বাঁশখালী প্রতিনিধি
বাঁশখালীসহ দক্ষিণ চট্টগ্রামের ৩৫ হাজার লবণচাষী এখন চরম সংকটে পড়েছেন। লবণের ন্যায্য মূল্য না পেয়ে হতাশ তারা। লবণচাষীরা জানান, আগে লবণের দাম ছিল প্রতি মন ৪০০-৫০০ টাকা। বর্তমানে সেই লবণ একশ্রেণীর দালাল সিন্ডিকেটের কারণে ১০০ টাকায় নেমে এসেছে। আমরা কানি প্রতি ৫০ হাজার টাকা দরে লবণ মাঠ লাগিয়ত নিয়ে ১০-১৫ হাজার টাকাও তুলতে পারিনি। অথচ লবণ মৌসুম প্রায় শেষের দিকে।
লবণ চাষী কল্যাণ সমিতির সভাপতি আলী আজগর, লবণচাষী জাকের উল্লাহ, মনিরুল ইসলাম, শামসুল আলম জানান, মাঠে বর্তমানে প্রতি মন লবণ ১০০ টাকা হলেও বাজারে গিয়ে ওই লবণ প্রতি মন ৮-৯ শত টাকা হয়ে যাচ্ছে। খোলা বাজারে ৩০-৩৫ টাকার নিচে কোনো লবণ নেই। লবণ সিন্ডিকেটের কারণে প্রান্তিক চাষীরা লবণের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন চাষীরা।
সরল ইউনিয়ন বিএনপি নেতা ও লবণ মাঠের মালিক মোহাম্মদ ছগির জানান, সিন্ডিকেটের কারণে মাঠে লবণের দাম কমে গেছে। অথচ বাজারে ঠিকই লবণ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। তিনি অবিলম্বে সিন্ডিকেট ভেঙে দিয়ে লবণ চাষীদের বাঁচাতে সরকারকে কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়ার আহবান জানান।
জানা গেছে, চট্টগ্রামের একমাত্র লবণ উৎপাদনকারী উপজেলা হচ্ছে বাঁশখালী। উপক‚লীয় এই উপজেলার লবণের কদর ও সুখ্যাতি দেশজুড়ে। এখানকার লবণের স্বাদ এবং লবণাক্ততা অন্যান্য এলাকার লবণের চেয়ে বেশি। শুরুতে বাঁশখালীর লবণ চাষীরা বেশ উৎসাহ নিয়ে লবণ উৎপাদনে নামলেও লবণের দর পতনে চাষীরা এখন চরম সংকটে।
সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা না থাকায় মিল মালিক ও মহাজনরা কমদামে চাষীদের কাছ থেকে লবণ কিনে তা চড়া মূল্যে বাজারজাত করছেন।
চাষীরা জানান, সনাতন পদ্ধতির চেয়ে পলিথিন পদ্ধতিতে লবণ উৎপাদনে খরচ বেশী পড়ায় চাষীদের বিভিন্ন মিল মালিক ও মহাজনদের দ্বারস্থ হতে হয়। মিল মালিক ও মহাজন থেকে টাকা নিয়ে অধিকাংশ লবণ চাষী লবণ চাষ করছেন লবণের অধিক মূল্য পাওয়ার জন্য। কারণ সনাতন পদ্ধতিতে উৎপাদিত কালো লবণ খরচের চেয়ে বিক্রি হয় কম দামে।
লবণচাষীদের অভিযোগ, দেশে চাহিদার অতিরিক্ত লবণ উৎপাদন সম্ভাবনা থাকলেও সিন্ডিকেট এবং কয়েক মিল মালিকদের ভুল তথ্যে সরকার বারবার পার্শ¦বর্তী ভারত ও মিয়ানমার থেকে লবণ আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়ে এই শিল্পের বারোটা বাজাচ্ছে।
বিসিক ও লবণচাষী সূত্র জানায়, বাঁশখালীসহ দক্ষিণ চট্টগ্রামে চলতি মৌসুমে ৪৫ হাজার একর জমিতে লবণ উৎপাদনে নেমেছেন ৩৫ হাজার লবণচাষী। এবছর ও বাঁশখালীতে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক বেশী লবণ উৎপাদিত হয়েছে।
বিসিকের বাঁশখালী উপজেলায় দায়িত্বরত কর্মকর্তা আনসারুল করীম জানান, বাঁশখালী ও কক্সবাজারে দেশের চাহিদার চেয়ে ২ লাখ মেট্রিকটন লবণ বেশী উৎপাদিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্য সচিব মীর আরশাদুল হক জানান, বাঁশখালীর লবণ চাষীরা বর্তমানে দুঃসময় পার করছে। প্রতি কেজি লবণ উৎপাদনে ৪-৫ টাকা খরচ পড়লেও তারা ৩ টাকার বেশি পাচ্ছেনা। সিন্ডিকেটের কারণে লবণ চাষীরা ন্যায্য মূল্য পাচ্ছে না। এবার লবণ চাষীরা ভালভাবে ঈদ করতে পারেনি।
তিনি বলেন, আমরা জাতীয় নাগরিক পার্টির পক্ষ থেকে লবণের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিতের দাবিতে গত ১২ এপ্রিল বাঁশখালী উপজেলা পরিষদের গেইটে মানববন্ধন করেছি। উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে স্মারকলিপি দিয়েছি। লবণ চাষীদের সাথে একাত্ম হয়ে নাগরিক পার্টিই সর্ব প্রথম লবণ চাষীদের পক্ষে দাঁড়িয়েছে। তিনি লবণ চাষী ও লবণ শিল্পের স্বার্থে সরকারকে উদ্যোগ নেয়ার আহবান জানান।
বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ জামশেদুল আলম জানান, লবণ চাষী ও লবণ শিল্প নিয়ে মানুষের অভিযোগ, সুখ-দুঃখ ঊর্ধ্বতন প্রশাসনকে অবহিত করেছি। আমি ব্যক্তিগতভাবেও লবণ চাষীদের নিয়ে কাজ করার উদ্যোগ নিয়েছি। আমার দেশের চাষী ভাল থাকলে আমরা ভাল থাকব।