রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রতি পূর্ণ সংহতি প্রকাশ করেছেন’ তুলে ধরে তৌহিদ হোসেন বলেন, তিনি মর্যাদা, নিরাপত্তা ও অধিকার নিশ্চিত করে তাদের (রোহিঙ্গাদের) মিয়ানমারে প্রত্যাবর্তনের জন্য কাজ করার অঙ্গীকার করেছেন।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, এই সফরে, মহাসচিব ও তার উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দল,যার মধ্যে আছেন জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল রাবাব ফাতেমা, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। তারা কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেছেন। রোহিঙ্গা শিশু ও যুবকদের সঙ্গে কথা বলেছেন। কীভাবে তারা দক্ষতা ও শিক্ষা অর্জন করছে যা তাদের সম্মানজনক প্রত্যাবর্তনে সহায়তা করবে তা প্রত্যক্ষ করেছেন এবং প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে এক ঐতিহাসিক সংহতি ইফতারে এক লক্ষাধিক রোহিঙ্গার সঙ্গে অংশগ্রহণ করেছেন।
ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের জনগণের আকাঙ্ক্ষা বোঝার জন্য, মহাসচিব যুবসমাজ, সুশীল সমাজ এবং সংস্কার কমিশনের সদস্যদের সঙ্গে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে অংশ নিয়েছেন বলেও তিনি তুলে ধরেন। এই কমিশনই জুলাই চার্টার এর রূপরেখা তৈরি করছে’ তুলে ধরে তিনি বলেন, যা দেশের গণতান্ত্রিক রূপান্তরের পথনির্দেশিকা এবং রাজনৈতিক, বিচারিক, নির্বাচনী, প্রশাসনিক, দুর্নীতি দমন ও পুলিশ সংস্কারের দিকনির্দেশনা দেবে। এই সফরের সময়, মহাসচিব প্রত্যক্ষ করেছেন যে রোহিঙ্গারা কতটা মরিয়া হয়ে তাদের জন্মভূমিতে ফিরে যেতে চায়। নিজেদের পরিচয় বজায় রাখতে চায়। নিজ ভূমিতে অধিকার ভোগ করতে চায় এবং এমন একটি জীবন যাপন করতে চায় যা তারা মর্যাদাপূর্ণ মনে করে। মহাসচিব রোহিঙ্গা ক্যাম্পে উপস্থিত থেকে তাদের আকাঙ্ক্ষার প্রতি সংহতি প্রকাশ করেছেন। তিনি আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়ের প্রতি আহŸান জানিয়েছেন যাতে তারা রোহিঙ্গাদের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখে এবং বিশ্বের সবচেয়ে বৈষম্যের শিকার এই জনগোষ্ঠীকে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রাখে বলেন তৌহিদ হোসেন। তিনি বলেন, তিনি ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠেয় জাতিসংঘের রোহিঙ্গা বিষয়ক সম্মেলনের সফল আয়োজনের প্রতিশ্রæতি দিয়েছেন।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, মহাসচিব আরও প্রত্যক্ষ করেছেন যে অন্তর্র্বতীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের সময় কী ধরনের উত্তরাধিকার পেয়েছে। তিনি একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন এবং দেশের প্রকৃত রূপান্তরের জন্য সংস্কার প্রক্রিয়ার জটিলতাগুলো উপলব্ধি করেছেন।
গুতেরেস জাতিসংঘের পক্ষ থেকে ‘এই সংস্কার প্রক্রিয়ায় পূর্ণ সমর্থনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন’ তুলে ধরে উপদেষ্টা বলেন, মহাসচিব বলেছেন যে, তিনি যা কিছু করতে পারেন, তার সবকিছু দিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রচেষ্টাকে সহায়তা করবেন এবং বাংলাদেশ ও এর জনগণের পাশে থাকবেন।
তৌহিদ হোসেন বলেন, তার এই সফর যে কোনো ধরনের মিথ্যা প্রচার ও অস্থিতিশীল করার চেষ্টাকে প্রতিহত করবে। তার এই সমর্থন আমাদের সংস্কার প্রক্রিয়াকে সফল করতে এবং জনগণের অভিন্ন আকাঙ্খার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আমাদের গণতান্ত্রিক রূপান্তরকে এগিয়ে নিতে সহায়তা করবে।